বিজ্ঞান ও কুসংস্কার প্রবন্ধ রচনা

বিজ্ঞান ও কুসংস্কার প্রবন্ধ রচনা – মাধ্যমিক,উচ্চমাধ্যমিক তথা স্কুলের সমস্ত ছাত্র -ছাত্রীদের জন্যে অত্যন্ত গুরুত্তপূর্ণ একটি প্রবন্ধ রচনা বিজ্ঞান ও কুসংস্কার।প্রবন্ধটি এখানে সম্পূর্ণ পয়েন্ট ভিত্তিক ভাবে পরিবেশিত হয়েছে। 

বিজ্ঞান ও কুসংস্কার প্রবন্ধ রচনা :

বিজ্ঞান ও কুসংস্কার প্রবন্ধ রচনা

আরো পড়ুন – তৎসম শব্দ কাকে বলে

বিজ্ঞান ও কুসংস্কার রচনা :

ভূমিকা :

সভ্যতার আদিলগ্ন থেকেই মানুষ বিভিন্ন প্রতিকূলতাকে জয় করে দুর্লভের খোঁজ চালিয়েছে।মানুষ এর মাধ্যমেই সভ্যতার ইতিহাসকে গৌরবময় করতে পেরেছে ।

আবিষ্কারের এক নেশা তার মধ্যে  প্রতিনিয়ত বয়ে চলেছে ,অজানাকে জানতে তাই প্রতিমুহূর্তে সে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে।

আর এই সংগ্রামী প্রাণে সমৃদ্ধির সঞ্চার ঘটেছে বিজ্ঞানের জয়যাত্রার মাধ্যমে ।

কুসংস্কার কি :

কুসংস্কার হলো মানুষের যুক্তি বিচারহীন অন্ধবিশ্বাস যা প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের অন্তরে কুক্ষিগত হয়ে আছে।এমন অন্ধবিশ্বাস মানুষের অজ্ঞতার কারণে কুসংস্কারে পরিণত হয়েছে ।

বিজ্ঞানের যুগেও মানুষ অসুখ সারাতে ওষুধ না খেয়ে ঝাঁড়ফুক করে ,ভুত-প্রেত ,ডাইনি ইত্যাদির ভয়ে মরে ।

কুসংস্কারের সূচনা :

গুহাবাসী মানুষের কাছে প্রাকৃতিক শক্তি ছিল প্রধান অন্তরায়।তারা তখন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণকে অনুধাবন করতে না পেরে ভূতপ্রেত বা অপদেবতার চোখরাঙানিকে দায়ী করত ।

এ কারণে তাদেরকে তুষ্ট করার জন্য আদিম মানুষেরা শুরু করেছিল নানা অযৌক্তিক কর্মকাণ্ড আর তখনই সূচনা হয় কুসংস্কার নামক লোকাচারটি।বিজ্ঞানের শুভ সূচনা হয়েছিল মানুষের আগুন জ্বালানোর মধ্যে দিয়ে।

মানুষ তখন থেকেই প্রয়োজনের তাগিদেই নতুন নতুন আবিষ্কার করতে শুরু করেছিল।ধীরে ধীরে গবেষনা,পরীক্ষা -নিরীক্ষার মাধ্যমে বিজ্ঞানের অগ্রগতি হতে থাকে ।

এরপর থেকেই মানুষ নিজেদের বাঁচানোর উপায় উদ্ভাবন করতে থাকে এবং শুরু হয় বিজ্ঞানের জয়যাত্রা।

বিভিন্ন কুসংস্কার :

কুসংস্কার হল এমন একটা অন্ধবিশ্বাস যার কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ নেই ।আমাদের দেশে যাত্রাকালে হাঁচি ,পিছন থেকে ডাকা,শুন্য কলসি দেখা প্রভৃতিকে অশুভ বলে গণ্য করা হয়।

বিজ্ঞানের যুগে দাঁড়িয়েও সর্পাঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিএবং হিস্টিরিয়া রোগীর আজও চিকিৎসা করা হয় ওঝার ঝাড়ফুঁক দিয়ে,যা রোগীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় ।

