সর্বশিক্ষা অভিযানের উদ্দেশ্য ও কর্মসূচি – আজকের পর্বে আমরা তোমাদের সাথে আলোচনা করলাম ২০২৪ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য শিক্ষাবিজ্ঞানের খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সর্বশিক্ষা অভিযানের উদ্দেশ্য ও কর্মসূচি নিয়ে ।
এই পৃষ্ঠায়
সর্বশিক্ষা অভিযানের উদ্দেশ্য ও কর্মসূচি :

আরো পড়ুন – মূক ও বধির শিশুদের শিক্ষাদান পদ্ধতি
সর্বশিক্ষা অভিযান কী :
1993 সালে উন্নিকৃষ্ণন মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ে Right to Education -কে সংবিধানের মৌলিক অধিকারের 21 নম্বর ধারায় Right to Life -এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়।
এতে বলা হয় যে, 14 বছর বয়স পর্যন্ত সকল শিশুর শিক্ষার অধিকারকে সুনিশ্চিত করতে হবে। এই নির্দেশ অনুযায়ী 1997 সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার কিছুটা উদ্যোগী হয়েছিল।
পরবর্তী সময়ে 1999 সালে প্রারম্ভিক শিক্ষা বিষয়ক জাতীয় কমিটি বিশেষভাবে উদ্যোগী হয় ও সংবিধান সংশোধন করা হয়। তারই ফলশ্রুতি হল এই সর্বশিক্ষা অভিযান।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যৌথ প্রচেষ্টায় 6 থেকে 14 বছর বয়স পর্যন্ত সকল শিশুকে বিদ্যালয়ে এনে তাদের শিক্ষাগত মান বৃদ্ধির জন্য বিদ্যালয়ে ধরে রেখে নির্দিষ্ট পাঠক্রম শেষ করার মহান প্রচেষ্টাই হল সর্বশিক্ষা অভিযান।
সর্বশিক্ষা অভিযানের উদ্দেশ্য :
সর্বশিক্ষা অভিযানের মূল লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে কয়েকটি উদ্দেশ্য স্থির হয়। এই উদ্দেশ্য গুলি হল নিম্নরূপ –
(ক) বিদ্যালয়ে ভর্তি সুনিশ্চিত করা :
2003 সালের মধ্যে ৬-১৪ বছর বয়সি সকল শিশুর জন্য বিকল্প অথবা পরিপূরক বিদ্যালয় এবং পর্ষদ স্বীকৃত বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করা।
(খ) প্রাথমিক শিক্ষা সুনিশ্চিত করা :
2006 সালের মধ্যে সকল শিশুর চার বছরের প্রাথমিক শিক্ষা অর্থাৎ প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা সুনিশ্চিত করা।
(গ) প্রারম্ভিক শিক্ষা সুনিশ্চিত করা :
2010 সালের মধ্যে সকল শিশু যাতে ৮ বছরের প্রাথমিক শিক্ষা অর্থাৎ প্রথম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা সম্পূর্ণ করতে পারে তা সুনিশ্চিত করা।
(ঘ) লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ :
2010 সালের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্য সহ নানাবিধ সামাজিক ব্যবধান দূরীভূত করা।
(ঙ) বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ :
শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ ঘটানো ।
(চ) শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন :
সর্বশিক্ষা অভিযানের মাধ্যমে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা।
(ছ) কুসংস্কার মুক্ত সমাজ গঠন :
সর্বশিক্ষা অভিযানের মাধ্যমে কুসংস্কারমুক্ত সমাজ গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয় ।
(জ) জীবন কেন্দ্রিক শিক্ষা :
সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রয়োজন জীবনকেন্দ্রিক শিক্ষার । সর্বশিক্ষা অভিযানের মাধ্যমে সেই লক্ষ্য পূরণ সম্ভবপর হয় ।
(ঝ) কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানো :
6 থেকে 14 বছর বয়স পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীকে একটি প্রত্যাশিত ও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
(ঞ) স্কুলছুট প্রতিরোধ :
2010 সালের মধ্যে 6 থেকে 14 বছর বয়স পর্যন্ত বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া সকল শিক্ষার্থীকে স্কুলছুট হওয়া থেকে প্রতিরোধ প্রদান করা ।
সর্বশিক্ষা অভিযানের কর্মসূচি :
সর্বশিক্ষা অভিযানে যেসকল সাধারণ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়, তা হল নিম্নরূপ –
(ক) পরিকাঠামোগত উন্নয়ন :
প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিকাঠামোগত মান উন্নয়ন করতে হবে।
(খ) গুচ্ছ সম্পদ তৈরি :
পরিকল্পনা রূপায়ণের জন্য স্কুল,গ্রাম ও ওয়ার্ড শিক্ষা কমিটির সঙ্গে যুক্ত করে গুচ্ছ সম্পদ তৈরি করা হয়েছে।
(গ) সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ :
সর্বশিক্ষা অভিযান কর্মসূচি বাস্তবায়িত করার জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
(ঘ) পরিপূরক শিক্ষাব্যবস্থা :
প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি বিকল্প বিদ্যালয় বা পরিপূরক বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে।
(ঙ) সেতু পাঠক্রম চালু :
সর্বশিক্ষা অভিযান কে সফল করে তুলতে ব্রিজ কোর্স বা সেতু পাঠক্রম চালু করা হয়েছে।
(চ) চক্র সম্পদ গঠন :
পরিকাঠামো ও পরিষেবার উন্নতির জন্য চক্র সম্পদ গঠন করা।
(ছ) ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ :
ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ নীতির ভিত্তিতে ‘গ্রাম্য শিক্ষা কমিটি’ বা Village Education Committee গঠন ও পরিকল্পনা রূপায়ণের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে।
(জ) শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ :
নতুন নতুন শিক্ষণ পদ্ধতির সঙ্গে পরিচয় করানোর জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে শিক্ষণ পদ্ধতির গুনগত মান বাড়বে।
(ঝ) স্কুলছুট প্রতিরোধ :
পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের ধরে রাখতে প্রয়োজনীয় বিজ্ঞানসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে তারা বিদ্যালয় ছুট না হয়।
(ঞ) অনুদানের ব্যবস্থা গ্রহণ :
যারা প্রকৃত ভাবে দুস্থ এমন অভিভাবকদের জন্য অনুদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
(ট) মূল্যায়নের ফল :
বিদ্যালয় মূল্যায়নের ফল নিয়মিতভাবে অভিভাবকদের দৃষ্টিগোচর করত হবে।
(ঠ) তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলা :
গ্রাম সংসদ ও ওয়ার্ড স্তরে শিশুদের শিক্ষা সংক্রান্ত তথ্যভাণ্ডার গড়ে তুলতে হবে।
(ড) পরিকল্পনা গ্রহণ :
সরকারি, আধা-সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলিকে একযোগে নিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
(ঢ) মেয়েদের শিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ :
সর্বশিক্ষা অভিযানের কর্মসূচির মধ্যে মেয়েদের শিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয় । জেলার জন্য বরাদ্দ করা অর্থের একটি বিশাল অঙ্ক এই কর্মসূচির উন্নয়ন খাতে ব্যয় করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় । মেয়েদের জন্য পৃথক বিদ্যালয় ও হোস্টেলের মধ্যে নারী শিক্ষার উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।
(ণ) জনসাধারণের অংশগ্রহণ :
সর্বশিক্ষা অভিযানের কর্মসূচিতে সমাজের সাধারণ মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় ।
আরো পড়ুন – উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবিজ্ঞান সাজেশন ২০২৪