চীনে ৪ঠা মে আন্দোলনের কারণ ও প্রভাব – আজকের পর্বে আমরা তোমাদের সাথে আলোচনা করলাম চীনে ৪ঠা মে আন্দোলনের কারণ ও প্রভাব নিয়ে ।
আরো পড়ুন – বক্সারের যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল
এই পৃষ্ঠায়
- 1 ভূমিকা :
- 2 চীনে ৪ঠা মে আন্দোলনের কারণ :
- 2.1 [ক] পরোক্ষ কারণ :
- 2.1.1 (১) প্রজাতান্ত্রিক সরকারের ব্যর্থতা :
- 2.1.2 (২) ইউয়ান-সি-কাই এর একনায়কতন্ত্র :
- 2.1.3 (৩) ইউয়ান-সি-কাই-এর নৃশংসতা :
- 2.1.4 (৪) কুয়ােমিনতাং দল নিষিদ্ধ:
- 2.1.5 (৫) জাপানের একুশ দফা দাবি:
- 2.1.6 (৬) একুশ দফা দাবির প্রতিবাদ:
- 2.1.7 (৭) ইউয়ান-এর গােপন চুক্তি:
- 2.1.8 (৮) জাতীয়তাবাদী বিভিন্ন শ্রেনীর উদ্ভব :
- 2.1 [ক] পরোক্ষ কারণ :
- 3 (খ) প্রত্যক্ষ কারণ:
- 4 চীনে ৪ঠা মে আন্দোলনের সূত্রপাত :
- 5 ৪ঠা মে আন্দোলনে চেন তু শিউ-এর নেতৃত্ব :
- 6 চীনে ৪ঠা মে আন্দোলনের প্রসার :
- 7 ৪ঠা মে আন্দোলনের দমননীতি :
- 8 চীনে ৪ঠা মে আন্দোলনের ফলাফল :
- 9 মূল্যায়ন :
- 10 FAQs On চীনে ৪ঠা মে আন্দোলনের কারণ ও প্রভাব
ভূমিকা :
১৯১৯ খ্রিঃ ৪ঠা মে, চিনের রাজধানী পিকিং এ কয়েক হাজার চিনা ছাত্র যে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি সংগঠিত করে তা অল্প সময়ের মধ্যেই এক বৃহৎ গনআন্দোলনের রূপ নেয়। এটি চিনের ইতিহাসে “৪ঠা মে আন্দোলন” বা “মে ফোর্থ আন্দোলন” নামে পরিচিত।
চীনে ৪ঠা মে আন্দোলনের কারণ :
চীনে ৪ঠা মে-এর আন্দোলনের কারণকে আমরা মূলত দুই ভাগে ভাগ করে আলোচনা করতে পারি । যথা – পরোক্ষ কারণ এবং প্রত্যক্ষ কারণ ।
[ক] পরোক্ষ কারণ :
(১) প্রজাতান্ত্রিক সরকারের ব্যর্থতা :
১৯১১ খ্রিঃ সান ইয়াৎ সেনের নেতৃত্বে প্রজাতান্ত্রিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে চিনে রাজতন্ত্র উচ্ছেদ করে প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
কিন্তু এই প্রজাতান্ত্রিক সরকার দেশের শান্তি শৃঙ্খলা, ঐক্য, সার্বভৌমত্ব কিছুই আনতে পারে নি। ফলে চীনের প্রজাতান্ত্রিক সরকার ব্যর্থতার সম্মুখীন হয় ।
(২) ইউয়ান-সি-কাই এর একনায়কতন্ত্র :
১৯১১ খ্রিঃ সান ইয়াৎ সেন প্রজাতান্ত্রিক বিপ্লবের ডাক দিলে সুচতুর মাঞ্চু রাজবংশ সাংবিধানিক সংস্কারের প্রস্তাব দেন এবং সেনাপতি ইউয়ান-সি-কাই কে রাষ্ট্রপতি ঘোষনা করেন।
এর ফলে চিন দুটি বিরোধী ক্ষমতার ভরকেন্দ্রে পরিনত হয়। এই অবস্থায় গৃহযুদ্ধ এড়াতে সান ইয়াৎ সেন সমঝোতায় আসেন।
ঠিক হয়, ইউয়েন-সি-কাই মাঞ্চু রাজবংশের অবসান ঘটিয়ে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবেন। বিনিময়ে তিনি এই প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি হবেন।
কিন্তু ইউয়েন-সি-কাই ক্ষমতা লাভ করার পর সামরিক একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন।
(৩) ইউয়ান-সি-কাই-এর নৃশংসতা :
ইউয়ান সি কাই ক্ষমতা লাভের পর নানা নৃশংস ও দেশবিরোধী নীতি গ্রহণ করেন –
- তিনি নিজেকে সম্রাট হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখতে থাকেন,
- এইজন্য বিদেশী শক্তি গুলিকে গোপনে নানা সুযোগ সুবিধা দিতে থাকেন,
