প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব কী – ১৮১৩ সালের সনদ আইনে ভারতীয়দের শিক্ষার জন্য বার্ষিক ১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়। এই টাকা কোন খাতে ব্যয় করা হবে তা নিয়ে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যবাদীদের মধ্যে এক বিতর্ক শুরু হয় যা ইতিহাসে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব নামে পরিচিত।
এই পৃষ্ঠায়
প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব কী :
আরো পড়ুন – মেকলে মিনিট কি
ভূমিকা :
১৮১৩ সালের সনদ আইনে ভারতীয়দের শিক্ষার জন্য বার্ষিক ১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়।
এই টাকা কোন খাতে ব্যয় করা হবে তা নিয়ে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যবাদীদের মধ্যে এক বিতর্ক শুরু হয় যা ইতিহাসে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব নামে পরিচিত।
প্রাচ্যবাদী :
যে সমস্ত ব্যক্তি ভারতে প্রাচ্য শিক্ষাকে সমর্থন করেছিল তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ওয়ারেন হেস্টিংস, কোলব্রুক ,হেনরি প্রিন্সেস , উইলিয়াম জোন্স প্রমুখ ।
এরা ইতিহাসে প্রাচ্যবাদী বা ওরিয়েন্টালিস্ট নামে পরিচিত ।
এদের মতে প্রাচ্যশিক্ষাই হলো প্রকৃত শিক্ষা ।কারণ এদেশের ঐতিহ্য ওসংস্কৃতির সঙ্গে এই শিক্ষা জড়িত ।
তাই এর উন্নতির জন্যে সরকারি টাকা বরাদ্দ করা উচিত ।
পাশ্চাত্যবাদী :
যে সমস্ত ব্যক্তি ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের জন্য মত প্রকাশ করেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন টমাস ব্যাবিংটন মেকলে , আলেকজান্ডার ডাফ , সন্ডার্স, কোলভিল , চার্লস গ্রান্ট , ডেভিড হেয়ার প্রমূখ ।
এরা ইতিহাসে পাশ্চাত্যবাদী বা অ্যাংলিসিস্ট নামে পরিচিত ।
এদের মতে ইংরেজি ভাষা হল আন্তর্জাতিক ভাষা ।এই ভাষায় রচিত সাহিত্য অতি সমৃদ্ধ এবং তা ছাত্রদের চাকরি পাওয়ার উপযোগী ।
ভবিষ্যতে এই ভাষা এদেশের আঞ্চলিক ভাষাগুলিকে সমৃদ্ধ করবে ।তাই ইংরেজি শিক্ষার জন্যই সরকারি টাকা বরাদ্দ করা উচিত ।
জনশিক্ষা কমিটি গঠন :
দেশীয় শিক্ষার জন্যে প্রাচ্যবাদীগণ এবং ইংরেজি শিক্ষার জন্যে পাশ্চাত্যবাদীগণ এই টাকা দাবি করলে যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় তা ইতিহাসে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যবাদী দ্বন্দ্ব নাম পরিচিত ।এই অবস্থায় সরকার শিক্ষাখাতে অর্থব্যয় বন্ধ করে দেয় এবং এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব দেয় একটি কমিটির উপর ,যার নাম ছিল জেনারেল কমিটি অফ পাবলিক ইন্সট্রাকশন ।প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিক্ষাবিদদের নিয়ে এই কমিটি গঠিত হয় ।
রামমোহনের স্মারকলিপি :
প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দ্বন্দ্বের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বরাদ্দ ১ লক্ষ টাকায় একটি সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হলে রাজা রামমোহন রায় বড়লাট লর্ড আর্মহার্স্টকে একটি পত্র লেখেন ।
এতে সাস্কৃত শিক্ষার পরিবর্তে ইংরেজি শিক্ষা চালু করার কথা উল্লেখ করা হয় ।
মেকলে মিনিট :
১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের আইন সচিব টমাস ব্যাবিংটন মেকলে একটি বিখ্যাত প্রস্তাব পেশ করেন । যা ইতিহাসে মেকলে মিনিটস বা মেকলে প্রস্তাব নামে পরিচিত । এতে বলা হয় —
(ক) প্রাচ্য সভ্যতা ও শিক্ষা দুর্নীতিগ্রস্ত ,নিকৃষ্ট এবং আধুনিক শিক্ষার পরিপন্থী ।
(খ) পাশ্চাত্য শিক্ষা হল বৈজ্ঞানিক , যুক্তিনির্ভর ও আধুনিক ।
(গ) শিক্ষা বিস্তারের জন্য ক্রমনিম্ন পরিস্রুত নীতি গ্রহণ করা উচিত ।
(ঘ) তিনি আরও বলেন , ইউরোপের একটি ভালো লাইব্রেরির এক তাক বই সমগ্র প্রাচ্য সাহিত্যের চেয়ে মূল্যবান ।
তাঁর বাগ্মিতা ও যুক্তির দ্বারা লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক প্রভাবিত হন এবং এই প্রস্তাবকে সমর্থন করে । ফলে দীর্ঘ চল্লিশ বছরের বিরোধের অবসান ঘটে এবং ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার দরজা খুলে যায় ।
মূল্যায়ন :
সুতরাং পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ফলে ভারতীয়দের মধ্যে আধুনিক জ্ঞান লাভের প্রদীপ জ্বলে উঠেছিল ।
এবং এই শিক্ষা উচ্চবিত্ত সম্প্রদায় থেকে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার সূত্রে ভারতীয় সমাজে এক জাগরন দেখা দিয়েছিল ।
আরো পড়ুন – চুঁইয়ে পড়া নীতি বলতে কি বোঝো
FAQs On – প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব
যাঁরা প্রাচ্য বা প্রচলিত ভারতীয় শিক্ষা খাতে সরকারি অর্থ ব্যয় করার পক্ষপাতী ছিলেন তাঁরা
প্রাচ্যবাদী নামে পরিচিত। কয়েকজন প্রাচ্যবাদী হলেন—এইচ টি প্রিন্সেপ, কোল ব্রুক ও উইলসন প্রমুখ।আর যারা পাশ্চাত্য বা ইউরোপীয় ও ইংরেজি শিক্ষাখাতে সরকারি অর্থ ব্যয় করার পক্ষপাতী ছিলেন তাঁরা পাশ্চাত্যবাদী নামে পরিচিত। কয়েকজন পাশ্চাত্যবাদীরা হলেন— আলেজজান্ডার ডাফ, সান্ডর্স,কোলভিন প্রমুখ।
কয়েকজন প্রাচ্যবাদীর নাম হল ওয়ারেন হেস্টিংস, কোলব্রুক ,হেনরি প্রিন্সেস , উইলিয়াম জোন্স প্রমুখ ।
কয়েকজন পাশ্চাত্যবাদীর নাম হল টমাস ব্যাবিংটন মেকলে , আলেকজান্ডার ডাফ , সন্ডার্স, কোলভিল , চার্লস গ্রান্ট , ডেভিড হেয়ার প্রমূখ ।
১৮১৩ সালের সনদ আইনে ভারতীয়দের শিক্ষার জন্য বার্ষিক ১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়। এই টাকা কোন খাতে ব্যয় করা হবে তা নিয়ে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যবাদীদের মধ্যে এক বিতর্ক শুরু হয় যা ইতিহাসে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব নামে পরিচিত।
টমাস ব্যাবিংটন মেকলে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের দাবি জানিয়ে 1835 সালে 2 রা ফেব্রুয়ারি বড়োলাট লর্ড বেন্টিঙ্কের কাছে একটি প্রস্তাব দেন যা মেকলে মিনিট বা মেকলে প্রস্তাব নামে পরিচিত।
মেকলের বক্তব্য অনুসারে , সমাজের উচ্চবর্গের কিছু মানুষ পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হলে তাদের মাধ্যমে ধীরে ধীরে সমাজের নিম্ন স্তরে শিক্ষা ছড়িয়ে পড়বে। ফলে সমাজের নীচের স্তরের মানুষরাও শিক্ষিত হবে। শিক্ষাবিস্তারে এই তত্ত্বই ডাউনওয়ার্ড ফিলট্রেশন থিওরি বা ক্রমনিম্ন পরিশ্রুত নীতি নামে পরিচিত।
প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দ্বন্দ্বের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বরাদ্দ ১ লক্ষ টাকায় একটি সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হলে রাজা রামমোহন রায় বড়লাট লর্ড আর্মহার্স্টকে একটি পত্র লেখেন ।এতে সাস্কৃত শিক্ষার পরিবর্তে ইংরেজি শিক্ষা চালু করার কথা উল্লেখ করা হয় ।