চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত সম্পর্কে আলোচনা করো। 

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত সম্পর্কে আলোচনা করো – আজকের পর্বে আমরা তোমাদের সাথে আলোচনা করলাম ইতিহাসের খুবই গুরুত্বপূর্ণ টপিক চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নিয়ে ।

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত সম্পর্কে আলোচনা করো :

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত সম্পর্কে আলোচনা করো।

আরো পড়ুন – রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত কি আলোচনা কর

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কি :

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি 1765খ্রি: মুঘল সম্রাট শাহ আলমের কাছ থেকে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করে।

কোম্পানির উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় সম্পদের বহির্গমন । তাই কোম্পানি ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা থেকে আয় সুনিশ্চিত করতে একশালা,পাঁচশালা এবং দশশালা বন্দোবস্ত চালু করে।

কিন্তু কোম্পানি ব্যর্থ হয়। তখন গভর্নর জেনারেল লর্ড কর্নওয়ালিস ভূমি রাজস্ব বিষয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে এক নতুন ব্যবস্থার প্রস্তাব করেন।

এটিই ইতিহাসে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নামে পরিচিত।

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের শর্তাবলী :

(ক) চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত অনুসারে জমিদাররা স্থায়ীভাবে জমির মালিকানা ভোগ করার অধিকার পায় ।

(খ) জমিদাররা ও ইজারাদাররা আদায় করা রাজস্বের ১০ ভাগ সরকারি কোশাগারে জমা দেবেনএবং এক ভাগ নিজেরা ভােগ করবেন। 

(গ)  নির্দিষ্ট দিনের সূর্য অস্ত যাবার আগে জমিদারকে খাজনা প্রদান করতে হতো ।

তা না হলে তার জমিদারি বাজেয়াপ্ত করা হতো। একে বলা হত সূর্যাস্ত আইন।

(ঘ) অদূর ভবিষ্যতে কোনাে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটলেও রাজস্বের ছাড় দেওয়া হবে না।

(ঙ) জমিদাররা ভূমিরাজস্ব সংক্রান্ত কোনাে বিবাদের বিচার করার অধিকার পাবে না। 

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলাফল : 

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলাফল সম্পর্কে ঐতিহাসিকরা পরস্পর বিরোধী মত প্রকাশ করলেও আর ফল ছিল সুদূরপ্রসারী ।

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুফল :

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুফলগুলি হলো নিম্নরূপ –

(ক) বাৎসরিক আয় ও বাজেট নির্ধারণ :

স্থায়ী রাজস্বের পরিমাণ নির্দিষ্ট হওয়াই সরকারের বাৎসরিক আয় ও বাজেট সঠিক করা সম্ভব।

(খ) জমির স্বত্ব প্রদান :

জমির ওপর জমিদারদের স্বত্ব প্রদান করায় জমিদাররা আরও বেশি করে কৃষিব্যবস্থায় উন্নতি সাধনে সচেষ্ট হয় ।

(গ) গ্রামীণ উন্নতি : 

জমিদাররা গ্রামের উন্নতির জন্যে অনেক বিদ্যালয়, চিকিৎসালয়ও রাস্তাঘাট,নির্মাণ করে।

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কুফল :

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কুফলগুলি হলো নিম্নরূপ –

(ক) কৃষকবিদ্রোহ :

মূলত মধ্যস্বত্বভোগীরা অধিক খাজনা আদায়ের লক্ষ্যে কৃষকদের নানাভাবে শোষণ করতে থাকে । এর ফলে কৃষক সমাজে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দানা বাঁধতে শুরু করে ।

(খ) গ্রামীণ পরিকাঠামাের ভাঙন :

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে গ্রামীণ অর্থনীতি সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়ে। মধ্যস্বত্বভােগী ও মহাজনরা মিলে গ্রামীণ অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেয়।

(গ) ব্রিটিশ অনুগত সম্প্রদায়ের উদ্ভব :

সূর্যাস্ত আইনের শিকার হয়ে যেসব জমিদার জমিদারি হারান, তাদের জমিদারি ক্রয় করে নতুন এক জমিদার শ্রেণির উত্থান ঘটে।

(ঘ) রাজস্বের হার :

এই ব্যবস্থায় জমি জরিপ না করে রাজস্ব ধার্য করা হতো ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাজস্বের হার বৃদ্ধি পায় ।

মূল্যায়ন :

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুফল গুলি ছিল শুধুমাত্র ইংরেজদের জন্যই । । এই ব্যবস্থার মাধ্যমে ভারতীয় কৃষকদের কোন দুঃখমোচন হয়নি বরং তাদের দুঃখ বেড়েছিল ।

আরো পড়ুন – মহলওয়ারি বন্দোবস্ত বলতে কী বোঝো

FAQs On – চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত সম্পর্কে আলোচনা করো

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কোথায় চালু হয় ?

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথম চালু হয় বাংলা ও বিহারে ।পরে ধীরে ধীরে উড়িষ্যা , বারাণসী ও মাদ্রাজের উত্তর অংশে চালু হয়।

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কে চালু করেন ?

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করেন লর্ড কর্নওয়ালিস ।

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কবে চালু হয় ?

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ১৭৯৩ সালে চালু হয় ।

দশসালা বন্দোবস্ত কবে চালু হয় ?

দশসালা বন্দোবস্ত ১৭৯০ সালে চালু হয় ।

সূর্যাস্ত আইন কি ?

১৭৯৩ সালের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের একটি রীতি ছিল সূর্যাস্ত আইন । নির্দিষ্ট দিনে সূর্যাস্তের পূর্বে জমিদাররা রাজস্ব জমা দিতে ব্যর্থ হলে জমিদারের জমিদারি বাজেয়াপ্ত করা হতো । চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের এই রীতিই সূর্যাস্ত আইন নামে পরিচিত।

সূর্যাস্ত আইন কে প্রচলন করেন ?

সূর্যাস্ত আইন প্রচলন করেন লর্ড কর্নওয়ালিস ।

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কি ?

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি 1765খ্রি: মুঘল সম্রাট শাহ আলমের কাছ থেকে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করে।কোম্পানির উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় সম্পদের বহির্গমন । তাই কোম্পানি ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা থেকে আয় সুনিশ্চিত করতে একশালা,পাঁচশালা এবং দশশালা বন্দোবস্ত চালু করে।কিন্তু কোম্পানি ব্যর্থ হয়। তখন গভর্নর জেনারেল লর্ড কর্নওয়ালিস ভূমি রাজস্ব বিষয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে এক নতুন ব্যবস্থার প্রস্তাব করেন।এটিই ইতিহাসে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নামে পরিচিত।

মন্তব্য করুন