- এর বিরুদ্ধে সান ইয়াৎ সেন “দ্বিতীয় বিপ্লবের” ডাক দিলে ইউয়ান বিরোধী শক্তির কন্ঠরোধ করেন,
- তিনি সেনাবাহিনী দিয়ে বিপ্লবীদের দমন ও হত্যা করেন,
- চিনে কুয়োমিনতাং দলকে নিষিদ্ধ করেন।
এই ঘটনা গুলিতে চিনা জনসাধারণের মনে গভীর হতাশা আর জাতীয়তাবাদী ক্ষোভের সঞ্চার হয়।
(৪) কুয়ােমিনতাং দল নিষিদ্ধ:
চিনে গৃহযুদ্ধ এড়িয়ে শান্তি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সান-ইয়াৎ-সেন রাষ্ট্রপতির পদ ছেড়েছিলেন।
কিন্তু এই উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ ব্যর্থ হওয়ায় তিনি ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে ইউয়ান এর বিরুদ্ধে ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’-এর ডাক দেন।
কিন্তু কয়েক মাস যুদ্ধ চলার পর ইউয়ানের বাহিনী বিপ্লবীদের দমন করতে সক্ষম হয়। ইউয়ান যুদ্ধে জয়লাভের পর কুয়োমিনতাং দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। এর ফলে চিনা জনগণের মনে হতাশার সৃষ্টি হয়।
(৫) জাপানের একুশ দফা দাবি:
১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জাপান চিনের শান্টুং প্রদেশে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে।
এরপর সমগ্র চিনকে নিজেদের উপনিবেশে পরিণত করার উদ্দেশ্যে ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জানুয়ারি জাপান চিনের কাছে ‘একুশ দফা দাবি’ পেশ করে এবং এই দাবিগুলি পূরণের জন্য চিনকে মাত্র ৪৮ ঘণ্টা সময় দেয়।
বলা বাহুল্য, নিজ সার্বভৌমত্ব বিসর্জন দিয়ে কোনাে স্বাধীন রাষ্ট্রের পক্ষেই এরূপ দাবি মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। চিনা জাতীয়তাবাদীরা ধ্বনি তােলে যে, ‘দেশকে বাঁচাও’।
(৬) একুশ দফা দাবির প্রতিবাদ:
চিনের সাধারণ মানুষ জাপানের একুশ দফা দাবির বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়ে। এর বিরােধিতায় চিনে ‘নাগরিকদের দেশপ্রেমী সমিতি’ গড়ে ওঠে (১৯১৫ খ্রি.)।
সাংহাই শহরে প্রতিষ্ঠিত ‘জাপ-বিরােধী কমরেডদের জাতীয় সমিতি’ চিনে জাপানি পণ্য বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয়।
চিনের অন্যান্য শহরেও এই বয়কট আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। একুশ দফা দাবির বিরুদ্ধে আমেরিকায় পাঠরত চিনের ছাত্রদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
(৭) ইউয়ান-এর গােপন চুক্তি:
চিন সাধারণতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি ইউয়ান-সি-কাই চিনের সম্রাট পদ লাভে অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন। নিজের ব্যক্তিস্বার্থ সিদ্ধি করার উদ্দেশ্যে তিনি জাপানের সঙ্গে এক গােপন চুক্তি সম্পাদন করেন।
এর দ্বারা তিনি জাপানের দাবিগুলি মেনে নিয়ে চিনে জাপানের উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করে দেন।
ইতিমধ্যে তিনি ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারি চিনের সম্রাট’ পদে অভিষিক্ত হবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। জাপানের চাপে ইউয়ান সরকার বয়কট আন্দোলন প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়। এসব ঘটনার বিরুদ্ধে চিনে তীব্র জনরােষের সৃষ্টি হয়।
