পুনা চুক্তি সম্পর্কে একটি টীকা লেখাে – অনুন্নত হিন্দুদের বিশেষ আসন সংরক্ষণের প্রশ্নে ডঃ বি আর আম্বেদকর ও গান্ধীজির মধ্যে প্রবল বিতর্কের সূত্রপাত হয় । এর ফলশ্রুতি হল পুনা চুক্তি ।
এই পৃষ্ঠায়
পুনা চুক্তি সম্পর্কে একটি টীকা লেখাে :
আরো পড়ুন – বাংলায় নমঃশূদ্র আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ
ভূমিকা :
১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ১৬ আগস্ট ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রামসে ম্যাকডোনাল্ড যে সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা ঘােষণা করেন তার দ্বারা অনুন্নত বা দলিত হিন্দুদের ভিন্ন সম্প্রদায় বলে ঘােষণা করে আইনসভায় তাদের জন্য কতকগুলি বিশেষ আসন সংরক্ষণের প্রশ্নে ডঃ বি আর আম্বেদকর ও গান্ধীজির মধ্যে প্রবল বিতর্কের সূত্রপাত হয় । এর ফলশ্রুতি হল পুনা চুক্তি ।
পুনা চুক্তির প্রেক্ষাপট :
(ক) সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি :
হিন্দু-মুসলমান এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিদ্যমান ঐক্যকে ভেঙে দেওয়ার লক্ষ্যে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ১৬ আগস্ট ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রামসে ম্যাকডোনাল্ড যে সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা বা রোয়েদাদ ঘােষণা করেন তার দ্বারা অনুন্নত বা দলিত হিন্দুদের ভিন্ন সম্প্রদায় বলে ঘােষণা করে আইনসভায় তাদের জন্য কতকগুলি বিশেষ আসনে পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয় ।
(খ) গান্ধীজির অনশন :
রামসে ম্যাকডোনাল্ডের বিভাজন নীতিকে গান্ধীজি একেবারেই সমর্থন করেননি ।ভারতবাসীর ঐক্য ও সংহতিতে বিশ্বাসী গান্ধীজি ব্রিটিশের এই সাম্প্রদায়িক সিদ্ধান্তে মর্মাহত হন । সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতির প্রতিবাদ জানিয়ে গান্ধীজি পুনার জারবেদা জেলে বন্দি অবস্থায় আমরণ অনশন শুরু করেন (২০ সেপ্টেম্বর , ১৯৩২ খ্রি.) ।
পুনা চুক্তি স্বাক্ষর :
এই অনশনে গান্ধীজির জীবন সংশয়ের আশঙ্কা দেখা দিলে উদবিগ্ন সমস্ত শ্রেণির হিন্দু নেতা পুনায় নিজেদের মধ্যে আলােচনা করে একটি মীমাংসা সূত্রে উপনীত হন ।
এই মীমাংসা সূত্রে অনুন্নত হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষে ড. বি. আর. আম্বেদকর , শ্রীনিবাসন এবং বর্ণহিন্দুদের পক্ষে পণ্ডিত মদনমােহন মালব্য , বাবু রাজেন্দ্রপ্রসাদ প্রমুখ নেতা একটি বােঝাপড়ার মাধ্যমে পুনা চুক্তি ( ২৫ সেপ্টেম্বর , ১৯৩২ খ্রি. ) স্বাক্ষর করেন ।
পুনা চুক্তির শর্তাবলি :
১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে অনুন্নত সম্প্রদায়ের নেতা ড. বি. আর. আম্বেদকর ও গান্ধিজির মধ্যে ‘পুনা চুক্তি’ স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির শর্তগুলি হল নিম্নরূপ –
- (ক) হিন্দুদের মধ্যে বর্ণহিন্দু ও অনুন্নত হিন্দুদের যৌথভাবে ভােট দানের কথা ঘোষণা করা হয় অর্থাৎ পৃথক নির্বাচনের নীতি পরিত্যাগ করা হয় ।
- (খ) হরিজন সম্প্রদায় হিন্দুসমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ এ কথা স্বীকার করা হবে ।
- (গ) কেন্দ্রীয় আইনসভায় দলিতদের জন্য ১৮% আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় ।
গুরুত্ব :
ভারতের ইতিহাসে পুনা চুক্তির গুরুত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ –
- (ক) যৌথ নির্বাচন ব্যবস্থা : পুনা চুক্তি অনুসারে অনুন্নত সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা বাতিল করা হয় এবং হিন্দুদের যৌথ নির্বাচনের কথা ঘোষণা করা হয় ।
- (খ) আসন সংরক্ষণ : অনুন্নত হিন্দুদের জন্য আসন সংরক্ষিত হয়।
- (গ) গান্ধিজীর গুরুত্ব বৃদ্ধি : পুনা চুক্তি গান্ধিজির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করে এবং তার প্রচেষ্টায় হিন্দুসমাজে বিভেদনীতি অনুপ্রবেশের অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
মূল্যায়ন :
পরিশেষে বলা যায় যে , পুনা চুক্তি ব্রিটিশদের পরিকল্পিত বিভেদনীতিকে দুর্বল করতে এবং ভারতীয় রাজনীতিতে গান্ধীজির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে বহুলাংশে সহায়ক হয়েছিল ।
আরো পড়ুন – দলিত আন্দোলন বিষয়ে গান্ধী আম্বেদকর বিতর্ক
FAQs On – পুনা চুক্তি
১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ১৬ আগস্ট ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রামসে ম্যাকডোনাল্ড যে সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা ঘােষণা করেন তার দ্বারা অনুন্নত বা দলিত হিন্দুদের ভিন্ন সম্প্রদায় বলে ঘােষণা করে আইনসভায় তাদের জন্য কতকগুলি বিশেষ আসন সংরক্ষণের প্রশ্নে ডঃ বি আর আম্বেদকর ও গান্ধীজির মধ্যে প্রবল বিতর্কের সূত্রপাত হয় । এর ফলশ্রুতি হল পুনা চুক্তি ।
(ক) হিন্দুদের মধ্যে বর্ণহিন্দু ও অনুন্নত হিন্দুদের যৌথভাবে ভােট দানের কথা ঘোষণা করা হয় অর্থাৎ পৃথক নির্বাচনের নীতি পরিত্যাগ করা হয় ।
(খ) হরিজন সম্প্রদায় হিন্দুসমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ এ কথা স্বীকার করা হবে ।
(গ) কেন্দ্রীয় আইনসভায় দলিতদের জন্য ১৮% আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় ।
পুনা চুক্তি ২৫ সেপ্টেম্বর , ১৯৩২ খ্রি. স্বাক্ষরিত হয় ।
১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে অনুন্নত সম্প্রদায়ের নেতা ড. বি. আর. আম্বেদকর ও গান্ধিজির মধ্যে ‘পুনা চুক্তি’ স্বাক্ষরিত হয়।
সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারা নীতি ঘোষণা করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রামসে ম্যাকডোনাল্ড ।
সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ১৬ আগস্ট ঘোষিত হয় ।