রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি টীকা – আজকের পর্বে আমরা তোমাদের সাথে আলোচনা করলাম রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি নিয়ে ।
এই পৃষ্ঠায়
রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি টীকা
আরো পড়ুন – ইতালির ঐক্য আন্দোলন টীকা
ভূমিকা :
সুচতুর হিটলার উপলব্ধি করেছিলেন যে, পোল্যান্ড আক্রমণ করলে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স সহজে মেনে নেবে না । এই কারণে একদিকে তিনি যেমন যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করেন, তেমনি অন্যদিকে সাম্যবাদী রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি স্থাপনে উদ্যোগী হন। জার্মানি ও রাশিয়া পরস্পর বিরোধী হলেও প্রয়োজনের তাগিদে পরস্পর পরস্পরের কাছাকাছি এসেছিল। কথায় বলে, “Necessity is the mother of invention.”।
পটভূমি :
হিটলারের কমিউনিস্ট বিদ্বেষ বা স্ট্যালিনের নাৎসি বিদ্বেষ কারো অজানা নয়। তা সত্ত্বেও কয়েকটি কারণে দু’পক্ষ কাছাকাছি আসতে বাধ্য হয়। যেমন –
(ক) একের পর এক নীতি :
জার্মানি উপলব্ধি করেছিল যে, তার পক্ষে একই সঙ্গে পূর্ব ও পশ্চিম দুই সীমান্তে একদিকে রাশিয়া এবং অন্যদিকে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের সঙ্গে যুদ্ধ করা সম্ভব নয়। কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়ম এই ভুল করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-এ পরাজিত হন। এই কারণে তিনি ‘একের পর এক’ নীতি গ্রহণ করেন।
(খ) যুদ্ধের পরিধি সীমিতকরণ :
তিনি রাশিয়ার মিত্রতা থেকে পশ্চিমি রাষ্ট্রগুলিকে বিচ্ছিন্ন করে প্রথমে পশ্চিমি দেশগুলিকে পরাস্ত করার নীতি গ্রহণ করেন। এই কারণে জার্মানি রাশিয়ার সঙ্গে সন্ধি স্থাপন করে যুদ্ধের পরিধিকে সীমিত করতে চেয়েছিল।
(গ) রাশিয়ার স্বার্থ :
যুদ্ধ ও অর্থনৈতিক প্রয়োজনে রাশিয়ার কাঁচামাল জার্মানির প্রয়োজন ছিল। অপরপক্ষে, রাশিয়ারও কিছু স্বার্থ ছিল। যেমন –
- (১) প্রস্তাবের জবাব : ইঙ্গ-ফরাসি পক্ষের কমিউনিজম বিরোধিতা রাশিয়ার অবিদিত ছিল না। তা সত্ত্বেও রাশিয়া বহুবার তাদের কাছে জার্মান-বিরোধী একটি জোট গঠনের প্রস্তাব পাঠিয়েও ব্যর্থ হয়। সুতরাং রাশিয়ার পক্ষে এই উপেক্ষার জবাব দেওয়ার প্রয়োজন ছিল।
- (২) জার্মান আক্রমণ প্রতিহত : রাশিয়া জানত যে, তার উপর জার্মান আক্রমণ হবেই। তাই জার্মানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে রাশিয়া জার্মান আক্রমণকে প্রতিহত বা বিলম্বিত করতে চেয়েছিল। রাশিয়ার উদ্দেশ্য ছিল চুক্তির সুবাদে প্রাপ্ত সময়ে নিজ শক্তিকে সুসংহত করা।
- (৩) জাপানের শক্তিবৃদ্ধি : রাশিয়ার পূর্ব সীমান্তে রুশ বিরোধী জাপান তখন প্রবল শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল এবং যে কোনও সময় রাশিয়াকে আক্রমণ করতে পারত। এই অবস্থায় পূর্ব ও পশ্চিম দুই সীমান্তে রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ পরিচালনা করা যথেষ্ট অসুবিধাজনক ছিল।
চুক্তি স্বাক্ষর:
২৩শে আগস্ট ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিবেনট্রপ ও রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মলোটভ এর মধ্যে রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।। কেউ কাউকে আক্রমণ না করার সিদ্ধান্ত হয় এই চুক্তির মাধ্যমে।
রুশ জার্মান অনাক্রমণ চুক্তির শর্ত :
রুশ জার্মান অনাক্রমণ চুক্তির শর্তগুলি হল নিম্নরূপ –
