টীকা লেখো লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা – আজকের পর্বে আমরা তোমাদের সাথে আলোচনা করলাম ইতিহাসের খুবই গুরুত্বপূর্ণ টপিক লাহোর সড়যন্ত্র মামলা নিয়ে ।
এই পৃষ্ঠায়
টীকা লেখো লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা :
আরো পড়ুন – মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা টীকা লেখ
লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা :
ভূমিকা :
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে সশস্ত্র সংগ্রাম কিংবা গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠনের আন্দোলন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
জাতীয় কংগ্রেসের নরমপন্থী দলের কার্যকলাপে আস্থা হারিয়েছিল কিছু তরুণ-যুব সম্প্রদায়।
আবেদন-নিবেদনের বদলে সশস্ত্র বিপ্লবের মধ্য দিয়ে দেশের স্বাধীনতা অর্জন করতে গিয়ে ব্রিটিশ পুলিশের হাতে ধরা পড়া তরুণ যুবকদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা ইতিহাসের পাতায় নথিভুক্ত হয়ে আছে তার মধ্যে অন্যতম হল লাহোর সড়যন্ত্র মামলা ।
লাহোর ষড়যন্ত্র মামলার প্রেক্ষাপট :
(ক) পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট স্যান্ডার্সকে হত্যা :
১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে হিন্দুস্থান স্যোসালিস্ট’ রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি বিপ্লবী দলের নেতা ভগৎ সিং , রাজগুরু প্রমুখরা লাহোরে লালা লাজপত রায়ের উপর লাঠি চালানো সঙ্গে যুক্ত পুলিশ অফিসার স্যান্ডার্সকে হত্যা করে ।
(খ) কেন্দ্রীয় আইন সভার কক্ষে বোমা নিক্ষেপ :
“জননিরাপত্তা বিল” ও “শিল্প বিরোধী বিল” পাস করার বিরুদ্ধে 1929 খ্রিস্টাব্দে 8 ই এপ্রিল ভগৎ সিং ও তার সহকারী বটুকেশ্বর দত্ত দিল্লিতে কেন্দ্রীয় আইন সভার কক্ষে বোমা নিক্ষেপ করেন এবং চিৎকার করে ওঠেন – ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ধ্বনি দিয়ে। পুলিশ এই বোমা বিস্ফোরণের পর পাঞ্জাবের লাহোরে বোমা তৈরির একটি গোপন কেন্দ্র খুঁজে বার করে, এর ফলে বহু বিপ্লবী ধরা পড়ে। এই বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে শুরু হয় লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা।
মামলায় অভিযুক্ত :
এই মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে ছিলেন – শুকদেব, কিশোরী লাল, প্রেম দত্ত, দেশ রাজ, জয়দেব, শীউ ভার্মা, মহাবীর সিং, ভগত সিং, অজয় কুমার ঘোষ, যতীন সান্যাল, বিজয় কুমার সিনহা, শিবরাম রাজগুরু, কুন্দনলাল, কনওয়াল নাথ ত্রিবেদী, ভগবান দাস, চন্দ্রশেখর আজাদ, কৈলাশ পাত্তি, ভগবতী চরণ, যশপাল ,সদগুরদয়াল, আজ্ঞা রাম, সুরেন্দ্রনাথ পাণ্ডে, বটুকেশ্বর দত্ত প্রমুখ ।
এঁদের মধ্যে ভগবান দাসকে বিচারের জন্য আদালতে পাঠানো হয়নি।
চন্দ্রশেখর আজাদ, কৈলাশ পাত্তি, ভগবতী চরণ, যশপাল এবং সদগুরদয়াল পরে পালিয়ে যাওয়ার কারণে তাঁদের বিচার হয়নি।
আজ্ঞা রাম এবং সুরেন্দ্রনাথ পাণ্ডেকে ভারতীয় ক্রিমিনাল কোডের ২৫৩ নং ধারা অনুযায়ী ছেড়ে দেওয়া হয়। সবশেষে বটুকেশ্বর দত্তকেও ৪৯৪ নং ধারা অনুযায়ী ছেড়ে দেওয়া হয়।
ফলে বাকি পনেরো জন বিপ্লবীকে নিয়েই ব্রিটিশ সরকার শুরু করেছিল লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা।
ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৭ নং ধারা এবং বিস্ফোরক আইন অনুসারে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চলা মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা হয় ১৯৩০ সালের ৭ই অক্টোবর।
মামলার রায় :
১৯৩০ সালের ৭ই অক্টোবর বিপ্লবী ভগত সিং, রাজগুরু এবং বিপ্লবী শুকদেবের ফাঁসির আদেশ ঘোষিত হয়।
মামলা চলাকালীন রাজসাক্ষী হয়েছিলেন ফণী ঘোষ, ললিত মুখার্জী সহ আরো অনেকে।
১৯৩১ সালের ২৩শে মার্চ ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৮১নং ধারায় ফাঁসি হয় এই তিন বিপ্লবীর।
গান্ধীজির প্রচেষ্টা :
১৯৩১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গান্ধীজি তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড আরউইনের সঙ্গে দেখা করে ভগত সিংয়ের ফাঁসির বিষয়টি উত্থাপন করে ফাঁসির দণ্ডাদেশ মকুবের আবেদন জানান।
ভগত সিংয়ের ফাঁসি রদ করা নিয়ে গান্ধীজি বহু প্রচেষ্টা করেছেন কিন্তু আরউইন কোনোভাবেই এই আবেদনে সাড়া দেননি।
মূল্যায়ন :
লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা ভারতবর্ষের আধুনিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ । মামলায় অভিযুক্তদের একের পর এক বিচার হয়েছিল। বিচারাধীন বিপ্লবীরা যে দীর্ঘস্থায়ী অনশন ও ধর্মঘট করেছিল, তাতে গোটা দেশ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল ।
আরো পড়ুন – বিভিন্ন ঐতিহাসিক ষড়যন্ত্র মামলার তালিকা
FAQs On – লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা
১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে হিন্দুস্থান স্যোসালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি বিপ্লবী দলের নেতা ভগৎ সিং,রাজগুরু প্রমুখ লাহোরের সরকারি পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট স্যান্ডার্সকে হত্যা করে।পরে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ভগৎ সিং ও তার সহকর্মী বটুকেশ্বর দত্ত দিল্লিতে কেন্দ্রীয় আইন সভার কক্ষে বোমা নিক্ষেপ করে। পুলিশ এই বোমা বিস্ফোরণের পর পাঞ্জাবের লাহোরে বোমা তৈরির একটি গোপন কেন্দ্র খুঁজে বার করে, এর ফলে বহু বিপ্লবী ধরা পড়ে যায়। এই বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে যে মামলা শুরু হয় ইতিহাসে তা লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত।
ভগৎ সিং এর ফাঁসি হয় লাহোর ষড়যন্ত্র মামলায় ।
ভগৎ সিং এর ফাঁসি হয় ১৯৩১ সালের ২৩শে মার্চ ।
লাহোর ষড়যন্ত্র মামলায় ভগত সিং, রাজগুরু এবং বিপ্লবী শুকদেবের ফাঁসি হয় ।