মহলওয়ারি বন্দোবস্ত বলতে কী বোঝো – মহল কথাটির একটা অর্থ কয়েকটি গ্রামের সমষ্টি ৷ ইংরেজ আমলে যে ভূমিরাজস্ব ব্যাবস্থায় সরকার কয়েকটি গ্রামের বা মহলের রাজস্ব গ্রাম প্রধানের মাধ্যমে আদায় করতো তাকে মহলওয়ারি বন্দোবস্ত বলা হয় ।
এই পৃষ্ঠায়
মহলওয়ারি বন্দোবস্ত বলতে কী বোঝো :
আরো পড়ুন – চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত সম্পর্কে আলোচনা করো
মহলওয়ারি বন্দোবস্ত :
ভূমিকা :
জমিদারি বন্দোবস্তেরই এক পরিবর্তিত রূপ ছিল মহলওয়ারি বন্দোবস্ত । মহল কথাটির একটা অর্থ কয়েকটি গ্রামের সমষ্টি ৷
ইংরেজ আমলে যে ভূমিরাজস্ব ব্যাবস্থায় সরকার কয়েকটি গ্রামের বা মহলের রাজস্ব গ্রাম প্রধানের মাধ্যমে আদায় করতো তাকে মহলওয়ারি বন্দোবস্ত বলা হয় ।
মহলওয়ারি ব্যাবস্থার প্রবর্তক :
কোম্পানীর পরিচালক সভার সম্পাদক হোল্ট ম্যাকেঞ্জিকে মহলওয়ারি ব্যাবস্থার প্রবর্তক বলা হয় ।
বিস্তার :
গাঙ্গেয় উপত্যকা অঞ্চল , উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ , মধ্যপ্রদেশ প্রভৃতি অঞ্চলে এই মহলওয়ারি বন্দোবস্ত চালু হয় ।
পটভূমি :
বিশেষ কমিশনার মি. এইচ. জি. টাক প্রমুখ চিরস্থায়ী বিকল্প ব্যবস্থার সুপারিশ পেশ করেন। ইংল্যান্ডের পরিচালক সভাও এই সুপারিশ মেনে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বিকল্প ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা প্রবর্তনের মত দেয়।
অবশেষে পরিচালক সভার সম্পাদক হােল্ট ম্যাকিঞ্জি মহলভিত্তিক ভূমি বন্দোবস্তের সঙ্গে রায়তওয়ারি ব্যবস্থার বেশ কিছু নীতির সংমিশ্রণ ঘটান।
এরপর কোম্পানি সপ্তম আইন জারির মাধ্যমে ১৮২২ খ্রি. এই ব্যবস্থার প্রচলন করে।
মহলওয়ারি বন্দোবস্তের বৈশিষ্ট্য :
মহলওয়ারি বন্দোবস্তের বৈশিষ্ট্যগুলি হল নিম্নরূপ –
(ক) এই ব্যবস্থায় সরকার রায়তদের সাথে ভূমি বন্দোবস্ত না করে এক একটি গ্রামের বা মহল্লার সঙ্গে ভূমি বন্দোবস্ত করতেন।
(খ) জমির উৎপাদিকা শক্তির হার অনুসারে ভূমি রাজস্বের হার নির্ধারিত হত।
(গ) রায়ত ও সরকারের মাঝে কোনাে মধ্যস্বত্বভােগীর অবস্থান ছিল না।
(ঘ) গ্রামবাসীরা তাদের নির্দিষ্ট রাজস্ব গ্রাম প্রধানের মারফত সরকারের কাছে জমা দিত।
(ঙ) গ্রামের ওপর ধার্য রাজস্ব গ্রামবাসীদের মিলিতভাবে দিতে হত।
(চ) প্রতিটি মহল বা মৌজার সঙ্গে ২০ থেকে ৩০ বছরের জন্য ভূমি বন্দোবস্ত করা হত ।
(ছ) মহলওয়ারি ব্যবস্থায় জমিদার শ্রেণির অস্তিত্ব না থাকার ফলে জমিদার, গােমস্তা, নায়েব প্রমুখের শােষণ ও অত্যাচার থেকে রায়তশ্রেণি মুক্ত ছিল।
(জ) এই ব্যবস্থা কার্যকর হওয়ার পর ব্রিটিশ সরকারের আয় বেড়েছিল।
(ঝ) মহলওয়ারি বন্দোবস্তের অধীনে গ্রামের নেতা বা গ্রাম প্রধান রাজস্ব সংগ্রহের কাজ পরিচালিত করত।
(ঞ) জমি জরিপ করে প্রতিটি ‘মহল’ বা গ্রামের রাজস্ব ঠিক করা হত।
(ট) রাজস্বের হার অত্যন্ত চড়া ছিল ।
মহলওয়ারি বন্দোবস্তের উদ্দেশ্য :
(ক) এই ব্যবস্থা প্রবর্তনের ক্ষেত্রে সরকার চেয়েছিল ভবিষ্যতে রাজস্বের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে।
(খ) কোম্পানি এই ব্যবস্থার মাধ্যমে মধ্যস্বত্বভােগীদের বিলুপ্তি চেয়েছিল।
মহলওয়ারি বন্দোবস্তের ফলাফল :
সুফল :
(ক) এই বন্দোবস্তে জমিদার শ্রেণী ও মধ্যস্বত্বভােগী শ্রেণী না থাকায় কৃষকদের শোষণের পরিমাণ কিছুটা হলেও কম ছিল ।
(খ) জমির উৎপাদিকা শক্তির হার অনুসারে ভূমি রাজস্বের হার নির্ধারিত হত তাই কৃষকরা সহজেই রাজস্ব প্রদান করতে পারতো ।
(গ) এই ব্যাবস্থায় ইচ্ছামতো যখন তখন রাজস্ব বৃদ্ধি করা হত না ।
(ঘ) কোনো ব্যক্তি সময় মতো রাজস্ব না দিতে পারলে তাকে জমি থেকে উৎখাত করা হতো না ।
কুফল :
(ক) এই জমি বন্দোবস্তে জমির ওপর কৃষকদের কোনাে মালিকানা ছিল না।
(খ) অত্যধিক রাজস্বের হার দিতে গিয়ে কৃষক পরিবারগুলির স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হত ও দুঃখদুর্দশা বেড়ে গিয়েছিল ।
(গ) গ্রাম বা মহলের যেসব কৃষক সঠিক সময়ে রাজস্ব মেটাতে ব্যর্থ হত তাদের সেই বকেয়া রাজস্ব গ্রামের অন্যান্যদের মেটাতে হত, না হলে গ্রামের জমি হাতছাড়া হয়ে যেত ।
(ঘ) কৃষকরা রাজস্ব ঠিকমতো না দিতে পারলে গ্রামপ্রধান কৃষকদের ওপর অকথ্য অত্যাচার চালাতো ।
(ঙ) এই ব্যবস্থা অনুযায়ী, খরার সময়েও কৃষকদের রাজস্ব দিতে হত।
মূল্যায়ন :
এই ব্যবস্থায় মানুষের আর্থিক উন্নয়ন সম্ভব ছিল না। রাষ্ট্রের চাহিদার ওপরেও কোনও সীমারেখা টানা হয় নি। অতিরিক্ত কঠোরতার ফলে এই ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে ।
আরো পড়ুন – চুঁইয়ে পড়া নীতি বলতে কি বোঝো
FAQs On – মহলওয়ারি বন্দোবস্ত
মহল কথাটির একটা অর্থ কয়েকটি গ্রামের সমষ্টি ৷ ইংরেজ আমলে যে ভূমিরাজস্ব ব্যাবস্থায় সরকার কয়েকটি গ্রামের বা মহলের রাজস্ব গ্রাম প্রধানের মাধ্যমে আদায় করতো তাকে মহলওয়ারি বন্দোবস্ত বলা হয় ।
মহলওয়ারি বন্দোবস্তের জনক বলা হয় হোল্ট ম্যাকেঞ্জিকে |
১৮২২ খ্রিস্টাব্দে উত্তর-পশ্চিম ভারতে মহলওয়ারি বন্দোবস্ত চালু করা হয় ।