একা আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো – মাদারী পাশির নেতৃত্বে তৎকালীন যুক্তপ্রদেশে নিম্নবর্গের কৃষকদের নিয়ে যে আন্দোলন গড়ে ওঠে তা ইতিহাসে একা আন্দোলন নামে পরিচিত ।
এই পৃষ্ঠায়
একা আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো :
আরো পড়ুন : মাতঙ্গিনী হাজরা স্মরণীয় কেন
ভূমিকা :
অসহযোগ-খিলাফত আন্দোলনের সময় মাদারী পাশির নেতৃত্বে তৎকালীন যুক্তপ্রদেশে নিম্নবর্গের কৃষকদের নিয়ে যে আন্দোলন গড়ে ওঠে তা ইতিহাসে একা আন্দোলন নামে পরিচিত ।
উত্তরপ্রদেশে (তখনকার যুক্তপ্রদেশ ) এই আন্দোলনের ব্যাপক প্রভাব দেখা যায়।
নামকরণ :
একা কথাটি এসেছে কথাটি এসেছে একতা থেকে । 1921 খ্রিস্টাব্দের শেষ ও 1922 খ্রিস্টাব্দের প্রথমদিকে কৃষক আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে ।
আন্দোলনকারী কৃষকরা একতাবদ্ধ থাকার শপথ নেওয়ায় এই আন্দোলনের নাম হয় ‘ একা ’ বা ‘ একতা ’ আন্দোলন।
নেতৃত্ব :
একা- আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন মাদারি পাশি ও বাবা গরিবদাস।
আন্দোলনের বিস্তার :
এই আন্দোলন মূলত বাঁরাবাকি, সিতাপুর,বারাইচ,হরদৈ এলাকায় তীব্র ধারণ করেছিল ।
একা আন্দোলনের পটভূমি :
একা আন্দোলনের কারণ গুলি হল নিম্নরূপ –
(ক) এই আন্দোলন হয়েছিল মূলত উচ্চহারে রাজস্ব আদায় ।
(খ) নথিভুক্ত রাজস্বের ওপর অতিরিক্ত ৫০% বাড়তি কর আদায় ।
(গ) রাজস্ব আদায় দুর্নীতি ও ঠিকাদারদের অমানুষিক অত্যাচার।
(ঘ) প্রভুর জমি ও খামারে কৃষককে বিনা বেতনে বেগার শ্রম দিতে বাধ্য করা।
(ঙ) বাটাই বা উৎপন্ন শস্যের বদলে নগদ অর্থে করদান ।
ইত্যাদি কারণগুলি এক আন্দোলনের পটভুমি রচনা করেছিল ।
একা আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য :
(ক) কৃষক ঐক্য প্রতিষ্ঠা :
এই আন্দোলনের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল কৃষক ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা । আন্দোলনরত কৃষকরা সভায় সমবেত হয়ে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের ঐক্য সুদৃঢ় করত ।
(খ) কৃষককেন্দ্রিক আন্দোলন :
এই আন্দোলন ছিল সম্পূর্ণভাবে কৃষককেন্দ্রিক। কৃষকশ্রেণীর মানুষেরাই মূলত এই আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন ।
(গ) নিম্নবর্গের আন্দোলন :
এই আন্দোলনের মূল নেতা মাদারী পাশি ছিলেন নিম্নবর্গীয় এবং তাঁর সহযোগীরাও ছিলেন নিম্নবর্গীয় । তাই এই আন্দোলন মূলত নিম্নবর্গীয়দের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল ।
প্রধান দাবী সমূহ :
আন্দোলনকারীরা দাবি গ্রহণ করে যে , তারা –
(ক) নির্ধারিত কর ছাড়া অতিরিক্ত ৫০% কর কৃষকরা দেবেনা।
(খ) রশিদ বা প্রমাণপত্র ছাড়া কর নেওয়া চলবে না।
(গ) বেগার শ্রম দেবে না।
(ঘ) জমি থেকে উৎখাত করলেও তারা জমি ছেড়ে যাবে না।
(ঙ) পঞ্চায়েত ছাড়া অন্য কারও সিদ্ধান্ত কৃষকরা মানবে না।
(চ) অপরাধীদের সাহায্য করবে না।
(ছ) উৎপাদিত পণ্যের পরিবর্তে নগদ টাকায় খাজনা মেটানো হবে ।
আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি :
একা আন্দোলনের নেতারা নিজস্ব পথে চলেন । তাঁরা জাতীয় আন্দোলনের নেতাদের পরামর্শ মানেননি ।প্রথমদিকে এই আন্দোলন শান্তিপূর্ণ হলেও ক্রমশ হিংসাত্মক হয়ে ওঠে।
কুমায়ুন অঞ্চলে সংরক্ষিত অরণ্য জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। জমিদার তালুকদারদের ঘরবাড়ি আক্রমণ করা হয়।
মাদারী পাশি জেলাশাসককে হত্যা এবং ইংরেজ শাসকদের বিতাড়িত করার ডাক দেন ।
কংগ্রেসের ভূমিকা :
প্রথমের দিকে কংগ্রেস একা আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানালেও কিছুসময় পর এই আন্দোলনে হিংসাত্মক আকার ধারণ করলে কংগ্রেস ও জাতীয় নেতৃবৃন্দ এই আন্দোলন থেকে দূরে সরে যায় ।
মূল্যায়ন :
একা আন্দোলন উগ্র হয়ে উঠলে সরকার তা দমন করতে অগ্রসর হয় । ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসের মধ্যে সরকার চরম দমন নীতি প্রয়োগ করে আন্দোলন স্তব্ধ করে দেয়। মাদারি পাশি কারারুদ্ধ হন। এইভাবে একা আন্দোলন অবসান হয় ।
আরো পড়ুন : দুদুমিঞা স্মরণীয় কেন
FAQs On – একা আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো
একা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন মাদারী পাশি ।
একা আন্দোলনের কারণ গুলি হল নিম্নরূপ – (ক) এই আন্দোলন হয়েছিল মূলত উচ্চহারে রাজস্ব আদায় ।(খ) নথিভুক্ত রাজস্বের ওপর অতিরিক্ত ৫০% বাড়তি কর আদায় ।(গ) রাজস্ব আদায় দুর্নীতি ও ঠিকাদারদের অমানুষিক অত্যাচার।(ঘ) প্রভুর জমি ও খামারে কৃষককে বিনা বেতনে বেগার শ্রম দিতে বাধ্য করা।(ঙ) বাটাই বা উৎপন্ন শস্যের বদলে নগদ অর্থে করদান ।
১৯২১ সালের শেষ এবং ১৯২২ সালের শুরুর মধ্যবর্তী সময়ে একা আন্দোলন শুরু হয় ।
একা আন্দোলন উত্তরপ্রদেশে অর্থাৎ তৎকালীন যুক্তরাজ্যে শুরু হয় । এই আন্দোলন মূলত বাঁরাবাকি, সিতাপুর,বরাইচ,হরদৈ এলাকায় তীব্র ধারণ করেছিল ।
একা আন্দোলন আন্দোলন হয়েছিল অসহযোগ-খিলাফত আন্দোলনের সময় ।