আধুনিক ইতিহাসের উপাদানরূপে ‘সত্তর বৎসর’-এর গুরুত্ব

আধুনিক ইতিহাসের উপাদানরূপে ‘সত্তর বৎসর’-এর গুরুত্ব – আজকের পর্বে আমরা তোমাদের সাথে আলোচনা করলাম আধুনিক ইতিহাসের উপাদানরূপে ‘সত্তর বৎসর’-এর গুরুত্ব ।

আধুনিক ইতিহাসের উপাদানরূপে ‘সত্তর বৎসর’-এর গুরুত্ব :

আধুনিক ইতিহাসের উপাদানরূপে ‘সত্তর বৎসর’-এর গুরুত্ব

আরো পড়ুন – বাংলায় নমঃশূদ্র আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ

ভূমিকা :

আধুনিক ভারতের ইতিহাসের অন্যতম উপাদান হল বিভিন্ন ব্যক্তির আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা। রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও সমাজসংস্কারক বিপিনচন্দ্র পালের লেখা আত্মজীবনী ‘সত্তর বৎসর’ আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়।নিন্মে সত্তর বৎসরের গুরুত্ব আলোচনা করা হল –

(ক) প্রথম জীবনের তথ্য :

‘সত্তর বৎসর’ গ্রন্থ থেকে বিপিনচন্দ্রের প্রথম জীবনের বিভিন্ন তথ্য যেমন শ্রীহট্টের পৈল গ্রামে তার জন্ম, তার বংশ ও গ্রামের পরিচয়, বাখরগঞ্জ, ফেঁচুগঞ্জ, হবিগঞ্জ প্রভৃতি স্থানের বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়।

(খ) শিক্ষাব্যবস্থা :

 সত্তর বৎসর থেকে তৎকালীন শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। সেই সময় প্রত্যেক গ্রামে টোল ও ফারসি শেখার জন্য মাদ্রাসা ও মক্তব গড়ে উঠেছিল।

সেই সময় বিভিন্ন নবাবি কাজের জন্য ফারসি জানা লোকের প্রয়োজন পড়ত, তাই বহু হিন্দু ছাত্র মাদ্রাসায় ফারসি শিখত।

বিপিনচন্দ্র পালও ফারসি শেখার জন্য একজন মৌলবির কাছে ভরতি হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি শ্রীহট্টের একটি ইংরজি বিদ্যালয়ে ভরতি হন। উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভরতি হয়েছিলেন।

(গ) সমকালীন সমাজে নারীশিক্ষা :

বিপিনচন্দ্র পালের ‘সত্তর বৎসর’ গ্রন্থে সেকালের মেয়েদের লেখাপড়ার রীতি ছিল না বলে জানা যায়। সমাজে কুসংস্কার ছিল যে, মেয়েরা লেখাপড়া শিখলে বিধবা হয়ে যাবে।

তবে উত্তরবঙ্গের দিকে এবং গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মেয়েরা লেখাপড়া শিখত।

(ঘ) রাজনৈতিক জীবনের সূচনা :

‘সত্তর বৎসর’ গ্রন্থে বিপিনচন্দ্র পালের রাজনৈতিক জীবনের প্রথম পর্বের বিভিন্ন তথ্যেরও উল্লেখ আছে।

কলকাতায় এসে জাতীয় নেতা আনন্দমােহন বসু ও সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, ব্রাহ্বসমাজে যােগদান, শিবনাথ শাস্ত্রীর সঙ্গে যােগাযােগ, স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়া প্রভৃতি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিপিনচন্দ্র তার এই গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।

(ঙ) সমাজব্যবস্থা :

বিপিনচন্দ্র পালের সময়ে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ লক্ষ্য করা যেত। গ্রাম্য সমাজে হিন্দু-মুসলমান পাশাপাশি বাস করত।

তাদের মধ্যে প্রীতিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় ছিল। এই সময় ক্রীতদাস প্রথা চালু ছিল। ‘সত্তর বৎসর’ থেকে সমকালীন সমাজের রীতিনীতি, খাদ্যাভ্যাস, পোশাক-পরিচ্ছদ, নাচ-গান প্রভৃতি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা যায়।

(চ) পরিণত জীবনের তথ্য :

বিপিনচন্দ্র পাল পরিণত বয়সে যখন কংগ্রেসের একজন নেতা হয়ে ওঠেন, সেসময়ের বিভিন্ন তথ্যাদি তাঁর আত্মজীবনীতে উঠে এসেছে।

পুরােনাে কলকাতার কথা, ব্রাহ্মসমাজের ইতিহাস, ধর্মভীরু বাঙালির জাতীয়তাবাদী মানসিকতা, স্বদেশি, বয়কট ও পূর্ণ স্বরাজের দাবিতে আন্দোলন প্রভৃতির নানা দিকের আলােচনা তাঁর গ্রন্থে স্থান পেয়েছে।

(ছ) ব্রাহ্ম সমাজের রাজনৈতিক আদর্শ :

তিনি দেখিয়েছেন ইংরেজি শিক্ষিত বাঙালিরা নতুন সামাজিক আদর্শের সন্ধান পেয়েছিল। তৎকালীন ব্রাহ্মসমাজও এই শিক্ষিত বাঙালিদের মধ্যে স্বাধীনতার আদর্শের সঞ্চার করেছিল।

(জ) ভারত সভা ও হিন্দুমেলা :

সত্তর বৎসর থেকে আনন্দমোহন বসু ও সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ভারত সভা গঠনের কথা জানা যায়।

এছাড়া নবগোপাল মিত্র ও তার প্রতিষ্ঠিত হিন্দুমেলা নামক জাতীয়তাবাদী প্রতিষ্ঠানের কথা জানা যায়।

(ঝ) রঙ্গালয় ও দেশপ্রেম :

উনিশ শতকের শেষার্ধে বেঙ্গল থিয়েটার ও ন্যাশনাল থিয়েটার প্রতিষ্ঠা এবং ‘নীলদর্পণ’ নাটকের ন্যায় স্বদেশি নাটকের অভিনয় বাংলাদেশে স্বদেশপ্রেমের যুগের সূচনা করে।

এই রঙ্গমঞ্চের মাধ্যমে অনেকগুলি জাতীয় সংগীত বা স্বদেশ প্রেমাত্মক গান দেশময় ছড়িয়ে পড়েছিল।

মূল্যায়ন :

বিপিনচন্দ্র পাল ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন শ্রেষ্ঠ বাগ্মী ও রাজনীতিবিদ । বিপিনচন্দ্র পালের ‘সত্তর বৎসর’ গ্রন্থে যদি সত্তর বছরের ইতিহাস লেখা হত তাহলে আরও ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যেত ।

তবে যে পরিমাণ তথ্য পাওয়া গেছে তা ভারতীয় ইতিহাসের উপাদান হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

আরো পড়ুন – পত্তি শ্রীরামালু স্মরণীয় কেন

ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন – www.youtube.com/@DRMonojog

পিডিএফ পেতে ভিজিট করুন আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল – DR Monojog63

মন্তব্য করুন