পলাশীর লুণ্ঠন বলতে কী বোঝো – আজকের পর্বে আমরা তোমাদের সাথে আলোচনা করলাম ইতিহাসের খুবই গুরুত্বপূর্ণ টপিক পলাশীর লুণ্ঠন নিয়ে ।
এই পৃষ্ঠায়
পলাশীর লুণ্ঠন বলতে কী বোঝো :
আরো পড়ুন – পলাশীর যুদ্ধের কারণ আলোচনা করো
পলাশীর লুণ্ঠন কী :
ভূমিকা :
১৭৫৭ খ্রি: সংঘটিত পলাশীর যুদ্ধে জয়লাভের পর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের সম্পদ দু-হাত ভরে ভারত থেকে নিজের দেশ ইংল্যান্ডে পাচার করেছিল । সম্পদ লুণ্ঠনের এই ঘটনাকে ঐতিহাসিক ব্রুকস অ্যাডামস পলাশীর লুণ্ঠন বলে অভিহিত করেছেন।
পলাশীর লুন্ঠনের ধারা :
পলাশীর লুণ্ঠন ঘটেছিল মূলত দুটি ধারায় ।
- (ক) প্রথমটি হল, বেসরকারিভাবে কোম্পানির কর্মচারীদের মাধ্যমে ।
- (খ) দ্বিতীয়টি হল, কোম্পানির বাণিজ্যনীতি , অর্থনীতি ও রাজস্বনীতির মাধ্যমে ।
এই দুই পদ্ধতিতে প্রচুর পরিমাণ অর্থ ও সম্পদ ভারত থেকে ইল্যান্ডে পাচার করা হয়েছিল ।
পলাশীর লুন্ঠনের বর্ণনা :
রবার্ট ক্লাইভ ছিলেন পলাশীর লুণ্ঠনের পথপ্রদর্শক । এসময়ে কোম্পানির কর্তৃপক্ষ ও কর্মচারীরা প্রায় ৫০ কোটি টাকা ভারত থেকে নিজেদের দেশ ইংল্যান্ডে পাঠিয়েছিল ।
১৭৫৭ খ্রি: সংঘটিত পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জয়লাভের পর কোম্পানি নবাব কেনাবেচার খেলায় নেমেছিল ।
পূর্বপ্রতিশ্রুতি মতাে মিরজাফরকে সিংহাসনে বসিয়ে কোম্পানির কর্মচারীরা পেয়েছিলেন প্রায় দেড় কোটি টাকা । ক্লাইভ নিজে পেয়েছিলেন ২৭ লক্ষ টাকা নগদ এবং উপটৌকন হিসেবে পেয়েছিলেন বার্ষিক ৩০ হাজার পাউন্ড বিশিষ্ট একটি জায়গির ।
এরপর রেজা খাঁকে নায়েব-নাজিম পদ প্রদানের বিনিময়ে কোম্পানি ৪ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকা উপঢৌকন গ্রহণ করে ।
পরবর্তীতে মীরজাফরের জামাতা মিরকাশিমকে বাংলার মসনদে বসিয়ে গভর্নর ভ্যান্সিটার্টসহ কলকাতা কাউন্সিলের সদস্যরা পেয়েছিলেন ৩২ লক্ষ ৭৮ হাজার টাকা ।
এরও পরবর্তীতে মিরজাফরের ছেলে নজম-উদ-দৌলাকে সিংহাসনে বসিয়ে কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মচারীরা ৬২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ভেট পেয়েছিলেন ।
পলাশীর লুণ্ঠনের ঠগের নায়ক রবার্ট ক্লাইভ , জনস্টন , সিনিয়র , সাইকস প্রমুখ শুন্যহাতে ভারতে এসে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে নিজেদের দেশ ইংল্যান্ডে ফিরেছিলেন ।
বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের মতামত :
পলাশীর যুদ্ধের পর থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী জুড়ে ভারত থেকে ঠিক কতটা পরিমাণ অর্থ ও সম্পদ ইল্যান্ডে পাচার করা হয়েছিল তার সঠিক পরিমাণ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে ।
- (ক) যােগেশচন্দ্র সিংহের মতে – এই নির্গমনের পরিমাণ ৩৮ কোটি ৪ লক্ষ পাউন্ড ।
- (খ) স্যার পি. জে. গ্রিফিথের মতে – ১৭৮০ – ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এই পরিমাণ ৩০ কোটি পাউন্ড ।
- (গ) ফার্বারের মতে – ১৭৮৩ – ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এর পরিমাণ ১৮ লক্ষ পাউড ।
- (ঘ) মার্শালের মতে এর পরিমাণ বার্ষিক ৫ লক্ষ পাউন্ড ।
- (ঙ) ড. অমলেশ ত্রিপাঠীর মতে – ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে বাৎসরিক গড়ে ২৫–৩০ লক্ষ টাকা বাংলা থেকে নির্গমন হয় ।
পলাশীর লুণ্ঠনের ফলাফল :
পলাশীর লুন্ঠনের ফলাফল বা গুরুত্বগুলি হল নিম্নরূপ –
(ক) প্রশাসনিক খরচ :
ভারত থেকে লুণ্ঠিত অর্থের সাহায্যেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে তাদের প্রশাসনিক খরচ চালাত ।
(খ) সাম্রাজ্য স্থাপন :
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে তাদের যে সাম্রাজ্যের ভীত স্থাপন করেছিল তা ভারতের টাকা লুন্ঠন করেই ।
(গ) ইংল্যান্ডের শিল্পবিপ্লব :
মার্কসবাদী ঐতিহাসিক রজনী পামদত্ত লিখেছেন , ভারতের সম্পদ দিয়েই আঠারো শতকের দ্বিতীয়ার্থে আধুনিক ইংল্যান্ড গড়ে উঠেছিল । এদেশের পাচার করা অর্থকে কাজে লাগিয়ে শিল্পবিপ্লব ঘটিয়েছিল ইংল্যান্ড ।
মূল্যায়ন :
পলাশীর লুন্ঠনের মাধ্যমে ব্রিটিশরা ভারতের সম্পত্তি আত্মসাৎ করে নিজেদের দেশ ইংল্যান্ডে পাচার করেছিল ।তাই কার্ল মার্কস লিখেছেন – অ্যালকেমিস্টদের ( যারা কৃত্রিম সােনা তৈরি করতে পারে ) চেয়েও ধূর্ত এই প্রিয়পাত্ররা ( ইংরেজরা ) শূন্য থেকে সােনা তৈরি করতে পারত ।
আরো পড়ুন – বক্সারের যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল
ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন – www.youtube.com/@DRMonojog
জিকে সংক্রান্ত ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন – www.youtube.com/@DRMonojogGK
পিডিএফ পেতে ভিজিট করুন আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল – DR Monojog63
FAQs On – পলাশীর লুণ্ঠন বলতে কী বোঝো
১৭৫৭ খ্রি: সংঘটিত পলাশীর যুদ্ধে জয়লাভের পর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের সম্পদ দু-হাত ভরে ভারত থেকে নিজের দেশ ইংল্যান্ডে পাচার করেছিল । সম্পদ লুণ্ঠনের এই ঘটনাকে ঐতিহাসিক ব্রুকস অ্যাডামস পলাশীর লুণ্ঠন বলে অভিহিত করেছেন।
পলাশীর যুদ্ধ হয়েছিল ১৭৫৭ সালে ।