ডাইন অপবাদে চিহ্নিত করে আদিবাসী রমণীকে খুন করা হয় কুসংস্কারের সুযোগ নিয়ে ।

শহরের শিক্ষিত মানুষেরাও বিশ্বাস করে গ্রহরত্ন ,মাদুলি ,কবচের গুণাগুনে ।পাশ্চাত্য দেশগুলোতেও কুসংস্কার কম নয় – অশুভ তেরো সংখ্যা ,বিভিন্ন অশুভ দিন ,অশুভ ও অমঙ্গলকারী বলে চিহ্নিত পশুপাখি তাদের জীবনচর্চাতেও প্রবল প্রভাব বিস্তার করে আছে ।

বিজ্ঞানের জয়যাত্রা :

আদিম মানুষ যেদিন আগুন জ্বালাতে শিখলো সেদিনই পরোক্ষে তাদের অজান্তেই বিজ্ঞানের জন্ম হলো ।মানুষ নানারকম ধাতুর ব্যবহার শিখলো ।

মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে বিভিন্ন রকম জিনিস তৈরি করতে লাগলো ,শুরু হলো গবেষণাগারে পরীক্ষা -নিরীক্ষা ,বিজ্ঞানের দৌলতে আবিষ্কার হল বিভিন্ন রকমের ঔষধ ।

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের অবদান একে একে স্থান করে নিল ।

বিজ্ঞান শিক্ষার লক্ষ্য : 

যুগযুগান্তর ধরে জনমানসে স্থান করে নেওয়া কুসংস্কার সহজে বিলুপ্ত হওয়ার নয় ।তাই বিখ্যাত শল্যচিকিৎসকও অপারেশান থিয়েটারে ঢোকার আগে ঠাকুর দেবতাকে স্মরণ করে নেন ।

অনেক বিজ্ঞানিই ধারণ করেন গ্রহরত্ন।বিজ্ঞানের ছাত্র  জানে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব কিন্তু অনেক সময়েই বিজ্ঞান মনস্ক হতে পারে না ।ব্যক্তিগত জীবনে যুক্তিবাহিত অন্য্ কোনো বিস্বাসে আশ্রয় খোঁজে ।

ফলে প্রাতিষ্ঠানিক কেতাবি শিক্ষা শুধু নয়, তার বাইরেও শিক্ষার্থীকে জীবনের সবক্ষেত্রে কার্যকারণ সূত্র খুঁজতে শেখানোই শিক্ষার লক্ষ্য হওয়া উচিত ।

কুসংস্কার দূরীকরণে ছাত্রসমাজ :

ছাত্ররা জাতির মেরুদণ্ড ,যাদের মধ্যে নিহিত থাকে অফুরন্ত প্রাণশক্তি ।জাতির উন্নতিকে পিছনে ফেলে দেয় কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস ।

ছাত্ররাই পারে তাদের শিক্ষার আলো দিয়ে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে চেতনার আলো  ফিরিয়ে আনতে এবং যে সমস্ত ভ্রান্ত ধারণা মানুষের মনের মধ্যে যুগ যুগ ধরে বাসা বেঁধে আছে সেগুলিকে দূর করে মানুষকে যুক্তিনিষ্ঠ ও বিজ্ঞানমুখী করে তুলতে ।

বিজ্ঞানীদের আত্মত্যাগ :

যুগে যুগে শত শত বিজ্ঞানীরা শ্রম ,মেধা ও সাধনার ফলেই বিজ্ঞান আজ এই পর্যায়ে আস্তে পেরেছে ।বিজ্ঞানের আজ যে  অগ্রগতি আমরা দেখতে পাই তার পিছনে রয়েছে শত শত বিজ্ঞানীদের আত্মত্যাগ ।

উপসংহার :

একুশ শতকের সভ্যতার কাছে চাঁদে পৌঁছে যাওয়া যতটা গুরুত্বের বিষয় তার থেকেও পৃথিবীকে রক্ষা করা অনেক বেশি প্রয়োজনের ।

অনেকগুলো শীর্ষাসম্মেলন পার করেও পৃথিবীর রাষ্ট্রনায়করা কোনো আশার বাণী শোনাতে পারেননি ।শংকার এই দিনযাপনই আজকের সভ্যতার নিয়তি ।

আরো পড়ুন – বাংলার উৎসব প্রবন্ধ রচনা

মন্তব্য করুন