- (১) আগামী দশ বছর জার্মানি ও রাশিয়া পরস্পরকে আক্রমণ করবে না।
- (২) শান্তিপূর্ণভাবে পারস্পরিক বিবাদ মিটিয়ে নেওয়া হবে এবং
- (৩) তৃতীয় কোনও শক্তি দ্বারা দু’জনের কেউ আক্রান্ত হলে, কেউ-ই সেই তৃতীয় পক্ষকে সাহায্য করবে না।
- (৪) এই চুক্তির একটি গোপন অংশ ছিল। তাতে স্থির হয় যে, দু’পক্ষ পোল্যান্ডকে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেবে।
টেলরের মন্তব্য :
বহু পাশ্চাত্য ঐতিহাসিক এই চুক্তিকে বিশ্বাসঘাতকতার নামান্তর বলে অভিহিত করেছেন, কিন্তু অধ্যাপক এ. জে. পি. টেলর বলেন যে, মিউনিখ চুক্তির কর্মকর্তাদের পক্ষে কোনও সমালোচনা শোভা পায় না।
রুশ জার্মান অনাক্রমণ চুক্তির গুরুত্ব :
- রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তির দ্বারা রাশিয়া বিশ্বযুদ্ধ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নেয়,
- পূর্ব সীমান্তে রাশিয়াকে নিরপেক্ষ রেখে হিটলার সর্বশক্তি দিয়ে পশ্চিম রণাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়েন,
- এই চুক্তিতে সোভিয়েত বাধা অপসারিত হওয়ায় হিটলার পূর্ব ইউরোপে তাঁর বিস্তার নীতি সফল করেন।
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এমনিতেই সংঘটিত হত, কিন্তু এই চুক্তি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করেছিল। এই চুক্তি না হলে যুদ্ধের ফলাফল অন্যরকম হতে পারত।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুভারম্ভ :
১৯৩৯ সালের ২৩শে আগস্ট রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষরের পর ১লা সেপ্টেম্বর হিটলার পোল্যান্ড আক্রমণ করেন। সদ্য স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া নিরপেক্ষ থাকে। পোল্যান্ডের রক্ষক ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স ৩রা সেপ্টেম্বর জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়।
চুক্তি ভঙ্গ :
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের প্রাথমিক পরাজয়ের পর হিটলার ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়া আক্রমণ করেন।
মূল্যায়ন :
জার্মানির সুচতুর একচ্ছত্র নেতা হিটলারের লক্ষ্য ছিল ইউরোপ-এ জার্মানির সম্প্রসারণ ঘটানো। তাই রাশিয়ার সঙ্গে অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষর করে রাশিয়াকে কিছু সময়ের জন্য স্থিতিশীল রেখে পরবর্তীতে তিনিই আবার রাশিয়া আক্রমণ করে বিস্বাসঘাতকতার পরিচয় দিয়েছিলেন ।
আরো পড়ুন – হরপ্পা সভ্যতার নগর পরিকল্পনার বিবরণ দাও
ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন – www.youtube.com/@DRMonojog
জিকে সংক্রান্ত ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন – www.youtube.com/@DRMonojogGK
পিডিএফ পেতে ভিজিট করুন আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল – DR Monojog63
আরো জানতে পড়ুন – বিসমার্কের রক্ত ও লৌহ নীতি কি
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ ও ফলাফল
- জোলভেরাইন কি
- ভারতীয় সংবিধানের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো
- উদারনীতিবাদের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো
- ঘেটো কী
FAQs On রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি টীকা
২৩ আগস্ট, ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়া ও জার্মানির মধ্যে রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ।