বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার বিকাশে ড.মহেন্দ্রলাল সরকারের অবদান

বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার বিকাশে ড.মহেন্দ্রলাল সরকারের অবদান – আজকের পর্বে আমরা তোমাদের সাথে আলোচনা করলাম বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার বিকাশে ড.মহেন্দ্রলাল সরকারের অবদান নিয়ে ।

বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার বিকাশে ড.মহেন্দ্রলাল সরকারের অবদান :

বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার বিকাশে ড.মহেন্দ্রলাল সরকারের অবদান

আরো পড়ুন – আধুনিক ইতিহাসের উপাদানরূপে ‘সত্তর বৎসর’-এর গুরুত্ব

বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার বিকাশে ড.মহেন্দ্রলাল সরকারের অবদান :

ভূমিকা :

বাংলা তথা ভারতে পাশ্চাত্য বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে মহেন্দ্রলাল সরকারের অবদান ছিল অনস্বীকার্য । একজন ডাক্তার হিসেবে তিনি বাঙালি জাতিকে অন্ধ বিশ্বাস এর পরিবর্তে যুক্তিবাদের পথে চালিত করতে উদ্যোগী হন।

পূর্ব পরিচয় :

ডা. মহেন্দ্রলাল সরকার ছিলেন ভারতের দ্বিতীয় এম.ডি এবং প্রথম হােমিওপ্যাথি চিকিৎসক । প্রথমে তিনি এলোপ্যাথি চিকিৎসার প্রতি আকৃষ্ট হলেও পরে হােমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতির দিকে ঝুঁকে পড়েন।

তিনি পরে ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানচর্চার জন্য একটি গবেষণাগার  ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স’ (IACS) স্থাপন করে।

তিনি ভারতে বিজ্ঞানচর্চার পথিকৃত হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

এ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা :

১৮৬১ সালে আই এম এস এবং ১৮৬৩ সালে তিনি এমডি ডিগ্রী লাভ করেন। অসাধারণ রোগ নির্ণয় ও নিরাময়ের ক্ষমতা অচিরেই তাকে জনপ্রিয় করে তোলে।

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা :

প্রথম দিকে তিনি অ্যালোপ্যাথি চর্চা করলেও পরবর্তীকালে রাজেন্দ্রলাল দত্ত , ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রেরণায় তিনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় মনোনিবেশ করেন ।

এবং অচিরেই চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে বিশ্বের অন্যতম সেরা হোমিওপ্যাথি বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন।

বিজ্ঞানচর্চা ও প্রতিষ্ঠান : 

পাশ্চাত্য বিজ্ঞানের ভক্ত ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার এদেশে অনুরূপ বিজ্ঞানচর্চা ও তার প্রসার ঘটাতে চেয়েছিলেন।

তিনি লন্ডনের রয়্যাল ইন্সটিটিউট ও ব্রিটিশ অ্যাসােসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্স-এর অনুকরণে একটি গবেষণাগার প্রতিষ্ঠার কথা প্রচার করেন।

বৈজ্ঞানিক সংগঠক হিসেবে তিনি খ্যাতি লাভ করেন ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স’ (IACS) বা ‘ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভা’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।

১৮৭৬ সালে কলকাতার বৌবাজার স্ট্রিটে তৈরি এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল পদার্থ ও রসায়ন বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় মৌলিক গবেষণা করা।

গবেষণাপত্র প্রকাশ :

‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স’ (IACS) বা ‘ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভা’ এই বিজ্ঞান সংস্থার গবেষণাপত্র প্রকাশ এর জন্য তিনি চালু করেন ‘ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ ফিজিকস’ নামে একটি পত্রিকা।

বিজ্ঞান গবেষণা ও আবিষ্কার :

মহেন্দ্রলাল সরকার প্রতিষ্ঠিত ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স’ (IACS)-এ যে সমস্ত গবেষক কাজ করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন জগদীশচন্দ্র বসু , চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রমন , মেঘনাথ সাহা , কেএস কৃষ্ণান প্রমূখ।

এই প্রতিষ্ঠানে গবেষণা করেই বিজ্ঞানী চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রমন ‘রমন ইফেক্ট’ আবিষ্কার করে ১৯৩০ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

বিজ্ঞানচর্চার বিকাশে IACS-এর ভূমিকা :

উনিশ শতকে ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ইন্ডিয়ান অ্যাসােসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে ।যথা –

(ক) এটিই ছিল ভারতের প্রথম বৈজ্ঞানিক সংগঠন এবং এই প্রতিষ্ঠানে স্বাধীনভাবে বিজ্ঞানচর্চা ও গবেষণা করা হত। 

(খ) বিজ্ঞানচর্চার পাশাপাশি বিজ্ঞান বিষয়ক (পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, প্রাণীবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা, শারীরবিদ্যা, ভূমিবিদ্যা, গণিত) আলােচনা সভার মাধ্যমে শ্রোতাদের বিজ্ঞান বিষয়ে ওয়াকিবহাল করা হত।

(গ) বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা পরবর্তীকালে এখানে একটি সক্রিয় গবেষণা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে এক্স রশ্মি, আলােক-বিজ্ঞান, চৌম্বকত্ব, রমন ক্রিয়া প্রভৃতি বিষয়ে নানা মৌলিক গবেষণার কাজ হয়।

মূল্যায়ন :

ঔপনিবেশিক বাংলা তথা ভারতে বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে আই. এ. সি. এস এবং তার প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ মহেন্দ্রলাল সরকারের নাম নিঃসন্দেহে উল্লেখযােগ্য। আজও এই প্রতিষ্ঠান সগৌরবে তার অস্তিত্ব বজায় রেখে চলেছে।

আরো পড়ুন – পত্তি শ্রীরামালু স্মরণীয় কেন

FAQs On – বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে মহেন্দ্রলাল সরকারের ভূমিকা

বিজ্ঞানচর্চার বিকাশে IACS-এর ভূমিকা আলোচনা করো ।

উনিশ শতকে ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ইন্ডিয়ান অ্যাসােসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে ।যথা –

(ক) এটিই ছিল ভারতের প্রথম বৈজ্ঞানিক সংগঠন এবং এই প্রতিষ্ঠানে স্বাধীনভাবে বিজ্ঞানচর্চা ও গবেষণা করা হত। 

(খ) বিজ্ঞানচর্চার পাশাপাশি বিজ্ঞান বিষয়ক (পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, প্রাণীবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা, শারীরবিদ্যা, ভূমিবিদ্যা, গণিত) আলােচনা সভার মাধ্যমে শ্রোতাদের বিজ্ঞান বিষয়ে ওয়াকিবহাল করা হত।

(গ) এখানে এক্স রশ্মি, আলােক-বিজ্ঞান, চৌম্বকত্ব, রমন ক্রিয়া প্রভৃতি বিষয়ে নানা মৌলিক গবেষণার কাজ হয়।

জাতীয় বিজ্ঞান চর্চার জনক কে ?

জাতীয় বিজ্ঞান চর্চার জনক মহেন্দ্রলাল সরকার ।

ড মহেন্দ্রলাল সরকার কে ছিলেন ?

ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সাইন্স -এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি পেশায় চিকিৎসক ছিলেন। তিনি ১৮৭৬ সালে এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করে ভারতে বিজ্ঞান প্রসারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

IACS কে প্রতিষ্ঠা করেন ?

IACS প্রতিষ্ঠা করেন মহেন্দ্রলাল সরকার ।

ভারতের আধুনিক বিজ্ঞান চর্চার জনক কে ?

ভারতের আধুনিক বিজ্ঞান চর্চার জনক মহেন্দ্রলাল সরকার ।

মন্তব্য করুন