পরিবেশ রক্ষায় ছাত্র সমাজের ভূমিকা

পরিবেশ রক্ষায় ছাত্র সমাজের ভূমিকা – আজকের পর্বে আমরা তোমাদের সাথে আলোচনা করলাম পরিবেশ রক্ষায় ছাত্র সমাজের ভূমিকা নিয়ে ।

পরিবেশ রক্ষায় ছাত্র সমাজের ভূমিকা :

পরিবেশ রক্ষায় ছাত্র সমাজের ভূমিকা

আরো পড়ুন – বাংলার উৎসব প্রবন্ধ রচনা

পরিবেশ সুরক্ষায় ছাত্রসমাজের ভূমিকা :

“এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার”
—– সুকান্ত ভট্টাচার্য

ভূমিকা :

মাতৃজঠরে মানব শিশুর জন্ম ঘটলেও প্রকৃতপক্ষে তার জন্ম ঘটে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর। অন্ধকার মাতৃগর্ভ থেকে নানা পরিবেশে তার জীবনের বিকাশ ঘটতে থাকে।

পরিবেশ কথাটির অর্থ খুবই ব্যাপক এবং সুদুরপ্রসারী। পারিবারিক পরিবেশ, সামাজিক পরিবেশ, শিক্ষার পরিবেশ, জাতীয় সংস্কৃতির আদর্শ, সব মিলিয়ে যে এক অখণ্ড জীবনচেতনা তারই নাম হল পরিবেশ ।

মানুষের চরিত্র গঠনে আর তার ব্যক্তিত্বের বিকাশ ও চিত্রপ্রকর্ষের অভিব্যক্তিতে পরিবেশের বিরাট প্রভাব থাকে। বলতে গেলে পরিবেশই মানুষের জীবনের মুখ্য নিয়ন্তা।

ভিন্ন ভিন্ন ভৌগলিক বেষ্টনীতে এক একটি দেশের স্বতন্ত্র পরিবেশ তৈরি হয় এবং তা সে দেশের মানুষের চরিত্রের উপর বিশেষভাবে ক্রিয়াশীল।

আধুনিক যন্ত্রসভ্যতা ও পরিবেশের ভারসাম্য :

আধুনিক যন্ত্রসভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে । জীবনযাপনের সুখস্বাচ্ছন্দ্যের জন্য আমরা হাতের কাছে পেয়ে গেছি অজস্র উপত্রপ।

গড়ে উঠেছে বড়াে বড়াে কলকারখানা দ্রুতগামী যানবাহন থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক কম্পিউটার — সবই আজ আমাদের হাতে।

মানুষ জেনেছে পারমাণবিক মহাশক্তির রহস্য । কিন্তু এসবের জন্য আমরা অবহেলা করে ফেলেছি আমাদের পরিবেশকে ।

যত বেশি আমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতিতে উল্লসিত হয়েছি তার থেকে অনেক কম মনােযােগ দিয়েছি পরিবেশের ভারসাম্যের দিকে।

পরিবেশে ভারসাম্যের সংকট :

পরিবেশের প্রতি অমনোযোগিতার জন্য পরিবেশে দেখা দিয়েছে নানা প্রতিকূলতা । বায়ুতে, জলে, মাটিতে সর্বত্র মারাত্মক দূষণ ।

অজস্র যানবাহন আর কলকারখানা থেকে প্রতি মুহূর্তে বের হচ্ছে বিষাক্ত ধোঁয়া।

বনজঙ্গল কেটে নগরায়ণ করতে গিয়ে এবং শিল্পের প্রসার ঘটাতে গিয়ে কার্বন মনােক্সাইড, কার্বন ডাইঅক্সাইড ও সালফার ডাইঅক্সাইডের মতাে বিষাক্ত গ্যাসে ভরে গেছে বাতাস ।

রাসায়নিকসার, কীটনাশক এবং কলকারখানা থেকে যে বর্জ্য পদার্থ বের হচ্ছে,তা থেকে দূষিত হচ্ছে নদী, সমুদ্র ও ভূগর্ভের জল; দূষিত হচ্ছে মাটি। শব্দদানবতাে আজকের যুগের একটি বড়াে সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।

যানবাহনের শব্দ, বাজি ও মাইকের আওয়াজে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। এসবের সঙ্গে আছে পরমাণু বােমার বিস্ফোরণের ফলে ছড়িয়ে পড়া দূষণ ।

সবমিলিয়ে আমাদের পরিবেশ যে ভারসাম্যহীনতায় ভুগছে, তাতে দেখা দিচ্ছে অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি এবং নানা অসুখবিসুখ।

পরিবেশের ভারসাম্যরক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা :

সমস্যা যেমন আছে, সুতরাং তার প্রতিকারও চাই। এই প্রতিকারে পৃথিবীর সমস্ত স্তরের মানুষেরই ভূমিকা আছে।ছাত্রজীবনের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র পড়াশোনা ও পরীক্ষা পাশ করা নয়।

পড়াশোনার পাশাপাশি তাদের আরও নানা ধরনের সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। পরিবেশ সুরক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে,

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক স্বাভাবিক, সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশ উপহার দিতে পারে আমাদের এই নবীন প্রজন্ম ছাত্রসমাজই।

পরিবেশের ভারসাম্যরক্ষায় বৃক্ষরােপণ ও বনসংরক্ষণ খুবই জরুরি । বলা যায়,এই সমস্যা সমাধানের অন্যতম প্রধান উপায় ছাত্রছাত্রীরা বন-সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন মহলে দাবি জানাতে পারে।

তারা পরিকল্পিতভাবে রাস্তার ধারে, বিদ্যালয়ে কিংবা পােড়াে জমিতে বৃক্ষ রােপণ করতে পারে। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য তারা সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তােলার দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারে ।

জল ও বাতাসকে যথাসম্ভব বিশুদ্ধ রাখার জন্য মানুষকে পরিবেশের ভারসাম্যের সংকটের কথা বােঝানাের চেষ্টা করতে পারে ।

এর জন্য তারা আলােচনা সভা, পথনাটিকা প্রভৃতির আয়ােজন করতে পারে। কেন- যারা আজকের ছাত্রছাত্রী, ভবিষ্যতে তারাই হবে দেশের দায়িত্বশীল নাগরিক।

সুতরাং এখন থেকে তারা যদি সচেতন হয় ও সক্রিয় ভূমিকা নেয় তাহলে পরিবেশকে রক্ষা করা অসম্ভব হবে বলে মনে হয় না।

উপসংহার :

জীবনে সুস্থভাবে বাঁচার জন্য প্রয়োজন বিশুদ্ধ পরিবেশ। তাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের গভীর তাৎপর্য মণ্ডিত ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে ।

কারণ আজকের ছাত্র সমাজ, ভবিষ্যতের সচেতন দায়িত্বশীল নাগরিক। সে কারণে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় তাদের সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে। তাই ছাত্রসমাজ বর্তমান বিশ্বের মানুষের কাছে প্রত্যাশা করে –

“দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর” —–

আরো পড়ুন – বিজ্ঞান ও কুসংস্কার প্রবন্ধ রচনা

ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন – www.youtube.com/@DRMonojog

পিডিএফ পেতে ভিজিট করুন আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল – DR Monojog63

“পরিবেশ রক্ষায় ছাত্র সমাজের ভূমিকা”-এ 2-টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন