ইলবার্ট বিল বিতর্ক কি

ইলবার্ট বিল বিতর্ক কি – ফৌজদারী বিধি অনুযায়ী কোনো ভারতীয় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোনো শ্বেতাঙ্গ আসামীর বিচার করতে পারতো না । এই বৈষম্য দূর করার জন্য বড়োলাট লর্ড রিপণের আইন সচিব স্যার ইলবার্ট ভারতীয় বিচারকদের ইংরেজ বিচারকদের নায় সমান ক্ষমতা দিয়ে ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে একটি আইন পাশ করেন, যা ইলবার্ট বিল নামে পরিচিত।

ইলবার্ট বিল বিতর্ক কি :

ইলবার্ট বিল বিতর্ক কি

আরো পড়ুন – বিনয় বাদল দীনেশ স্মরণীয় কেন

ইলবার্ট বিল বিতর্ক :

ভূমিকা :

ভারতের বড়লাট লর্ড রিপন এর শাসনকালের পূর্বে এদেশে কোন ভারতীয় বিচারক কোন শ্বেতাঙ্গের বিচার করতে পারত না ।

এই বিষয়কে কেন্দ্র করে ভারতীয়দের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয় । বড়লাট লর্ড রিপন ও তাঁর আইনসচিব কোর্টনি ইলবার্ট ইলবার্ট বিল প্রণয়নের মাধ্যমে ভারতীয়দের এই ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা করেন ।

ইলবার্ট বিলের বিষয়বস্তু :

(ক) ১৮৭৩ খ্রি: ফৌজদারী বিধি অনুযায়ী কোনো ভারতীয় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোনো শ্বেতাঙ্গ আসামীর বিচার করতে পারতো না।

(খ) এই বৈষম্য দূর করার জন্য বড়োলাট লর্ড রিপণের আইন সচিব স্যার কোর্টনি ইলবার্ট ভারতীয় বিচারকদের ইংরেজ বিচারকদের নায় সমান ক্ষমতা দিয়ে ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে একটি আইন পাশ করেন, যা ইলবার্ট বিল নামে পরিচিত।

ইউরোপীয়দের ক্ষোভ ও আন্দোলন :

(ক) ইলবার্ট বিলের মাধ্যমে ভারতীয়দের ইংরেজদের বিচার করার ক্ষমতা দেওয়া হলে শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয়রা এতে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয় এবং এই বিলের বিরুদ্ধে মিলিত হয়ে তীব্র আন্দোলন শুরু করে ।

(খ) কারণ ইউরোপীয়রা মনে করত যে তাঁরা শাসক জাতি আর ভারতীয়রা শোষিত জাতি । তাই ভারতীয় বিচারকদের ইউরোপীয়দের বিচার করার কোনো অধিকার বা যোগ্যতা নেই ।

(গ) তাই তারা কলকাতা হাইকোর্টের ব্যারিস্টার ব্রানসনের নেতৃত্বে ডিফেন্স অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করে আন্দোলন চালাতে থাকে।

(ঘ) আন্দোলন চালানোর উদ্দেশ্যে তারা দেড় লক্ষ টাকার বেশি চাঁদা সংগ্রহ করে ।

(ঙ) আন্দোলন বহু স্থানে হিংসাত্মক রূপ নেয়, ফলে লর্ড রিপন এই বিলটি নিয়ে নতুন করে ভাবতে থাকেন।

ইলবার্ট বিলের পক্ষে আন্দোলন :

(ক) ইলবার্ট বিলের বিরুদ্ধে শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয়রা আন্দোলন শুরু করলে লালমোহন ঘোষ , সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও ভারতসভা ইলবার্ট বিলের সমর্থনে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন । 

(খ) ইলবার্ট বিল এর সমর্থনে অমৃতবাজার পত্রিকা , বেঙ্গলি পত্রিকা প্রভৃতি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রচার চলতে থাকে ।

(গ) বিলের সমর্থনে দেশের নানা প্রান্তে সভা অনুষ্ঠিত হয় ।

(ঘ) ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ ইলবার্ট বিলের সমর্থনে আন্দোলনে যোগদান করতে থাকে ।

ইলবার্ট বিলের গুরুত্ব :

ইলবার্ট বিলের প্রকৃত উদেশ্য ব্যর্থ হলেও ভারতের জাতীয়তাবোধ জাগরণে এর গুরুত্ব ছিল তাৎপর্যপূর্ণ ।

(ক) সংঘবদ্ধ আন্দোলনের প্রয়ােজনীয়তা উপলব্ধি :

ইলবার্টবিল বিতর্ক থেকে ভারতীয়রা উপলব্ধি করে যে , একমাত্র সংঘবদ্ধ আন্দোলনই ভারতবাসীর মর্যাদা ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পারে । 

(খ) নিজস্ব অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা :

ইংরেজ জাতি ভারতবাসীকে যে ঘৃণা বা অবজ্ঞার চোখে দেখে তা ইলবার্ট বিল বিরােধী আন্দোলন থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় । এর ফলে ভারতবাসীরা তাদের নিজস্ব অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে ।

(গ) ইংরেজ শাসনের মােহমুক্তি : 

ব্রিটিশ শাসনের বৈষম্যমূলক চরিত্র সম্পর্কে ভারতীয়দের ধারণা স্পষ্ট হয়। শিক্ষিত ভারতবাসীদের ইংরেজ শাসনের প্রতি মােহ কমতে থাকে । 

(ঘ) জাতীয় সম্মেলন প্রতিষ্ঠার প্রেরণা :

ইলবার্ট বিল আন্দোলনের ফলস্বরূপ ভারতীয়রা সুরেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে জাতীয় সম্মেলন আহ্বানের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে ।

(ঙ) তহবিল গঠনের প্রয়োজনীয়তা :

ইলবার্ট বিল আন্দোলন পরিচালনা করতে স্বেতাঙ্গরা প্রায় ১ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করেছিল । এর থেকে ভারতীয়রাও তহবিল গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে ।

মূল্যায়ন :

ইলবার্ট বিলের প্রকৃত উদেশ্য ব্যর্থ হলেও ভারতের জাতীয়তাবোধ জাগরণে এই বিলের গুরুত্ব ছিল তাৎপর্যপূর্ণ । এই আন্দোলন ছিল ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় । তাই ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার যথার্থই বলেছেন, “ভারতের রাজনৈতিক অগ্রগতিতে ইলবার্ট বিলের মুখ্য ভূমিকা ছিল l” 

আরো পড়ুন – একা আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো

FAQs On – ইলবার্ট বিল বিতর্ক কি


ইলবার্ট বিল কি ?

ফৌজদারী বিধি অনুযায়ী কোনো ভারতীয় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোনো শ্বেতাঙ্গ আসামীর বিচার করতে পারতো না । এই বৈষম্য দূর করার জন্য বড়োলাট লর্ড রিপণের আইন সচিব স্যার ইলবার্ট ভারতীয় বিচারকদের ইংরেজ বিচারকদের নায় সমান ক্ষমতা দিয়ে ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে একটি আইন পাশ করেন, যা ইলবার্ট বিল নামে পরিচিত।

ইলবার্ট বিল বিতর্কে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিল কোন সভা ?

ইলবার্ট বিল বিতর্ক মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিল ভারতসভা ।


স্বেতাঙ্গরা ইলবার্ট বিলের বিরোধিতা করেছিল কেন?

ইলবার্ট বিলের মাধ্যমে ভারতীয়দের ইংরেজদের বিচার করার ক্ষমতা দেওয়া হলে শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয়রা এতে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয় এবং এই বিলের বিরুদ্ধে মিলিত হয়ে তীব্র আন্দোলন শুরু করে ।কারণ ইউরোপীয়রা মনে করত যে তাঁরা শাসক জাতি আর ভারতীয়রা শোষিত জাতি । তাই ভারতীয় বিচারকদের ইউরোপীয়দের বিচার করার কোনো অধিকার বা যোগ্যতা নেই ।

ইলবার্ট বিল কে কবে পাস করেন ?

১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে বড়োলাট লর্ড রিপণের আইন সচিব স্যার ইলবার্ট ।

বড়লাট লর্ড রিপনের আইনসচিব কে ছিলেন ?

বড়লাট লর্ড রিপনের আইনসচিব ছিলেন স্যার কোর্টনি ইলবার্ট ।

কোন ভাইসরয়ের সময় ইলবার্ট বিল আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল ?

লর্ড রিপনের সময় ইলবার্ট বিল আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল ।

মন্তব্য করুন