রুশ বিপ্লবের কারণ আলোচনা করো – জুলিয়ান বর্ষপঞ্জি অনুসারে ১৯১৭ সালের ২৫ অক্টোবর এবং গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জি অনুসারে ১৯১৭ সালের ৭ নভেম্বর রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে সংঘটিত বিপ্লবকে বলশেভিক বিপ্লব বলা হয়।
এই পৃষ্ঠায়
- 1 রুশ বিপ্লবের কারণ আলোচনা করো :
- 1.1 ভূমিকা :
- 1.2 রুশ বিপ্লবের কারণ :
- 1.2.1 (ক) জারের স্বৈরাচার :
- 1.2.2 (খ) কৃষকদের অসন্তোষ :
- 1.2.3 (গ) রুশীকরণ নীতি :
- 1.2.4 (ঘ) শ্রমিকদের অসন্তোষ :
- 1.2.5 (ঙ) বলশেভিক দলের প্রভাব :
- 1.2.6 (চ) দার্শনিকদের প্রভাব :
- 1.2.7 (ছ) সেনাবাহিনীর বিক্ষোভ :
- 1.2.8 (জ) শিক্ষিত ও বুদ্ধিজীবী শ্রেণির ভূমিকা :
- 1.2.9 (ঝ) সংখ্যালঘু জাতিগুলির অসন্তোষ :
- 1.2.10 (ঞ) ১৯০৫ খ্রি: বিপ্লব :
- 1.2.11 (ট) রুশ বিপ্লবের -প্রত্যক্ষ কারণ :
- 1.3 মূল্যায়ন :
- 2 FAQs On রুশ বিপ্লব কি ? রুশ বিপ্লবের কারণ আলোচনা করো ।
রুশ বিপ্লবের কারণ আলোচনা করো :
আরো পড়ুন – জার্মানিতে হিটলারের উত্থানের কারণ
ভূমিকা :
জুলিয়ান বর্ষপঞ্জি অনুসারে ১৯১৭ সালের ২৫ অক্টোবর এবং গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জি অনুসারে ১৯১৭ সালের ৭ নভেম্বর রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে সংঘটিত বিপ্লবকে বলশেভিক বিপ্লব বলা হয়। এই বিপ্লবের ফলে রাশিয়ার শোষিত, নিপীড়িত, বঞ্চিত মানুষেরা তাদের ন্যায্য অধিকার পায় এবং রাশিয়ায় একটি শোষণ মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়। নিন্মে রুশ বিপ্লবের কারণ গুলি আলোচনা করা হল –
রুশ বিপ্লবের কারণ :
(ক) জারের স্বৈরাচার :
রাশিয়ার সম্রাটকে জার্ বলা হতো ।জার শাসনাধীন রাশিয়া ইউরােপের অন্যদেশগুলির তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে ছিল। রাশিয়ার জাররা ছিল দৈবতত্বে বিশ্বাসী ।
জাররা রাশিয়ায় স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছিল। স্বৈরাচারী জার শাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যে রুশরা এই বিপ্লবে যােগ দেয়।
(খ) কৃষকদের অসন্তোষ :
রাশিয়ার কৃষকদের অসন্তোষ ছিল রুশ বিপ্লবের অন্যতম প্রধান কারণ ।রাশিয়ার জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার ভূমিদাস প্রথার উচ্ছেদ প্রাথমিকভাবে ঘটালেও রুশ কৃষকদের অবস্থার সেরকম উন্নতি ঘটেনি।
দারিদ্র্য ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে কৃষকদের অবস্থার অবনতি হয় । কৃষকরা তাদের এই চরম দুরবস্থা থেকে রেহাই পাওয়ার আশায় বিপ্লবের পথ বেছে নেয়।
(গ) রুশীকরণ নীতি :
রাশিয়ায় পােল, ফিন প্রভৃতি বিভিন্ন জাতিগােষ্ঠীর মানুষ বসবাস করত। প্রত্যেক জাতিরই নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ছিল।
১৯০৫ খ্রি: জার সরকার ওই সমস্ত জাতির ওপর জোর করে রুশ ভাষা, সংস্কৃতি ও কৃষ্টি চাপিয়ে দেয়। এর বিরুদ্ধে অ-রুশ জাতিগােষ্ঠীগুলি সােচ্চার হয় এবং বিপ্লবকে সমর্থন জানায়।
(ঘ) শ্রমিকদের অসন্তোষ :
রাশিয়ায় শিল্পায়নের ফলে শ্রমিকশ্রেণীর উদ্ভব হয় এবং নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে ওঠে । রাশিয়ার অভিজাতদের পাশাপাশি বিদেশিরাও এই শিল্পকারখানাগুলির মালিক ছিল।
অধিক মুনাফার লােভে এরা বিভিন্নভাবে শ্রমিকদের শােষণ করত। কম মজুরিতে দীর্ঘ সময় কাজ ,অনাহার ,অর্থাভাব ,বস্তিজীবনের দুরাবস্থা শ্রমিকদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল ।
ফলে রাশিয়ার শ্রমিকশ্রেণির মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয় এবং তারা বিপ্লবের পথ বেছে নেয়।
(ঙ) বলশেভিক দলের প্রভাব :
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাবে রাশিয়ার জনগনের উপর করভার বৃদ্ধি পায় । ফলে রাশিয়ার কৃষক ও শ্রমিকদের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে ওঠে ।
সেইসময় বলশেভিক দল কৃষক ও শ্রমিকদের উন্নতির জন্যে আন্দোলন শুরু করলে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে ।
লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিক দল জারতন্ত্রের অবসানের জন্য বিপ্লবের ডাক দেয়। বলশেভিক দল তাদের দলীয় পত্রিকা প্রাভদা’র মাধ্যমে বিপ্লবের প্রচার চালায়।
(চ) দার্শনিকদের প্রভাব :
রুশ বিপ্লবে দার্শনিকদের প্রভাব ছিল অপরিসীম । টলস্টয়, চেখভ প্রমুখ দার্শনিক ও সাহিত্যিকরা তাঁদের রচনায় জারতন্ত্রের স্বৈরাচার ও রাশিয়ার অবস্থা তুলে ধরেন।
এইসব রচনা দ্বারা রাশিয়ার জনগণ প্রভাবিত হয় এবং বঞ্চনা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যে বিপ্লবের পথ বেছে নেয়
(ছ) সেনাবাহিনীর বিক্ষোভ :
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়া যোগদান করলে কৃষক ও শ্রমিকদের সামরিক বাহিনীতে যোগদান করতে বাধ্য করে । উপযুক্ত সামরিক শিক্ষা এবং উন্নত অস্ত্রসস্ত্র ছাড়াই রাশিয়া সৈনিকদের যুদ্ধক্ষেত্রে প্রেরণ করে ।
ফলে যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিকের মৃত্যু ছিল অনিবার্য্য । যুদ্ধক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর মৃত্যু ঘিরে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর মধ্যে প্রবল অসন্তোষ দেখা দেয় ,যা রুশ বিপ্লবের পথকে প্রশস্ত করেছিল ।
(জ) শিক্ষিত ও বুদ্ধিজীবী শ্রেণির ভূমিকা :
ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপে জাতীয়তাবাদী, গণতান্ত্রিক ও উদারনৈতিক যে চেতনার জন্ম হয়েছিল, রাশিয়ার শিক্ষিত ও বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় তার পক্ষপাতী ছিল।
কিন্তু পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলির মতো রাষ্ট্রের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার বিশেষ সুযোগ তাদের ছিল না।
অন্য দিকে রাশিয়ায় শিল্পায়ন পশ্চিম ইউরোপের তুলনায় দেরিতে হওয়ায় তাদের চাকরি বা পেশাদারি দক্ষতার পরিচয় দিয়ে জীবিকা অর্জনের সুযোগও তেমন ছিল না।এর ফলে প্রচলিত ব্যবস্থার প্রতি তাদের অসন্তোষ ক্রমশ বেড়ে উঠছিল এবং এই শিক্ষিত ও বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের হাত ধরেই রাশিয়ার সাধারণ মানুষ বিপ্লবের পথে হেঁটেছিল ।
(ঝ) সংখ্যালঘু জাতিগুলির অসন্তোষ :
রাশিয়ার জারতন্ত্র সংখ্যালঘু জাতিগুলির অধিকার খর্ব করলে এবং তাদের ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করলে সংখ্যালঘু জাতিগুলির মধ্যে অসন্তোষ তীব্র আকার ধারণ করলে রাশিয়ায় বিপ্লবের পরিস্থিতি তৈরি হয় ।
(ঞ) ১৯০৫ খ্রি: বিপ্লব :
১৯০৫ খ্রি: রাশিয়ায় ঘটে যাওয়া বিপ্লব ব্যর্থ হলেও তা রাশিয়ার জনগনের মধ্যে সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করে , যা বিপ্লবের পটভূমি প্রস্তুত করেছিল ।
(ট) রুশ বিপ্লবের -প্রত্যক্ষ কারণ :
১৯১৭ সালের ৮ই মার্চ রাশিয়ার বলশেভিকদের নেতৃত্বে প্রায় ৯০ হাজার শ্রমিক পেট্রোগ্রাড শহরে খাদ্যের দাবিতে ধর্মঘট শুরু করে।
১১ই মার্চ জারের সেনাদলের সঙ্গে ধর্মঘটিদের সংঘর্ষ শুরু হয়। ১২ ই মার্চ সংঘর্ষে জিতে বিপ্লবীরা রাজধানী পেট্রোগ্রাড এর দখল নেয়।
১৯১৭ সালের ১৩ই মার্চ অবসান ঘটে ৩০০ বছরের পুরাতন রােমানভ বংশীয় জারতন্ত্রের এবং গঠিত হয় অস্থায়ী রুশ প্রজাতান্ত্রিক সরকার।
মূল্যায়ন :
সমগ্র বিশ্বের ইতিহাসে রুশ বিপ্লবের প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী ।লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিকরা ১৯১৭ সালের নভেম্বর মাসে রাশিয়ার শাসনক্ষমতা দখল করে এবং রাশিয়া বিশ্বে প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ।
আরো পড়ুন – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ ও ফলাফল
ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন – www.youtube.com/@DRMonojog
পিডিএফ পেতে ভিজিট করুন আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল – DR Monojog63
FAQs On রুশ বিপ্লব কি ? রুশ বিপ্লবের কারণ আলোচনা করো ।
রুশ বিপ্লবের অপর নাম বলশেভিক বিপ্লব |
বলশেভিক বিপ্লব 1917 সালে সংঘটিত হয় ।
বলশেভিক বিপ্লব রাশিয়ায় সংঘটিত হয় ।