ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলী

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলী – আজকের পর্বে আমরা তোমাদের সাথে আলোচনা করলাম ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলী নিয়ে ।

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলী

আরো পড়ুন – ভারতের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলি

ভূমিকা :

ভারতের সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন প্রধানমন্ত্রী।শাসনব্যবস্থার প্রধান রাষ্ট্রপতি হলেও প্রকৃত ক্ষমতা ভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। একারণেই অধ্যাপক জোহারি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানকে “প্রধানমন্ত্রী পদের রাষ্ট্রপতি করণ” বলে অভিহিত করেছেন । আবার ব্রিটেনের ন্যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে “keystone of the cabinet arch” বলা হয়।

প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ পদ্ধতি :

  • সংবিধানের 75(1) নং ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী কে নিয়োগ করেন।তত্ত্বগতভাবে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী কে নিয়োগ করলেও বাস্তবে রাষ্ট্র্রপতির কোন “স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা” নেই।
  • লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বা নেত্রীকে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ করেন। কিন্তু লোকসভায় কোন দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারলে রাষ্ট্রপতি নিজের মন মত ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ করতে পারেন।
  • অবশ্য সে ক্ষেত্রেও ওই পদে নিযুক্ত ব্যক্তির প্রতি লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই লোকসভা ও রাজ্যসভার সদস্য হতে হয়।
  • পার্লামেন্টের কোন পক্ষের সদস্য নন এমন কোন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী পদে নিযুক্ত হলে তাকে ছয় মাসের মধ্যে পার্লামেন্টের সদস্য হতে হয়, অন্যথায় তিনি ওই পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারেন না।
  • প্রধানমন্ত্রীর কার্যকালের সাধারণ মেয়াদ 5 বছর।অবশ্য এই সময় কাল শেষ হওয়ার পূর্বে লোকসভা ভেঙ্গে দেওয়া হলে তার কার্যকালের মেয়াদ হ্রাস পায়।

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলী :

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলী গুলিকে নিম্নে আলোচনা করা হল –

(ক) মন্ত্রীসভা গঠনে ভূমিকা :

সংবিধান অনুসারে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়োগ করেন। সুতরাং,মন্ত্রিসভা গঠনে কার্যত প্রধানমন্ত্রী সর্বপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তবে মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়োগের সময় তাকে কয়েকটি বিষয়ের ওপর দৃষ্টি রাখতে হয় । যেমন –

  • (১) নিজের দলের নেতৃত্ব স্থানীয় ব্যক্তিরা যাতে মন্ত্রিসভায় স্থান পায় সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হয়
  • (২) সকল রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গুলি যাতে মন্ত্রিসভায় তাদের প্রতিনিধি প্রেরণ করতে পারে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হয়
  • (৩) মন্ত্রিসভায় তপশিলি জাতি ও অনুন্নত সম্প্রদায়গুলির প্রতিনিধি যাতে স্থান লাভ করতে পারে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হয়।

(খ) লোকসভার নেতা বা নেত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী :

  • (১) লোকসভার নেতা বা নেত্রী হলেন প্রধানমন্ত্রী। লোকসভার অধিবেশন কখন ডাকা হবে, কত দিন চলবে, কোন কোন বিষয়ের উপর আলোচনা চলবে সে সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী নিজে সিদ্ধান্ত নেন।
  • (২) অধিবেশন স্থগিত রাখা বা লোকসভা ভেঙে দেওয়ার ব্যাপারে রাষ্ট্রপতিকে তিনি পরামর্শ দিতে পারেন।
  • (৩) সরকারের প্রধান মুখপাত্র হিসেবে তিনি লোকসভায় সরকারি নীতি সমূহের ব্যাখ্যা প্রদান করেন।
  • (৪) সভায় বিতর্ক চলাকালে কোন মন্ত্রী কোনরূপ অসুবিধার সম্মুখীন হলে তাকে সাহায্য করার জন্য প্রধানমন্ত্রী এগিয়ে আসেন।
  • (৫) গুরুত্বপূর্ণ যেকোনো বিল পাস করানোর দায়িত্ব তাকেই বহন করতে হয়।
  • (৬) সংসদে বিরোধী দলগুলি সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার সম্পর্ক রেখে চলেন।
  • (৭)কেবল লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বা নেত্রী হিসেবে নয়, সমগ্র সভার নেতা বা নেত্রী হিসেবেই তাকে কাজ করতে হয়।

(গ) সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের বা জোটের নেতা :

  • (১) প্রধানমন্ত্রী লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের বা জোটের নেতা হিসেবে কাজ করেন। লোকসভার ভেতরে ও বাইরে তাঁকে দলের বা জোটের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রেখে চলতে হয়।
  • (২) দল বা জোটের ঐক্য এবং সংহতি অটুট রাখা তাঁর দায়িত্ব। দল বা জোটের দেওয়া প্রতিশ্রুতি সরকারি কাজকর্মের মাধ্যমে রূপায়ণের ব্যাপারে তাঁকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হয়। 

(ঘ) রাষ্ট্রপতির প্রধান পরামর্শদাতা :

  • (১) প্রধানমন্ত্রী হলেন রাষ্ট্রপতির প্রধান পরামর্শদাতা। প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমেই রাষ্ট্রপতি এবং মন্ত্রীসভার মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হয়।
  • (২) মন্ত্রীসভার যাবতীয় সিদ্ধান্ত সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর। 
  • (৩) তবে ভারতীয় সংবিধানে তত্ত্বগতভাবে যাই বলা হোক না কেন বাস্তবে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমেই যাবতীয় কার্য সম্পাদন করেন।
  • (৪) সংবিধানের 42 এবং 44 তম সংবিধান সংশোধনীর ফলে বর্তমানে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার পরামর্শ মানতে বাধ্য। ব্রিটেনের রাজা বা রানীর মতো তিনিও নিয়মতান্ত্রিক শাসক হিসেবে কাজ করে থাকেন।

(ঙ) পররাষ্ট্রনীতির রূপকার :

  • (১) প্রধানমন্ত্রী পররাষ্ট্রনীতির প্রধান রূপকার। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সদর্থক ভূমিকা অবলম্বনের প্রধান দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর।
  • (২) ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জহরলাল নেহেরুর আমল থেকেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলেন আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ভারতের প্রধান মুখপাত্র।
  • (৩) বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি ভারত-সফররত অন্যান্য রাষ্ট্রপ্রধানদের স্বাগত জানান এবং শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
  • (৪) কমনওয়েলথ সম্মেলন, জাতিপুঞ্জের শীর্ষ নেতাদের সম্মেলন, নির্জোট নেতাদের সম্মেলন এবং সার্ক বা আসিয়ানের মতো আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী তাঁর গুরুপ্তপূর্ণ বক্তব্য উপস্থাপন করেন। 

(চ) জাতির নেতা : 

  • (১) প্রধানমন্ত্রী সমগ্র জাতির নেতা, জনমানুষের অভিপ্রায় অনুধাবন ও জনমত উপলব্ধি করা এবং তা নিয়ন্ত্রন করা প্রধানমন্ত্রীর এক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
  • (২) প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিত্ব সত্যনিষ্ঠা, সাহসিকতা, জনপ্রিয়তা বিভিন্ন প্রচারের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। তার রাজনৈতিক কার্যকলাপ, ব্যক্তিত্ব এমনকি তাঁর চলাফেরা, পোশাক পরিচ্ছদ পর্যন্ত জনমনে কার্যকর প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে ।
  • (৩) রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক প্রভৃতি ব্যাপারে কোন সমস্যা সৃষ্টি হলে সেগুলির সমাধানের উপায় সম্পর্কে সরকারের মতামত জ্ঞাপন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সরকারের প্রতিষ্ঠার কথা জানিয়ে জনগণকে আশ্বস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

(ছ) নিয়োগ সংক্রান্ত ক্ষমতা :

  • (১) ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব কোনো নিয়োগ সংক্রান্ত ক্ষমতা না থাকলেও ভারতের গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে তিনি রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
  • (২) প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে রাষ্ট্রপতি ভারতের অ্যাটর্নি জেনারেল, মহাহিসাব নিয়ামক ও নিরীক্ষক, নির্বাচন কমিশনার প্রভৃতি বিশিষ্ট পদাধিকারীদের নিয়োগ করেন।

      (জ) আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভূমিকা :

      • (১) আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকেন । যে কোনো আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ভারতে প্রধানমন্ত্রীকেই দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে হয়,।
      • (২) দেশে পররাষ্ট্রনীতি ব্যাখ্যা করার দায়িত্ব থাকে প্রধানমন্ত্রীর হাতে । এছাড়া বিদেশি রাষ্ট্র প্রধানদের তিনি ভারতবাসীর পক্ষ থেকে স্বাগত জানান, শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

      মূল্যায়ন :

      পরিশেষে বলা যায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রীই হলেন প্রকৃত শাসক । আবার, লোকসভায় তার দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতার উপরেও তার ভূমিকা অনেকটা নির্ভর করে। লোকসভায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হলে মন্ত্রিপরিষদ ও ক্যাবিনেটে তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত কিন্তু জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রীকে শরিকদের মন জুগিয়ে চলতে হয় ।

      আরো পড়ুন – ভারতীয় পার্লামেন্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলী

      ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন – www.youtube.com/@DRMonojog

      জিকে সংক্রান্ত ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন – www.youtube.com/@DRMonojogGK

      পিডিএফ পেতে ভিজিট করুন আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল – @drmonojog63

      আরো জানতে পড়ুন –

      FAQs On ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলী

      ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কে ?

      ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ।

      ভারতের প্রধানমন্ত্রী কত বছরের জন্য নিযুক্ত হন ?

      ভারতের প্রধানমন্ত্রী ৫ বছরের জন্য নিযুক্ত হন ।

      প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হতে হলে কত বছর বয়সী হতে হয় ?

      প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হতে হলে ৩৫ বছর বয়সী হতে হয় ।

      মন্তব্য করুন