সভা সমিতির যুগের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো

সভা সমিতির যুগের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো – আজকের পর্বে আমরা তোমাদের সাথে আলোচনা করলাম সভা সমিতির যুগের বৈশিষ্ট্য নিয়ে । দশম শ্রেণীর ইতিহাসের এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ।

সভা সমিতির যুগের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো :

সভা সমিতির যুগের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো

আরো পড়ুন – প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব কী

সভা সমিতির যুগের বৈশিষ্ট্য :

ভূমিকা :

ভারতীয়দের মধ্যে সংঘবদ্ধতার চেতনা ও রাজনৈতিক জাগরন থেকে সমগ্র উনিশ শতক জুড়ে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে অসংখ্য ছোট ছোট সভা সমিতি গড়ে উঠেছিলো। এইজন্য ঐতিহাসিক অনীল শীল উনিশ শতককে “সভা সমিতির যুগ” বলে আখ্যাযিত করেছেন।

সভা সমিতির যুগের বৈশিষ্ট্য :

সভাসমিতির যুগের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যগুলি হল নিম্নরূপ –

(ক) উচ্চবৃত্তদের প্রাধান্য :

সাধারণত সমাজের শিক্ষিত উচ্চবিত্তরাই সভাসমিতির সদস্য হতেন এবং নেতৃত্ব দিতেন।সভা সমিতি গুলির সঙ্গে দেশের সাধারন অশিক্ষিত, দরিদ্র শ্রেনীর মানুষদের কোন আত্মিক যোগ ছিলো না।

(খ) ধীরগতির কার্যকলাপ :

প্রথমদিকের সংগঠনগুলির রাজনৈতিক কার্যকলাপের গতি ছিল অত্যন্ত ধীর। প্রকৃতপক্ষে ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে ‘ভারতসভা’ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সংগঠনগুলির রাজনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি পায়।

(গ) রাজনৈতিক চেতনা :

ব্রিটিশ সরকারের শাসন শোষণ ও বৈষম্যের ফলে ব্রিটিশের অন্ধ সমর্থকদের ব্রিটিশ শাসনের প্রতি মোহভঙ্গ হয় ।তারা গোষ্ঠীর স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে জনসাধারণের কথা ভাবতে শুরু করে।

(ঘ) দাবিদাওয়া পেশ :

ভারতীয়দের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এইসব সভাসমিতির মূল উদ্দেশ ছিল ভারতীয়দের স্বার্থ রক্ষা করা। এই উদ্দেশ্যে সভাসমিতিগুলি ব্রিটিশ সরকারের কাছে বিভিন্ন দাবিদাওয়া পেশ করত।

(ঙ) আঞ্চলিক সীমাবদ্ধতা :

সভা সমিতি গুলির সবকটিরই চরিত্র ছিলো আঞ্চলিক, এবং তাদের কর্মকান্ড আঞ্চলিক বা স্থানীয় স্তরেই আবদ্ধ ছিলো।

(চ) বিভিন্ন গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষা :

সভা সমিতি গুলি বিভিন্ন গোষ্ঠীর স্বার্থের বাহক ছিলো। অর্থাৎ নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা শ্রেনীর স্বার্থ রক্ষা করবার উদ্দেশ্যেই এগুলি গড়ে তোলা হয়েছিলো।

(ছ) হিন্দুসম্প্রদায়ের প্রাধান্য :

সভাসমিতি গুলির নেতৃত্বের বেশিরভাগই এসেছিলেন উচ্চবর্নের হিন্দু সম্প্রদায় থেকে অর্থাৎ সভাসমিতিগুলিতে মূলত হিন্দুসম্প্রদায়েরই প্রাধান্য ছিল শীর্ষে ।

(জ) অবহেলিত সাধারণ মানুষ :

সভা সমিতি গুলির সঙ্গে দেশের সাধারন অশিক্ষিত, দরিদ্র শ্রেনীর মানুষদের কোন আত্মিক যোগ ছিলো না ।ফলে তারা ছিল অবহেলিত ।

(ঝ) শহর কেন্দ্রিকতা :

মূলত কোলকাতা, বোম্বাই, মাদ্রাজ, পুনা প্রভৃতি বড়ো বড়ো শহরকে কেন্দ্র করেই এই সভা সমিতি গুলি গড়ে উঠেছিলো ।

সভাসমিতির যুগের গুরুত্ব :

ভারতে রাজনৈতিক চেতনার জাগরনে সভা সমিতি যুগের গুরুত্ব ছিলো অপরিসীম –

(ক) ব্রিটিশ শাসন ব্যবস্থায় ইংরেজি ভাষার প্রসারের সুযোগ নিয়ে প্রাদেশিক সভা সমিতি গুলি একে অন্যের মত ও আদর্শের আদান প্রদান করে সর্বভারতীয় রাজনৈতিক চেতনার প্রসার ঘটায়।

(খ) উনিশ শতকের সভা সমিতির অনুশীলনের মধ্য দিয়েই ভারতবর্ষ বিশ শতকের আধুনিক রাজনীতির অঙ্গনে প্রবেশ করে।

মূল্যায়ন :

প্রথম দিকে রাজনৈতিক সংগঠনগুলির গতি ছিল অত্যন্ত ধীর, প্রকৃতপক্ষে ভারত সভা প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সংগঠনগুলির রাজনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি পায়।

আরো পড়ুন – বাংলায় নবজাগরণের প্রকৃতি আলােচনা করাে

FAQs On – সভা সমিতির যুগের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো

সভাসমিতির যুগ বলতে কী বোঝ ?

ভারতীয়দের মধ্যে সংঘবদ্ধতার চেতনা ও রাজনৈতিক জাগরন থেকে সমগ্র উনিশ শতক জুড়ে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে অসংখ্য ছোট ছোট সভা সমিতি গড়ে উঠেছিলো। এইজন্য ঐতিহাসিক অনীল শীল উনিশ শতককে “সভা সমিতির যুগ” বলে আখ্যাযিত করেছেন।

সভা সমিতির যুগ কথাটি কে বলেছেন ?

সভা সমিতির যুগ কথাটি ড. অনিল শীল বলেছেন

সভা সমিতির যুগ কোন সময়কে বলা হয় ?

সভা সমিতির যুগ উনিশ শতককে সময়কে বলা হয়

উনিশ শতককে কেন সভাসমিতির যুগ বলে ?

পাশ্চাত্য শিক্ষার সংস্পর্শে এসে উনিশ শতকে বাংলা তথা গােটা ভারতবর্ষে জাতীয় চেতনার উন্মেষ ও বিকাশের ফলে বেশ কিছু রাজনৈতিক সভা ও সমিতি গড়ে ওঠে। তাই কেমব্রিজ ঐতিহাসিক ড. অনিল শীল উনিশ শতককে সভাসমিতির যুগ বলে অভিহিত করেছেন।

মন্তব্য করুন