রাঢ়ি উপভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক ও রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য – আজকের পর্বে আমরা তোমাদের সাথে আলোচনা করলাম রাঢ়ি উপভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক ও রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য ।
এই পৃষ্ঠায়
রাঢ়ি উপভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক ও রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য :
আরো পড়ুন – অর্ধতৎসম শব্দ কাকে বলে
রাঢ়ি উপভাষা প্রচলিত অঞ্চলসমূহ :
বাংলার বীরভূম, বর্ধমান, বাঁকুড়ার পূর্বাংশ, পূর্ব মেদিনীপুর, হুগলি, হাওড়া, কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা, মুর্শিদাবাদ ও নদিয়া জেলায় রাঢ়ি উপভাষার প্রচলন রয়েছে।
রাঢ়ি উপভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য :
(ক) ‘অ’-এর জায়গায় ‘ও’-উচ্চারণের প্রবণতা। সাধারণত ই, উ, ক্ষ, এবং য-ফলা যুক্ত ব্যঞ্জনের পূর্ববর্তী ‘অ’-কার-এর উচ্চারণের ক্ষেত্রেই এই প্রবণতা লক্ষ করা যায়। যেমন—অতি > ওতি; অতুল > ওতুল ।
(খ) অভিশ্রুতির ব্যবহার এই উপভাষার একটি লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য। যেমন – রাখিয়া > রাইখ্যা > রেখে; করিয়া > কইর্যা > করে; দেখিয়া > দেইখ্যা > দেখে।
(গ) ‘ল’ কোথাও-কোথাও ‘ন’-রূপে উচ্চারিত হয়। যেমন – লবণ > নুন; লুচি > নুচি; লেবু > নেবু।
(ঘ) নাসিক্যীভবন এবং স্বতােনাসিক্যীভবনের প্রবণতা দেখা যায়। যেমন – চন্দ্র > চাঁদ; কণ্টক > কাঁটা; বন্ধ> বাঁধ; বংশ > বাঁশ; পঞ্চ> পাঁচ।
(ঙ) শব্দের শেষে বা মাঝে অবস্থিত অঘােষ ধ্বনি (বর্গের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ণ) কখনাে কখনাে সঘােষ ধ্বনিতে, অর্থাৎ বর্গের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম ধ্বনিতে পরিণত হয়। যেমন শাক > শাগ; ছাত > ছাদ।
(চ) স্বরসংগতির প্রবণতা এই উপভাষায় লক্ষণীয়। যেমন – বিলাতি > বিলিতি; পূজা > পুজো।
(ছ) শব্দের শুরুতে শ্বাসাঘাত থাকলে শব্দের শেষে অবস্থিত মহাপ্রাণ ধ্বনি অল্পপ্রাণ ধ্বনিতে পরিণত হয়। যেমন – মধু > মদু; বাঘ > বাগ; বলছি > বলচি; মাঠ > মাট।
রাঢ়ি উপভাষার রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য :
(ক) কর্তৃকারক ছাড়া অন্য কারকে বহুবচনে ‘-দের’ বিভক্তি যোগ হয়। যেমন – কর্মকারক : আমাদের বই দাও। করণকারক : তোমাদের দ্বারা একাজ হবে না।
(খ) গৌণ কর্মে ‘কে’ বিভক্তি এবং মুখ্য কর্মে ‘শুন্য’ বিভক্তি ব্যবহৃত হয়।যেমন – মা শিশুকে (গৌণ কর্ম ) চাঁদ ( মুখ্য কর্ম ) দেখাচ্ছে।
(গ) অধিকরণ কারকে ‘এ’ ও ‘তে’ বিভক্তির ব্যবহার লক্ষ করা যায়। যেমন – ঘরে যাও; বাড়িতে থেকো।
(ঘ) সামান্য অতীত বােঝাতে প্রথম পুরুষের অকর্মক ক্রিয়াপদে ‘ল’ বিভক্তি এবং সকর্মক ক্রিয়াপদে ‘লে’ বিভক্তির প্রয়ােগ। যেমন – সে গেল; সে বইটি দিলে; সে কাজটি করলে।
(ঙ) সামান্য অতীত কালের উত্তম পুরুষে ‘লাম’, ‘লুম’, ‘লেম’, ‘নু’ বিভক্তি ব্যবহৃত হয়।
যেমন-আমি করলাম; আমি করলুম; আমি করলেম; আমি করনু।
(চ) মূল ধাতুর সঙ্গে আছ যােগে যৌগিক ক্রিয়াপদ গঠিত হয়ে থাকে।
যেমন করিতেছি > করছি; করিয়াছি > করেছি।
(ছ) বিভিন্ন কারকে বিভক্তির জায়গায় অনুসর্গেরব্যবহারও লক্ষ করা যায়। করণ কারকে সঙ্গে, ‘সাথে’, ‘দিয়ে’ এবং অপাদান কারকে ‘থেকে’, ‘হতে’ প্রভৃতি ব্যবহৃত হয়।
যেমন – আমার বােন এখন পেনসিল দিয়ে লেখে; এইমাত্র আমটি গাছ থেকে পড়ল।
আরো পড়ুন – বিভক্তি কাকে বলে ? বিভক্তি কত প্রকার ও কি কি উদাহরণ দাও ।
FAQs On – রাঢ়ি উপভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক ও রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য
বাংলার বীরভূম, বর্ধমান, বাঁকুড়ার পূর্বাংশ, পূর্ব মেদিনীপুর, হুগলি, হাওড়া, কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা, মুর্শিদাবাদ ও নদিয়া জেলায় রাঢ়ি উপভাষার প্রচলন রয়েছে।
(ক) ‘অ’-এর জায়গায় ‘ও’-উচ্চারণের প্রবণতা। সাধারণত ই, উ, ক্ষ, এবং য-ফলা যুক্ত ব্যঞ্জনের পূর্ববর্তী ‘অ’-কার-এর উচ্চারণের ক্ষেত্রেই এই প্রবণতা লক্ষ করা যায়। যেমন—অতি > ওতি; অতুল > ওতুল; মন > মোন ইত্যাদি।
(খ) অভিশ্রুতির ব্যবহার এই উপভাষার একটি লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য। যেমন – রাখিয়া > রাইখ্যা > রেখে; করিয়া > কইর্যা > করে; দেখিয়া > দেইখ্যা > দেখে।
(গ) ‘ল’ কোথাও-কোথাও ‘ন’-রূপে উচ্চারিত হয়। যেমন – লবণ > নুন; লুচি > নুচি; লেবু > নেবু।
(ঘ) নাসিক্যীভবন এবং স্বতােনাসিক্যীভবনের প্রবণতা দেখা যায়। যেমন – চন্দ্র > চাঁদ; কণ্টক > কাঁটা; বন্ধ> বাঁধ; বংশ > বাঁশ; পঞ্চ> পাঁচ।
(ঙ) শব্দের শেষে বা মাঝে অবস্থিত অঘােষ ধ্বনি (বর্গের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ণ) কখনাে কখনাে সঘােষ ধ্বনিতে, অর্থাৎ বর্গের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম ধ্বনিতে পরিণত হয়। যেমন শাক > শাগ; ছাত > ছাদ।
(চ) স্বরসংগতির প্রবণতা এই উপভাষায় লক্ষণীয়। যেমন – বিলাতি > বিলিতি; পূজা > পুজো।
(ছ) শব্দের শুরুতে শ্বাসাঘাত থাকলে শব্দের শেষে অবস্থিত মহাপ্রাণ ধ্বনি অল্পপ্রাণ ধ্বনিতে পরিণত হয়। যেমন – মধু > মদু; বাঘ > বাগ; বলছি > বলচি; মাঠ > মাট।