মহারানীর ঘোষণাপত্রের ঐতিহাসিক তাৎপর্য কী

মহারানীর ঘোষণাপত্রের ঐতিহাসিক তাৎপর্য কী – আজকের পর্বে আমরা তোমাদের সাথে আলোচনা করলাম ইতিহাসের খুবই গুরুত্বপূর্ণ টপিক মহারানীর ঘোষণাপত্রের ঐতিহাসিক তাৎপর্য নিয়ে ।

মহারানীর ঘোষণাপত্রের ঐতিহাসিক তাৎপর্য কী :

মহারানীর ঘোষণাপত্রের ঐতিহাসিক তাৎপর্য কী

আরো পড়ুন – ইলবার্ট বিল বিতর্ক কি

মহারানীর ঘোষণাপত্রের ঐতিহাসিক তাৎপর্য :

ভূমিকা :

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের পর ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের মহারানী ভিক্টোরিয়া ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটান এবং নিজের হাতে তুলে নেন ভারতের শাসনভার। তার প্রতিনিধিরূপে ভারতের প্রথম ভাইসরয় লর্ড ক্যানিং আনুষ্ঠানিকভাবে যে ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেন তা ‘মহারানীর ঘোষণাপত্র’ নামে পরিচিত।

মহারানীর ঘোষণাপত্রের প্রেক্ষাপট :

১৮৫৭-এর বিদ্রোহ ঘটে যাওয়ার পর ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ ঔপনিবেশিক ভারতের শাসনভার আর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে রাখতে সাহস পেল না ।

ব্রিটিশ কর্তপক্ষ ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ভারত শাসন আইন পাস করায় । এই আইনের বলে ভারতের শাসনভার মহারানি ভিক্টোরিয়ার হাতে তুলে দেওয়া হয় ।

ইংরেজ কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয় যে এখন থেকে ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষ শাসন করবে ব্রিটিশ ক্যাবিনেট মন্ত্রী থেকে নির্বাচিত একজন সচিব ।

এই সচিবকে শাসনকাজে সাহায্য করার জন্য থাকবে ১৫ জন সদস্য বিশিষ্ট একটি কাউন্সিল । এভাবেই মহারানির প্রতিনিধিরূপে গভর্নর জেনারেল ‘ ভাইসরয় ’ উপাধি ধারণ করে ঔপনিবেশিক ভারতের প্রশাসন পরিচালনা করবে ।

ঘোষণাপত্র প্রকাশের সময়কাল ও স্থান :

মহারানীর ঘোষণাপত্রটি এলাহাবাদে ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ১লা নভেম্বর ভারতের প্রথম ভাইসরয় লর্ড ক্যানিং প্রকাশ করেন ।

মহারানীর ঘোষণাপত্রের মূল বক্তব্য বা তাৎপর্য :

মহারানীর ঘোষণাপত্রে বলা হয় যে –

(ক) লর্ড ডালহৌসি কর্তৃক প্রবর্তিত স্বত্ববিলোপ নীতি বাতিল করা হবে এবং দেশীয় রাজ্যের রাজারা দত্তক পুত্র গ্রহণ করতে পারবেন।

(খ) এখন থেকে ভারতের শাসনভার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত থেকে মহারানি নিজের হাতে নিলেন ।

(গ) ব্রিটিশ সরকার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে দেশীয় রাজ্যগুলির স্বাক্ষরিত চুক্তি ও সন্ধিগুলি মেনে চলবে ।

(ঘ) দেশীয় রাজাদের রাজ্যে মহারানির সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না ।

(ঙ) ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের সামাজিক ও ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবে না ।

(চ)  ব্রিটিশরা ভারতে আর সাম্রাজ্য বিস্তার করবে না ।

(ছ) জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল ভারতবাসী সরকারি চাকরিতে নিযুক্ত হতে পারবে।

(জ) বিদ্রোহে প্রত্যক্ষ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ছাড়া আর সবাইকে মুক্তি দেওয়া হবে ইত্যাদি ।

মূল্যায়ন :

মহারানির ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত প্রতিশ্রুতিগুলি বহুলাংশে ঘোষণাপত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এই কারণে মহারানির শাসনকালকে অনেকে ‘প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অধ্যায়’ বলে চিহ্নিত করেছেন।

এই সব প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের ফলে ভারতীয়দের মনে শাসক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ, হতাশা সঞ্চার হয়, যা ভারতীয় জাতীয়তাবাদী চেতনাকে নানাভাবে সঞ্জীবিত করে।

আরো পড়ুন – স্বত্ববিলোপ নীতি কাকে বলে আলোচনা করো

FAQs On – মহারানীর ঘোষণাপত্রের ঐতিহাসিক তাৎপর্য কী

মহারানীর ঘোষণা পত্র কবে জারি করা হয়?

মহারানীর ঘোষণা পত্র জারি করা হয় ১ লা নভেম্বর, ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে ।

মহারানীর ঘোষণা পত্র কে পাঠ করেন?

মহারানীর ঘোষণা পত্র পাঠ করেন লর্ড ক্যানিং।

মহারানীর ঘোষণা পত্র কোথায় পাঠ করা হয়?

মহারানীর ঘোষণা পত্র পাঠ করা হয় ভারতের এলাহাবাদে।

মহারানীর ঘোষণাপত্র কী ?

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের পর ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের মহারানী ভিক্টোরিয়া ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটান এবং নিজের হাতে তুলে নেন ভারতের শাসনভার। তার প্রতিনিধিরূপে ভারতের প্রথম ভাইসরয় লর্ড ক্যানিং আনুষ্ঠানিকভাবে যে ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেন তা ‘মহারানীর ঘোষণাপত্র’ নামে পরিচিত।

মন্তব্য করুন