জার্মানিতে হিটলারের উত্থানের কারণ আলোচনা করো – আজকের পর্বে আমরা তোমাদের সাথে আলোচনা করলাম ইতিহাসের খুবই গুরুত্বপূর্ণ টপিক জার্মানিতে হিটলারের উত্থানের কারণ নিয়ে ।
এই পৃষ্ঠায়
- 1 জার্মানিতে হিটলারের উত্থানের কারণ আলোচনা করো :
- 2 জার্মানিতে হিটলারের উত্থানের কারণ :
- 2.1 জার্মানিতে নাৎসি দলের বা হিটলারের উত্থানের কারণ :
- 2.1.1 (ক) ভাইমার প্রজাতন্ত্রের ব্যর্থতা :
- 2.1.2 (খ) হেরেনভক তত্ত্ব :
- 2.1.3 (গ) হিটলারের ইহুদি বিদ্বেষ :
- 2.1.4 (ঘ) অর্থনৈতিক সংকট :
- 2.1.5 (ঙ) জার্মান বিদেশ নীতির ব্যর্থতা :
- 2.1.6 (চ) ভার্সাই চুক্তি :
- 2.1.7 (ছ) কমিউনিস্ট ভীতি :
- 2.1.8 (জ) বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভূমিকা :
- 2.1.9 (ঝ) হিটলারের দক্ষতা :
- 2.1.10 (ঞ) সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রতি অশ্রদ্ধা :
- 2.1.11 মূল্যায়ন :
- 2.1 জার্মানিতে নাৎসি দলের বা হিটলারের উত্থানের কারণ :
জার্মানিতে হিটলারের উত্থানের কারণ আলোচনা করো :
আরো পড়ুন – রুশ বিপ্লবের কারণ আলোচনা করো
জার্মানিতে হিটলারের উত্থানের কারণ :
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে জার্মানিতে ভাইমার প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় । বিভিন্ন কারণে এই সরকারের ওপর জনগণের অসন্তোষ বাড়তে থাকে। এই অসন্তোষকে হাতিয়ার করে জার্মানিতে হিটলারের নেতৃত্বে নাৎসিবাদের উত্থান হয় ।
জার্মানিতে নাৎসি দলের বা হিটলারের উত্থানের কারণ :
জার্মানিতে নাৎসি দলের বা হিটলারের উত্থানের কারণগুলি হল নিম্নরূপ –
(ক) ভাইমার প্রজাতন্ত্রের ব্যর্থতা :
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে জার্মানিতে ভাইমার প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু এই প্রজাতান্ত্রিক সরকার ভার্সাই চুক্তির শর্তগুলি মেনে নেওয়ায় জার্মানরা ভাইমার প্রজাতন্ত্রের প্রতি আস্থা হারায়।
এই সুযোগে হিটলার তাঁর নাৎসি দলের উত্থানের পথ প্রশস্ত করে নেয়।
(খ) হেরেনভক তত্ত্ব :
জার্মানির ক্ষমতা দখলের পূর্বে হিটলার প্রচার করেছিলেন যে জার্মানরাই একমাত্র বিশুদ্ধ আর্য জাতির উত্তরাধিকারী।
সুতরাং শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে জার্মানরা অন্যান্য জাতির ওপর আধিপত্য কায়েম করার অধিকারী । এই তত্ত্ব হেরেনভক তত্ত্ব নামে পরিচিত ।
এই তত্ত্বকে বাস্তবে প্রয়ােগ করে হিটলার ও তার নাৎসি দল প্রভূত জনপ্রিয়তা অর্জন করে ।
(গ) হিটলারের ইহুদি বিদ্বেষ :
জার্মানরা ছিল টিউটন জাতিভুক্ত । তাই তারা জার্মানিতে বসবাসকারী ইহুদিদের সহ্য করতে পারত না । অধিকাংশ জার্মানবাসী তাদের দুরবস্থার জন্য ইহুদিরাই দায়ী বলে মনে করত ।
তাই নাৎসি দল জার্মানবাসীর মন বুঝে ইহুদি বিতাড়নকে তাদের অন্যতম কর্মসূচি বলে গ্রহণ করেন । নাৎসি দলের নেতৃত্বে জার্মানি থেকে ইহুদি বিতাড়ন কর্মসূচি তাদের ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করে ।
(ঘ) অর্থনৈতিক সংকট :
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি আর্থিক দিক থেকে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মুদ্রাস্ফীতি ঘটে ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অত্যন্ত বৃদ্ধি পায়।
প্রজাতান্ত্রিক সরকার এই সংকট মেটাতে ব্যর্থ হলে জার্মানিতে হিটলারের নেতৃত্বে নাৎসি দলের উত্থান ঘটে।
(ঙ) জার্মান বিদেশ নীতির ব্যর্থতা :
জার্মান সাধারণতন্ত্রী সরকারের বিদেশ নীতির উদ্দেশ্য ছিল সামরিক ক্ষেত্রে জার্মানির স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা ।
