রশিদ আলী দিবস কেন পালিত হয়

রশিদ আলী দিবস কেন পালিত হয় – আজাদ হিন্দ বাহিনীর ক্যাপটেন রশিদ আলির ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হলে তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ১১ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় ব্যাপক ছাত্র ধর্মঘট এবং ১২ তারিখ সাধারণ ধর্মঘট ঘটে, যা ‘রশিদ আলি দিবস’ নামে পরিচিত।

রশিদ আলী দিবস কেন পালিত হয় :

রশিদ আলী দিবস কেন পালিত হয়

আরো পড়ুন – পত্তি শ্রীরামালু স্মরণীয় কেন

রশিদ আলী দিবস :

ভূমিকা :

রশিদ আলি ছিলেন আজাদ হিন্দ বাহিনীর ক্যাপ্টেন । ব্রিটিশ সরকারের সামরিক আদালতে তাঁকে ৭ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয় । তার প্রতিবাদে ১৯৪৬ খ্রি: ১১ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারী কলকাতায় গণ আন্দোলন শুরু হয় এবং ১২ ফেব্রুয়ারী দিনটি রশিদ আলি দিবস হিসেবে পালিত হয় ।

পটভূমি:

(ক) আজাদ হিন্দ বাহিনীর বিচার :

জাপানি সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় আজাদ হিন্দ বাহিনী ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের প্রথমদিকে ব্রহ্মদেশের সীমান্ত দিয়ে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান শীঘ্রই কোণঠাসা হয়ে পড়লে আজাদ হিন্দ বাহিনী জাপানের সহযোগিতা লাভে বঞ্চিত হয়। ফলে অস্ত্র ও রসদের অভাবে আজাদ হিন্দ বাহিনীর বহু সেনা বিপর্যস্ত হয়ে ব্রিটিশদের হাতে বন্দি হয়।

এবং ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে দিল্লির লালকেল্লায় বন্দি আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনাদের বিচার শুরু হলে এর প্রতিবাদে সারা ভারত উত্তাল হয়ে ওঠে।

(খ) রশিদ আলির সাজা :

বন্দি আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন ক্যাপটেন রশিদ আলি। বিচারে তাঁর ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ঘোষণা করা হলে ১৯৪৬ খ্রি: ১২ ফেব্রুয়ারী দিনটি রশিদ আলি দিবস হিসেবে পালিত হয় ।

বিক্ষোভ ও বিদ্রোহ :

আজাদ হিন্দ বাহিনীর ক্যাপটেন রশিদ আলিকে ব্রিটিশ সামরিক বিচার বিভাগ সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করলে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১১ থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি কলকাতা প্রবল প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে।

কমিউনিস্ট দলের ছাত্র সংগঠন , মুসলিম লীগের ছাত্র সংগঠন এবং জাতীয় কংগ্রেস একজোট হয়ে আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল ।

এই ধর্মঘটের সমর্থনে ছাত্র, শ্রমিক, হিন্দু-মুসলিম একত্রিত হয়ে অবরোধ গড়ে তোলে ও প্রতিবাদ মিছিল করে। ট্রাম, বাস ও রিকশা চালকরাও ছাত্রদের পাশে এসে দাঁড়ায়।

শ্রমিকদের যােগদান :

ছাত্রদের এই মিছিলে শ্রমজীবী মানুষরাও যােগ দেন। পুলিশ এই শান্তিপূর্ণ মিছিলের ওপর লাঠি ও গুলি চালালে বিক্ষোভকারীরা সরকারি সম্পত্তিতে অগ্নিসংযােগ করে।

রশিদ আলির মুক্তির দাবিতে কলকাতা ও শিল্পাঞ্চলগুলিতে শ্রমিক ধর্মঘট পালিত হয়। 

জনসভা : 

১২ ফেব্রুয়ারি ওয়েলিংটন স্কোয়ারে পালন করা হয় রশিদ আলি দিবস’। এইদিন জনসভায় একই মঞ্চে বক্তৃতা দেন গান্ধিবাদী নেতা সতীশচন্দ্র দাশগুপ্ত, কমিউনিস্ট নেতা সােমনাথ লাহিড়ী এবং মুসলিম নেতা হােসেন শহীদ সুরাবর্দি।

আন্দোলনের প্রসার :

ধর্মঘটী ছাত্রদের মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে কলকাতা ও নিকটবর্তী শিল্পাঞলগুলিতেও ধর্মঘট ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছোয় যে, কলকাতার ব্রিটিশ প্রশাসন কার্যত ভেঙে পড়ে।

কয়েকদিনের সংঘর্ষে কলকাতায় অন্তত ২০০ জনের মৃত্যু হয়।

গুরুত্ব :

(ক) আজাদ হিন্দ বাহিনীর ক্যাপ্টেন এটা ছিল আলির প্রতি অন্যায় বিচারের বিরুদ্ধে একটি সফল প্রতিবাদ।

(খ) এই আন্দোলনে মুসলিম জনতার পাশাপাশি হিন্দু জনগণ, ছাত্র, শ্রমিকদের যােগদানের ফলে সাম্প্রদায়িকতার গণ্ডি ছাড়িয়ে জাতীয় আন্দোলনে পরিণত হয়েছিল ।

(গ) এই আন্দোলনে ছিল মুসলিম লিগ, কমিউনিস্ট পার্টি ও ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন।

মূল্যায়ন :

আজাদ হিন্দ বাহিনীর সৈন্য রশিদ আলীর বিচারকে কেন্দ্র করে যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল , তা ভারতীয় জনমানসে প্রবল উৎসাহ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছিল ।

আরো পড়ুন – বাংলার উৎসব প্রবন্ধ রচনা

ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন – www.youtube.com/@DRMonojog

পিডিএফ পেতে ভিজিট করুন আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল – DR Monojog63

FAQs On – রশিদ আলী দিবস কেন পালিত হয়

রশিদ আলী কে ছিলেন ?

রশিদ আলী ছিলেন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ বাহিনীর ক্যাপ্টেন। দিল্লির লালকেল্লায় হওয়া বিচারে রশিদ আলীকে সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড হয়েছিল ।

রশিদ আলী দিবস কেন পালিত হয় ?

রশিদ আলি ছিলেন আজাদ হিন্দ বাহিনীর ক্যাপটেন। ব্রিটিশ সরকারের সামরিক আদালতে তাঁকে ৭ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
তার প্রতিবাদে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১১ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় গণ আন্দোলন হয় এবং ১২ ফেব্রুয়ারি ‘রশিদ আলি দিবস” হিসেবে পালিত হয়।

রাশিদ আলী দিবস কবে পালিত হয় ?

১২ই ফেব্রুয়ারী রশিদ আলী দিবস পালিত হয় ।

মন্তব্য করুন