দুদুমিঞা স্মরণীয় কেন

দুদুমিঞা স্মরণীয় কেন – দুদুমিঞা তাঁর অনুগামীদের নিয়ে অত্যাচারী জমিদার ও নীলকরদের কাছারি ও কুঠিতে আক্রমণ চালাতেন। দুদুমিঞার নেতৃত্বে ফরাজি আন্দোলন ধর্মীয়-সামাজিক আন্দোলন থেকে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত হয় – এ জন্যই দুদুমিঞা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন ।

দুদুমিঞা স্মরণীয় কেন :

দুদুমিঞা স্মরণীয় কেন

আরো পড়ুন – মধুসূদন গুপ্ত স্মরণীয় কেন

ভূমিকা :

ভারতে উনিশ শতকে মুসলিম সমাজের পুনরুজ্জীবন ও সংস্কার সাধনের লক্ষ্যে গড়ে ওঠা ফরাজি আন্দোলনের জনক শরিয়ত উল্লাহের মৃত্যুর পর আন্দোলনের দায়িত্ব নেন তার পুত্র দুদুমিঞা । 

দুদুমিঞার নেতৃত্বে ফরাজি আন্দোলন ধর্মীয়-সামাজিক আন্দোলন থেকে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত হয় ।

দুদুমিঞা স্মরণীয় কারণ :

দুদু মিঞার প্রকৃত নাম মহম্মদ মহসীন। ইতিহাসে তিনি যেসব কারণে স্মরণীয় হয়ে আছেন , সেগুলি হল –

(ক) ফরাজী আন্দোলনের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা :

দক্ষ সংগঠক ও প্রখর রাজনৈতিক চেতনা সম্পন্ন ব্যক্তি দুদু মিঞা ছিলেন বাংলার ফরাজি আন্দোলনের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ।

হাজি শরিয়ত উল্লাহের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র দুদুমিঞা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন ।

(খ) আন্দোলনের প্রাণপুরুষ :

দুদু মিঞার নেতৃত্বেই পূর্ববঙ্গের অত্যাচারী জমিদার, নীলকর ও তাদের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ফরাজি আন্দোলন আরও সুসংহতভাবে পরিচালিত হয়।

তার নেতৃত্বে ফরাজি আন্দোলন ধর্মসংস্কার আন্দোলন থেকে ধর্মীয়-সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনের রূপ নেয়। 

(গ) দুদুমিঞার আহ্বান :

ফরাজী আন্দোলনে দুদুমিঞার তত্ব ছিল বৈপ্লবিক । তিনি বলতেন – জমি আল্লাহর দেন , তাই জমিদারের খাজনা আদায় করার করার কোনো অধিকার নেই

তিনি তার সমর্থকদের খাজনা না দেওয়া , ইংরেজদের অগ্রাহ্য করা এবং নীলচাষ না করার আহ্বান জানান ।

(ঘ) ফরাজি-খিলাফত আন্দোলন :

দুদুমিঞা ফরাজি খিলাফত নামে একটি প্রশাসন গড়ে তােলেন। এই প্রশাসনের শীর্ষে ছিলেন তিনি স্বয়ং। তাঁকে বলা হত ওস্তাদ ।

আর তার সাহায্যকারীদের বলা হত খলিফা। প্রশাসনিক কার্যকে সুষ্ঠুভাবে চালানাের জন্য তিনি সমগ্র পূর্ববঙ্গকে কয়েকটি অঞ্চল বা হল্কায় ভাগ করেন এবং প্রত্যেক হক্কায় একজন করে খলিফা নিযুক্ত করেন ।

দুদু মিঞার নির্দেশমতাে নিজের এলাকার কৃষকদের সংগঠিত করা, জমিদার ও নীলকরদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানাে এবং আসন্ন সংগ্রামের প্রস্তুতি হিসেবে অর্থ সংগ্রহ করা ছিল খলিফাদের প্রধান কাজ। 

(ঙ) জমিদার ও নীলকরদের আক্রমণ :

দুদু মিঞা বাংলাদেশে তার প্রভাবিত অঞ্চলে ‘ফরাজ-ই-খিলাফৎ’ নামক এক প্রশাসন গঠন করেন এবং তাঁর প্রধান কার্যালয় ছিল বাহাদুরপুর।

নীলকর ও জমিদারদের বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ দরিদ্র কৃষক তার নেতৃত্বে সমবেত হয়। অনুগামীদের নিয়ে তিনি অত্যাচারী জমিদার ও নীলকরদের কাছারি ও কুঠিতে আক্রমণ চালাতেন।

মূল্যায়ন :

দুদু মিঞার সুযোগ্য নেতৃত্বে ফরাজি আন্দোলন ধর্মীয়-সামাজিক আন্দোলন থেকে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত হয় ।

জমিদার ও নীলকরদের প্রচেষ্টায় ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে দুদু মিঞাকে ব্রিটিশ সরকার গ্রেপ্তার করে তাকে জেলে বন্দি করে। উচ্চতর আদালতের নির্দেশে তিনি ছাড়া পান । 

কিন্তু মুক্তিলাভের পর নানারকম ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে ১৮৬২ খ্রি: বাহাদুরপুরে মৃত্যুবরণ করেন ।

আরো পড়ুন – পঞ্চানন কর্মকার বিখ্যাত কেন

FAQs On – দুদুমিঞা বিখ্যাত কেন

দুদুমিঞা স্মরণীয় কেন ?

দুদুমিঞা তাঁর অনুগামীদের নিয়ে অত্যাচারী জমিদার ও নীলকরদের কাছারি ও কুঠিতে আক্রমণ চালাতেন। দুদুমিঞার নেতৃত্বে ফরাজি আন্দোলন ধর্মীয়-সামাজিক আন্দোলন থেকে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত হয় – এ জন্যই দুদুমিঞা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন ।

দুদুমিঞার প্রকৃত নাম কি ছিল ?

দুদুমিঞার প্রকৃত নাম ছিল হাজি মহম্মদ মহসীন ।

দুদুমিঞার পিতার নাম কি ছিল ?

দুদুমিঞার পিতার নাম ছিল হাজি শরিয়ত উল্লাহ ।

দুদুমিঞা কোন আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন ?

দুদুমিঞা ফরাজি আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন ।

ফরাজী আন্দোলনের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন ?

ফরাজী আন্দোলনের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন হাজি মহম্মদ মহসীন বা দুদুমিঞা ।

দুদুমিঞা কবে মারা যান ?

দুদুমিঞা নানারকম ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে ১৮৬২ খ্রি: বাহাদুরপুরে মৃত্যুবরণ করেন ।

ফরাজ-ই-খিলাফৎ কে প্রতিষ্ঠা করেন ?

ফরাজ-ই-খিলাফৎ প্রতিষ্ঠা করেন হাজি মহম্মদ মহসীন বা দুদুমিঞা ।

ফরাজ-ই-খিলাফৎ কি ?

ফরাজ-ই-খিলাফৎ ছিল দুদুমিঞা কতৃক প্রতিষ্ঠিত একটি প্রশাসনিক সংগঠন ।

দুদুমিঞা কাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন ?

দুদুমিঞা অত্যাচারী জমিদার ও নীলকরদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন ।

মন্তব্য করুন