বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে যামিনী রায়ের অবদান – ভারতীয় চিত্রকলার ইতিহাসে যে সকল ব্যক্তিবর্গের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে যামিনী রায় তাদের মধ্যে অন্যতম। ছোটবেলা থেকে গ্রাম্য প্রকৃতি ও মৃৎশিল্পীদের সাহচর্য তাঁর শিল্পীমনকে আলোড়িত করে।
এই পৃষ্ঠায়
বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে যামিনী রায়ের অবদান :
আরো পড়ুন – বাংলা চিকিৎসা বিজ্ঞানে কাদম্বিনী বসুর (গাঙ্গুলি) অবদান
ভূমিকা :
বাংলা চিত্রকলায় বিশিষ্ট শিল্পধারার অন্যতম শিল্পী হলেন স্বনামখ্যাত যামিনী রায় ।বাঁকুড়া জেলার বেলিয়াতোড় গ্রামে জন্মগ্রহণ করার সুবাদে ছোটবেলা থেকে গ্রাম্য প্রকৃতি ও মৃৎশিল্পীদের সাহচর্য তাঁর শিল্পীমনকে আলোড়িত করে।লৌকিক চিত্রকলাকে নিজস্ব চিত্রচর্চার অংশ করে চিত্রশিল্পী হিসেবে পরিচয় প্রতিষ্ঠা করেন তিনি ।
চিত্রশিল্পে অবদান :
যামিনী রায়ের পিতা একজন শৌখিন শিল্পী ছিলেন।যামিনী রায় ১৬ বছর বয়সে স্কুলের পড়াশোনার পাট চুকিয়ে কলকাতা আর্ট কলেজে ভর্তি হন।
শিক্ষা গ্রহণান্তে তিনি ফাইন আর্টস বিভাগে ইউরোপীয় অ্যাকাডেমিক রীতির চিত্রকলা শেখেন । আবার কিছুদিন তিনি ফরাসী ইম্প্রেশনিস্ট চিত্রশিল্পীদের মতো চিত্রচর্চা করেছিলেন।
1918-19 তার চিত্র ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসের পত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে।1934 সালে তার ছবি সর্বভারতীয়প্রদর্শনীতে ভাইসরয়ের স্বর্ণপদক লাভ করে।
অবশ্য এরপরেই তার জীবনে আসে নতুন মোড়, তিনি অনুভব করেন যে এসব চিত্রশিল্প তার নিজস্ব ক্ষেত্র নয়। তিনি বাংলা লোকশিল্প ও পটশিল্পে আকৃষ্ট হয়ে মেদিনীপুর, কালীঘাট প্রভৃতি স্থানে গিয়ে বিভিন্ন পট সংগ্রহ করেন।
গিলার্ডি সাহেবের কাছে তেলরঙে চিত্র অঙ্কন শিখলেও পরবর্তী সময়ে জলরং এর মাধ্যমে অসামান্য সব ছবি আঁকেন।ভারতীয় চিত্রকলায় তাঁর ছবির ভাব ,বিষয় ,অঙ্কনরীতি সমকালীন অন্যান্য শিল্পীদের থেকে স্বতন্ত্র চিত্ররীতি প্রতিষ্ঠা করে।
তাঁর ছবির বিষয় ছিল রামায়ণ মহাভারতের নারী ও পুরুষ, যীশুখ্রিস্ট, আদিবাসী সমাজ, বাউল, পশুপাখি ইত্যাদি।
ফরাসী চিত্রকরদের মধ্যে যারা সরলরেখার পরিবর্তে কার্ভ ব্যবহার করতেন তাদের চিত্রকলার প্রতি তিনি বিশেষ অনুরক্ত ছিলেন।1955 খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার তাঁকে ‘পদ্মবিভূষণ’ উপাধিতে সম্মানিত করে।
মূল্যায়ন :
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে ,যামিনী রায় তার নিজস্ব চিত্রশিল্পের প্রতিভা দ্বারা বাংলা চিত্রকলাকে এক অভিনবত্ব রূপ দান করেছিলেন। তিনি হয়ে উঠেছিলেন সমকালীন শিল্পীদের চেয়ে এক স্বতন্ত্র পর্যায়ের চিত্রকর।
আরো পড়ুন – বাংলা চিত্রকলায় রামকিঙ্কর বেইজের অবদান
FAQs On – বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে যামিনী রায়ের অবদান
যামিনী রায়ের জন্মস্থান বাঁকুড়া জেলার বেলিয়াতোড় গ্রামে ।
যামিনী রায়ের পিতার নাম রামতরণ রায় ও মাতার নাম নগেন্দ্রবালা দেবী ।
যামিনী রায়ের বিখ্যাত চারটি ছবির নাম – ‘সাঁওতাল মা ও ছেলে’, ‘চাষির মুখ’, ‘পূজারিণী মেয়ে’, ‘কীর্তন’, ‘বাউল’, ‘গণেশ জননী’, ‘তিন কন্যা’, ‘যিশুখ্রিষ্ট’, ‘কনে ও তার দুই সঙ্গী’ ও ‘ক্রন্দসী মাছের সাথে দুই বেড়াল’
যামিনী রায় মূলত ভূষোকালি, খড়িমাটি, বিভিন্ন লতাপাতার রস থেকে আহরিত রং তাঁর চিত্রে ব্যবহার করতেন ।
যামিনী রায় 1955 খ্রিস্টাব্দে ‘পদ্মবিভূষণ’ উপাধি পান।