(৮) জাতীয়তাবাদী বিভিন্ন শ্রেনীর উদ্ভব :
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর চিনে জাতীয়তাবাদী বিভিন্ন শ্রেণীর উদ্ভব হয়। যেমন –
(ক) বনিক ও শিল্পপতি :
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে চিনে বিদেশী পন্যের প্রবেশ কমে যায়। এই সুযোগে চিনে জাতীয় শিল্পের কিছুটা বিকাশ ঘটে।
কিন্তু যুদ্ধ শেষ হলে পুনরায় বিদেশী পন্য চিনে ঢুকতে আরম্ভ করলে দেশীয় শিল্প গুলি মার খেতে থাকে।
এই সময় তাই অর্থনৈতিক ক্ষোভ থেকে চিনের দেশীয় শিল্পোদ্যোগী ও বনিকদের মধ্যে একটি শ্রেনী সচেতনতা ও জাতীয়তাবাদী চেতনার সঞ্চার ঘটে।
এই জাতীয়তাবাদী অর্থনৈতিক ক্ষোভের জন্যই তারা পরবর্তীকালে মে ফোর্থ আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলো।
(খ) শিল্প শ্রমিকের উদ্ভব :
সামন্ততান্ত্রিক ও ঔপনিবেশিক শোষনের ফলে চিনের সমাজ ব্যবস্থায় একটি আমূল পরিবর্তন আসে। গ্রামীন অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়ে।
এই অবস্থায় অগনিত মানুষ শহরে ভীড় করে এবং সেখানে শিল্প শ্রমিক হিসাবে কর্মসংস্থান শুরু করে। এই ভাবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় চিনে ২০ লক্ষ শ্রমিকের আত্মপ্রকাশ ঘটে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর দেশীয় শিল্প গুলি মার খেলে এদের জীবিকা বিপন্ন হয়ে পড়ে। নানা আর্থিক দূর্দশায় এরা বিপর্যস্ত হয়ে পড়লে এদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী ক্ষোভের বিস্ফোরন ঘটে। এই ক্ষোভের কারনেই তারা ৪ঠা মে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলো।
(গ) জাতীয়তাবাদী ছাত্র ও শিক্ষিত শ্রেনীর উদ্ভব :
চিনে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারের ফলে একটি সচেতন শিক্ষিত শ্রেনীর জন্ম হয়। সাম্রাজ্যবাদী শোষন, জাতীয়তাবাদী বঞ্চনা ও গনতান্ত্রিক ধ্যান ধারনা সম্পর্কে এদের স্পষ্ট ধারনা ছিলো। এরাই –
- আন্দোলন প্রথম শুরু করেছিলেন,
- আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং
- অন্যদের আন্দোলনে এগিয়ে আসতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন।
এই সব শিক্ষিত মানুষদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সাই ইউয়ান পেই। তিনি পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়ে ছাত্রদের স্বাধীনতা ও জাতীয়তাবোধের মন্ত্রে দীক্ষিত করেন।
১৯১৭ খ্রিঃ মধ্যে হু শি, চেন তু শিউ, লি তা চাও এর মতো ব্যক্তিরা পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে চিনা জাতীয়তাবাদের কেন্দ্র ভূমিতে পরিনত করেন।
এই জন্য দেখা যায় ৪ ঠা মে আন্দোলনের ডাক –
- পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই প্রথম দেন,
- তারাই নেতৃত্ব দেন,
- আন্দোলনকে তারাই এগিয়ে নিয়ে যান,
- দেশবাসীকে আন্দোলনে সামিল হতে আহ্বান করেন।
(খ) প্রত্যক্ষ কারণ:
চিন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় মিত্রপক্ষে যােগ দেয়। চিন আশা করেছিল যে, এর ফলে মিত্রপক্ষ যুদ্ধে জয়লাভ করলে বিদেশিদের কাছ থেকে চিন তার রাজ্যাংশগুলি ফেরত পাবে এবং বিদেশিদের সঙ্গে অসম চুক্তিগুলি বাতিল হবে।
যুদ্ধাবসানের পর চিন প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে (১৯১৯ খ্রি.) ‘একুশ দফা দাবি সহ সব অসম চুক্তি এবং শান্টুং প্রদেশে জাপানি কর্তৃত্ব বাতিলের দাবি জানায়।
কিন্তু ইউরােপীয় কর্তৃপক্ষ চিনের আবেদনে কর্ণপাত করেননি কারণ তাদের মতে, চিনের দাবিগুলি ছিল ‘আলােচনা বহির্ভূত’ বিষয় । ফলে চিনের প্রতিনিধিরা শূন্য হাতে দেশে ফিরে আসেন।
চীনে ৪ঠা মে আন্দোলনের সূত্রপাত :
বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে চিনের সর্বত্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে মিত্রশক্তি চিনের প্রতি অবিচার করলে চিনের মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটতে বাধ্য হন ।
৪ঠা মে আন্দোলনে চেন তু শিউ-এর নেতৃত্ব :
এই পরিস্থিতিতে চিনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চেন-তু শিউ-এর ডাকে জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ হাজার হাজার ছাত্র ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ঠা মে পিকিং-এর তিয়েন-আন-মেন স্কোয়ার এ সমবেত হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
তারা চিন থেকে বিদেশি শক্তির অপসারণ, সমস্ত অসম চুক্তি বাতিল, দেশদ্রোহীদের শাস্তি প্রভৃতি দাবি করে এবং জাপানি পণ্য বয়কটের আহ্বান জানায়।
বেশ কিছু ছাত্রকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলে পিকিং-এর ছাত্ররা ধর্মঘটে শামিল হয়।
চীনে ৪ঠা মে আন্দোলনের প্রসার :
এরপর ৪ মে-র আন্দোলন ক্রমে চিনের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। জাপানে পাঠরত চিনা ছাত্ররাও টোকিওর রাজপথে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তাদের জনপ্রিয় শ্লোগান ছিল ‘জিউগুয়ো’ অর্থাৎ দেশ বাঁচাও।
৪ঠা মে আন্দোলনের দমননীতি :
চিনের প্রজাতন্ত্রী সরকার প্রথমে দমননীতির দ্বারা আন্দোলন ভেঙে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। ৩রা জুন সরকার তিন শতাধিক ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে এবং সব ধরনের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
ফলে ছাত্র আন্দোলন দাবানলের মতো চিনের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। এবার শ্রমিক শ্রেণি আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়ে।
বিভিন্ন শিল্প-কারখানা ও অফিস-আদালতে ধর্মঘট শুরু হয়। ক্যান্টন, টিয়েনসিন, সাংহাই প্রভৃতি বড়ো শহরের বণিক সংগঠনগুলি সরকারি দমননীতির তীব্র প্রতিবাদ করে ।
চীনে ৪ঠা মে আন্দোলনের ফলাফল :
৪ঠা মে আন্দোলন কর্মকাণ্ডের ব্যাপকতা ও গভীরতার বিচার চীনের ইতিহাসে এক নজির বিহীন ঘটনা। চীনের রাজনৈতিক,সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে এই আন্দোলনের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