সেই উদ্দেশ্যে রাইন অঞ্চলকে পুনরায় জার্মানির অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং বিদেশিদের কবল থেকে দেশকে রক্ষা করতে তাঁরা সচেষ্ট হয় ।
কিন্তু যুদ্ধের পর জার্মানি রাশিয়ার সঙ্গে র্যাপালাে সন্ধিতে আবদ্ধ হলে জার্মান বিদেশনীতির উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয় , এতে জার্মানবাসী ক্ষুদ্ধ হয় ।
এই সুযোগকে হাতিয়ার করে জার্মানিতে হিটলারের উত্থানের পথ বহুলাংশে প্রশস্ত হয় ।
(চ) ভার্সাই চুক্তি :
হিটলারের উত্থানের প্রধান কারণ হল জার্মান জাতির ওপর অপমানজনক ভার্সাই সন্ধি আরােপ।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মান সেনাবাহিনীর শােচনীয় পরাজয় এবং তারপর মিত্রশক্তি কর্তৃক জার্মানির ওপর চাপানো ভার্সাই সন্ধির গ্লানি জার্মান জাতির আত্মমর্যাদায় তীব্র আঘাত হানে।
তাই শুরু থেকেই জার্মান দেশপ্রেমিকরা এই. সন্ধির বিরােধিতা করতে থাকে এবং এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে হিটলারের নাৎসী দল ক্ষমতায় আসে ।
(ছ) কমিউনিস্ট ভীতি :
কমিউনিস্টদের সম্পর্কে জার্মানদের মনে প্রবল ভীতি ছিল। কমিউনিস্ট নেতৃত্বে কৃষক-শ্রমিক আন্দোলন, শিল্প ধর্মঘট প্রভৃতিকে সাধারণ মানুষ এবং শিল্পপতি ও ভূ-স্বামীরা ভাল নজরে দেখেনি।
তারা মনে করত যে, একমাত্র নাৎসীরাই কমিউনিস্টদের প্রতিহত করতে পারে। এই কারণে তারা নানাভাবে নাৎসীদের সাহায্য করতে থাকে ।
(জ) বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভূমিকা :
জার্মানিতে কোনো একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল না ।প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী ৯ বছরের মধ্যে জার্মানিতে অন্তত ১৫টি মন্ত্রীসভা ক্ষমতায় আসে।
এই রাজনৈতিক সংকটের সুযোগ নেন হিটলার ও তাঁর নাৎসি দল।
(ঝ) হিটলারের দক্ষতা :
জার্মানিতে নাৎসিবাদের উত্থানে হিটলারের সাংগঠনিক শক্তি , নেতৃত্বদানের দক্ষতা , বাগ্মিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল ।
নিজের আত্মজীবনী মেঁই ক্যাম্ফে জার্মান জাতির শ্রেষ্ঠত্ব প্রচার জার্মানবাসীকে হিটলারের প্রতি অনুরক্ত করে তােলে । তাঁর জ্বালাময়ী ভাষণ জনমানসে নতুনভাবে উন্মাদনা সৃষ্টি করেছিল ।
পশ্চিমি রাষ্ট্র জোটের বিরুদ্ধে তাঁর দুঃসাহসিক অভিযানের প্রস্তুতি নাৎসি দলকে জার্মানবাসীর কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছিল ।
(ঞ) সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রতি অশ্রদ্ধা :
জার্মানির গণতান্ত্রিক সংবিধানের ত্রুটির জন্য গণতন্ত্রের ভীত দুর্বল ছিল । যার জন্য রাজনৈতিক ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা আসেনি ।
জার্মান জাতির গণতান্ত্রিক অধিকারগুলি সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সরকার ব্যর্থ হয় । ফলে গরিষ্ঠ সংখ্যক জার্মানবাসী প্রচলিত গণতান্ত্রিক সংসদীয় ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারায় । যার পূর্ণ সুযােগ নেয় হিটলারের নাৎসি দল ।
মূল্যায়ন :
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে এটি স্পষ্ট যে জার্মানিতে নাৎসিবাদের উত্থানে হিটলারের সাংগঠনিক শক্তি , নেতৃত্বদানের দক্ষতা , বাগ্মিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল ।ঐতিহাসিক ই.এইচ.কার হিটলারের এই উত্থানকে নাৎসি বিপ্লব বলে অভিহিত করেছেন ।
আরো পড়ুন – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ ও ফলাফল