চম্পারণ সত্যাগ্রহ সম্পর্কে আলোচনা করো – ১৯১৭ খ্রি: বিহারের চম্পারণে নীলকর সাহেবদের অকথ্য অত্যাচারের বিরুদ্ধে গান্ধিজি যে সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করেন তা ইতিহাসে চম্পারন সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত ।
এই পৃষ্ঠায়
চম্পারণ সত্যাগ্রহ সম্পর্কে আলোচনা করো :
আরো পড়ুন – মুন্ডা বিদ্রোহের কারণ আলোচনা করো
চম্পারণ সত্যাগ্রহ :
ভূমিকা :
১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে গান্ধিজি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভারতে ফিরে আসেন। সর্বভারতীয় রাজনীতিতে আসার আগে তিনি ১৯১৭-১৯১৮ খ্রিঃ তিনটি আঞ্চলিক আন্দোলনের মাধ্যমে ভারতব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেন। এর মধ্যে ‘চম্পারন সত্যাগ্রহ’ ছিল অন্যতম। ১৯১৭ খ্রি: বিহারের চম্পারণে নীলকর সাহেবদের অকথ্য অত্যাচারের বিরুদ্ধে গান্ধিজি যে সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করেন তা ইতিহাসে চম্পারন সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত ।
চম্পারণ সত্যাগ্রহের পটভূমি :
বিহারের চম্পারণে নীলকর সাহেবরা নীলচাষিদের ওপর অকথ্য অত্যাচার করত। এখানকার নীলকর সাহেবরা তিন কাঠিয়া ব্যবস্থার ( কৃষকের মােট জমির ৩/২০ অংশে অর্থাৎ প্রতি বিঘা বা ২০ কাঠা জমির ৩ কাঠায় নীলচাষ ) প্রয়ােগ ঘটিয়ে কৃষকদের শােষণ করতেন ।
গান্ধিজির যােগদান :
চম্পারণের কৃষকদের আবেদনে গান্ধিজি রাজেন্দ্র প্রসাদ , আচার্য কৃপালনী , মহাদেব দেশাই প্রমুখ তরুণ জাতীয়তাবাদী নেতাকে সঙ্গে নিয়ে চম্পারণে পৌছান (১৯১৭ খ্রি: ) ।
সেখানে পৌছে তিনি কৃষকদের দুর্দশা ও নীলকরদের অত্যাচার সম্পর্কে অনুসন্ধান শুরু করেন ।তিনি সেখানে নীলচাষিদের স্বার্থরক্ষার জন্য ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে সত্যাগ্রহ শুরু করেছিলেন ।
তখন গান্ধিজিকে চম্পারণ ছেড়ে চলে যাওয়ার আদেশ দেওয়া হলে গান্ধিজি তা অমান্য করেন। এর ফলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় ।
চম্পারণ সত্যাগ্রহের ফলাফল :
(ক) কৃষক শ্রেণির সঙ্গে সম্পর্ক :
চম্পারণ সত্যাগ্রহের মধ্যে দিয়ে গান্ধিজি ভারতের নিরক্ষর কৃষক শ্রেণির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তােলেন ।
(খ) জুলুম বন্ধ :
সরকার নীল চাষীদের ওপর সর্বপ্রকার জুলুম বন্ধ করতে বাধ্য হন।
(গ) অনুসন্ধান কমিটি গঠন :
চম্পারণের কৃষকদের অসন্তোষের কারণ অনুসন্ধানের জন্য সরকার চম্পারণে অনুসন্ধান কমিটি গঠন করতে বাধ্য হন। গান্ধীজি এই কমিটির সদস্য হন ।
(ঘ) রাজনৈতিক নেতা হিসেবে গান্ধীজির আত্মপ্রকাশ :
এই আন্দোলন ছিল সর্বভারতীয় রাজনৈতিক নেতা হিসাবে গান্ধিজির উত্থানের প্রথম পদক্ষেপ । চম্পারণ সত্যাগ্রহের মাধ্যমে ভারতীয় কৃষক সমাজের সঙ্গে গান্ধিজির প্রথম যােগাযােগ গড়ে ওঠে এবং তিনি কৃষকদের অবর্ণনীয় দুঃখ-দারিদ্র সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা লাভ করেন ।
(ঙ) তিন কাঠিয়া প্রথার বিলোপ :
এই আন্দোলনের ফলে ব্রিটিশ সরকার তিন কাঠিয়া প্রথা তুলে দিতে বাধ্য হন ।
(চ) খাজনা হ্রাস :
বর্ধিত খাজনার ২০ – ২৫ % হ্রাস করা হয়।
মূল্যায়ন :
গান্ধীজির নেতৃত্বে চম্পারন কৃষক সত্যাগ্রহ এক উল্লেখযােগ্য অধ্যায় । ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে, চম্পারণের আন্দোলনের ফলে কৃষকদের মনােবল বৃদ্ধি পায় এবং গান্ধিজির খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।
আরো পড়ুন – মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা টীকা লেখ
FAQs On – চম্পারণ সত্যাগ্রহ
১৯১৭ খ্রি: বিহারের চম্পারণে নীলকর সাহেবদের অকথ্য অত্যাচারের বিরুদ্ধে গান্ধিজি যে সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করেন তা ইতিহাসে চম্পারন সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত ।
চম্পারণ সত্যাগ্রহ ১৯১৭ সালে হয়েছিল ।
মহাত্মা গান্ধী দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম সত্যগ্রহ চালিয়ে ছিলেন ।
গান্ধীজীর নেতৃত্বে ভারতে প্রথম বিহারের চম্পারণে সত্যাগ্রহ আন্দোলন হয় ।
চম্পারণ সত্যাগ্রহের নেতৃত্ব দেন গান্ধীজি ।