(ক) দেশাত্মবোধ ও আধুনিকতার উদ্ভব :
৪ ঠা মে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে চীনে আধুনিকতা, দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধের সূচনা হয় । এই আন্দোলন চীনে নবজাগরণের পথ সুগম করে।
(খ) সরকারের নতি স্বীকার :
ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের চাপে চিন সরকার নতি স্বীকারে বাধ্য হয়। আন্দোলনের চাপে সরকার বাধ্য হয়ে ধৃত ছাত্রদের ছেড়ে দেয় ও ভার্সাই সন্ধিপত্রে স্বাক্ষর করবে না বলে ঘোষণা করে (২৮ জুন, ১৯১৯ খ্রি.)।
(গ) কমিউনিষ্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা :
এই আন্দোলনের ফলেই চিনে কুয়োমিনতাং দলের পুনর্গঠন হয় এবং কমিউনিস্ট পার্টির উত্থান ঘটে। জঁ-শ্যেনো বলেন যে, এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে চিনের শ্রমিক শ্রেণি রাজনৈতিক সংগ্রামের আঙিনায় প্রবেশ করে।
(ঘ) ব্যাপকতা :
৪ঠা মে আন্দোলনের প্রভাব ছিল চীনের সর্বত্র এবং এর গণঅভ্যুথান ছিল ব্যাপক।
(ঙ) সাংস্কৃতিক অগ্রগতি :
চীনের বুদ্ধিজীবীদের কাছে এই আন্দোলনে এক নতুন যুগের সূচনা করে। চীনে বহু বই পত্র ও পত্র পত্রিকা প্রকাশিত হলে সাংস্কৃতিক অগ্রগতি ঘটে। চীনে নতুন সংস্কৃতিকে সবাই স্বাগত জানায় ।
(চ) ঐতিহাসিক মতামত :
চীনা ঐতিহাসিক হো-কান-চি এর মতে, “৪ঠা মে এর আন্দোলন নতুন বিপ্লবী ঝড়ের জন্ম দেয় এবং চীনের বিপ্লবকে এক নতুন স্তরে পৌঁছে দেয়।”
মূল্যায়ন :
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, ৪ঠা মে আন্দোলনের মাধ্যমে চীনের জাতীয় ও শ্রেণী স্বার্থে প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়। আধুনিক চীনের ইতিহাসে ৪ঠা মে আন্দোলন ছিল এক উল্লেখযোগ্য দিক। পরবর্তীকালে রাজনৈতিক ইতিহাসের গতিধারা এই আন্দোলনের মাধ্যমে নির্দেশিত হয়েছিল।
আরো পড়ুন – হরপ্পা সভ্যতার নগর পরিকল্পনার বিবরণ দাও
ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন – www.youtube.com/@DRMonojog
জিকে সংক্রান্ত ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন – www.youtube.com/@DRMonojogGK
পিডিএফ পেতে ভিজিট করুন আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল – DR Monojog63
আরো জানতে পড়ুন – বিসমার্কের রক্ত ও লৌহ নীতি কি
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ ও ফলাফল
- জোলভেরাইন কি
- ভারতীয় সংবিধানের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো
- উদারনীতিবাদের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো
- ঘেটো কী
FAQs On চীনে ৪ঠা মে আন্দোলনের কারণ ও প্রভাব
৪ঠা মে আন্দোলন সংঘটিত হয় চীনে।
৪ঠা মে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন চেন তু শিউ।
৪ঠা মে আন্দোলনের শ্লোগান ছিল জিউগুয়ো অর্থাৎ দেশ বাঁচাও।
চিনে গৃহযুদ্ধ এড়াতে রাষ্ট্রপতি পদ ত্যাগ করেন সান ইয়াৎ সেন।
চিনে ৪ঠা মে আন্দোলনের পূর্বে সামরিক একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন ইউয়ান সি কাই।