মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা টীকা লেখ – ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ২০ শে মার্চ ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযােগে ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৩৩ জন কমিউনিস্ট নেতাকে গ্রেপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে যে মামলা রুজু করা হয়, তা ইতিহাসে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত ।
এই পৃষ্ঠায়
মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা টীকা লেখ :
আরো পড়ুন – বিনয় বাদল দীনেশ স্মরণীয় কেন
মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা :
ভূমিকা :
১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ২০ শে মার্চ ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযােগে ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৩৩ জন কমিউনিস্ট নেতাকে গ্রেপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে যে মামলা রুজু করা হয়, তা ইতিহাসে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত ।
প্রেক্ষাপট :
মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার প্রেক্ষাপট নিম্নে আলোচিত হল –
(ক) শ্রমিক বিক্ষোভ :
ভারতের বিভিন্ন কলকারখানায় কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে শ্রমিক অসন্তোষ বাড়তে থাকে। এসময় প্রধানত বাংলার পাটকল এবং আহমেদাবাদের সুতাকল শ্রমিকদের নিয়ে গড়ে ওঠা বামপন্থী শ্রমিক সংগঠনগুলি ধর্মঘট চালায় ।
শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি প্রদান , কাজের সময় হ্রাস , বিনা ক্ষতিপুরণে জমিদারি প্রথার বিলোপ , সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও বাক্স্বাধীনতা , ট্রেড ইউনিয়নের স্বাধীনতা প্রভৃতির দাবিতে বিভিন্ন স্থানে শ্রমিক আন্দোলন শুরু হয়।
আন্দোলনের প্রসার সরকারকে চিন্তায় ফেলে দেয় ।
(খ) কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা :
ভারতের কলকাতা , মাদ্রাজ , বোম্বাই ও লাহোরে কমিউনিস্ট গোষ্ঠী গড়ে উঠলে শ্রমিক ও মজুরদের মধ্যে এই দল প্রভাব বিস্তার করতে থাকে ।
(গ) পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি :
১৯২৮ খ্রি: জাতীয় কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে প্রায় পঁচিশ হাজার শ্রমিক যোগ দেয়। এখানে তারা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি তোলে ।
(ঘ) হুইটলি কমিশন :
ক্রমাগত শ্রমিক অসন্তোষের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার 1929 সালে হুইটলি কমিশন নিয়োগ করে কিন্তু শ্রমিক শ্রেণি এই কমিশন বর্জন করে।
(ঙ) শ্রমিক বিরোধী বিল :
লর্ড আরউইন তাঁর জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগ করে শিল্পবিরোধ বিল ও জননিরাপত্তা বিল পাশ করে। এই আইনের বিরুদ্ধে কমিউনিস্টরা সোচ্চার হলে সরকার আতঙ্কিত হয়ে পড়ে ।
মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা :
কমিউনিস্ট পার্টির কার্যকলাপ ও তাদের নেতৃত্বে শ্রমিক আন্দোলনকে স্তব্ধ করার জন্য ব্রিটিশ সরকার ১৯২৯ সালে ৩৩ জন কমিউনিস্ট শ্রমিক নেতাকে গ্রেফতার করে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এই মামলাই ইতিহাসে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত।
মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার পরিণতি :
১৯২৯ থেকে ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত চলা এই মামলা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে আরো একটা নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছিল ।
(ক) মামলার রায় :
মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় মােট ৩৩ জন শ্রমিক নেতার বিরুদ্ধে অভিযােগ আনা হয় । মামলার রায়ে কমিউনিস্ট দলের সমস্ত প্রচার কাজ নিষিদ্ধ বলে ঘােষণা করা হয় ।
এই মামলায় যেসব নেতার দীর্ঘ কারাবাস হয়েছিল তার মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিলেন মুজাফফর আহমেদ , শিবনাথ ব্যানার্জি , ধরণী গােস্বামী , অমৃত ডাঙ্গে , পি. সি. যােশি , ফিলিপ স্প্র্যাট , গঙ্গাধর অধিকারী প্রমুখ ।
(খ) গান্ধিজির ভূমিকা :
কংগ্রেস নেতা গান্ধীজি কমিউনিস্টদের সমর্থন করেন এবং জেলে গিয়ে তাঁদের অভ্যর্থনা জানিয়ে আসেন ।
(গ) কমিউনিস্ট পার্টির ওপর নিষেধাজ্ঞা :
1934 সালে শ্রমিক আন্দোলনে কমিউনিস্ট পার্টির প্রভাব লক্ষ্য করে সরকার কমিউনিস্ট পার্টি ও তার সকল শাখা সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।
(ঘ) বামপন্থী আদর্শ :
মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা ভারতে বামপন্থার প্রসারে পরােক্ষভাবে সহায়তা করে ।
জেলে বন্দি বামপন্থী নেতাদের আদর্শ ও বক্তব্য সংবাদপত্রের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে পৌছােলে সমগ্র ভারতে সমাজতন্ত্রের আদর্শ দ্রুত প্রসার লাভ করে।
(ঙ) RTUC গঠন :
মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার ফলে AITUC থেকে বামপন্থী নেতারা বিচ্ছিন্ন হয়ে রেড ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস (RTUC ) গঠন করে ।
মূল্যায়ন :
দীর্ঘ সাড়ে চার বছর মামলা চলার পর মােট ২৭ জন বন্দির বিভিন্ন মেয়াদে অত্যধিক কঠোর দণ্ডাদেশ হয়। ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের ৩ রা আগস্ট এই মামলা সমাপ্ত হয় ।
কিন্তু এই ষড়যন্ত্র মামলা কমিউনিস্টদের মনোবল ভাঙতে পারেনি । পরোক্ষভাবে এই মামলা ভারতে বামপন্থার প্রসারে সহায়ক হয়েছিল ।
আরো পড়ুন – ইলবার্ট বিল বিতর্ক কি
FAQs On – মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা টীকা লেখ
মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত দুজন বিদেশির নাম ফিলিপ স্প্যাট ও বেন ব্র্যাডলি ।
মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় ৩৩ জন কমিউনিস্ট নেতার উপর অভিযোগ আনা হয়েছিল ।
মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় ৩ জন ব্রিটিশের উপর অভিযোগ আনা হয়েছিল ।
মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা শুরু হয় ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ।
মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় দীর্ঘমেয়াদী কারাদণ্ড হয় – মুজাফ্ফর আহমেদ, শওকত উসমানি, শিবনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, কে. এন. জোগেলকর, পি. সি. যোশি, এস. এ. ডাঙ্গে, ফিলিপ স্প্র্যাট প্রমুখের ।
মিরাট ষড়যন্ত্র মামলাকে জুডিশিয়াল স্ক্যান্ডাল বলা হয় ।
😳