শিখনে মনোযোগের ভূমিকা আলোচনা করো

শিখনে মনোযোগের ভূমিকা আলোচনা করো – আজকের পর্বে আমরা তোমাদের সাথে আলোচনা করলাম শিক্ষাবিজ্ঞানের খুবই গুরুত্বপূর্ণ টপিক শিখনে মনোযোগের ভূমিকা নিয়ে ।

শিখনে মনোযোগের ভূমিকা আলোচনা করো :

শিখনে মনোযোগের ভূমিকা আলোচনা করো

আরো পড়ুন – মূক ও বধির শিশুদের শিক্ষাদান পদ্ধতি

শিখনে মনোযোগের ভূমিকা :

মনোযোগ কাকে বলে :

ইংরেজি ‘Attention’ শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ হলো মনোযোগ। এটি হল একটি শিখনের ব্যক্তিগত সহায়ক উপাদান।

মনোযোগ কথার অর্থ হল মনকে একান্ত ভাবে যুক্ত করা। অর্থাৎ যে মানসিক প্রক্রিয়া অনেকগুলো বিষয়ের মধ্যে থেকে কোন একটি বিষয়ের মধ্যে আমাদের চেতনাকে কেন্দ্রীভূত করে তাকে মনোযোগ বলে।

শিখনে মনোযোগের ভূমিকা বা গুরুত্ব :

মনোযোগ শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষাকালীন মানসিক সক্রিয়তা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে । মনোযোগের দ্বারাই আত্ম প্রচেষ্টামূলক শিখন সম্ভব হয় ।

মনোযোগ শিক্ষার্থীকে কোনো বিষয়ে স্পষ্টতা এবং বোধগম্যতায় সাহায্য করে । তাই শিক্ষায় মনোযোগের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । শিক্ষা ক্ষেত্রে মনোযোগের ভূমিকাগুলি হল নিম্নরূপ –

(১) ব্যক্তিবিশেষে মনোযোগের বৈষম্য :

মনোযোগ একান্তভাব দিতে না পারলে সাফল্য পাওয়া যায় না। তবে ব্যক্তি বিশেষে মনোযোগের বৈষম্য লক্ষ্য করা যায়। তাই বৈষম্যের নীতি অনুযায়ী মনোযোগের বিষয়বস্তু নির্বাচন করতে হয়।

(২) বিষয়বস্তুর স্পষ্টতাদান :

মনোযোগ শিক্ষার্থীকে শিখনের বিষয়বস্তুর স্পষ্টতা দান করে নিখুঁত জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করে।

(৩) জ্ঞানমূলক বিকাশসাধন :

মনোযোগ জ্ঞানমূলক বিকাশকে ত্বরান্বিত করে । অর্থাৎ , কোনো বিষয় সম্পর্কে স্পষ্ট জ্ঞান তার জ্ঞানের বিকাশে অনেক বেশি সাহায্য করে । 

(৪) সৃজন ক্ষমতার বিকাশ :

মনোযোগ শিক্ষার্থীকে সৃজনধর্মী করে তোলে । মনোযোগ দেওয়ার ফলে শিক্ষার্থী নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করে ।

আর এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীর সৃজনধর্মী ক্ষমতার বিকাশ ঘটে । 

(৫) পারদর্শিতা বৃদ্ধি :

শিক্ষার্থী যে বিষয় মনোযোগ সহকারে আয়ত্ব করে, সেই বিষয় সম্পর্কে তার সুস্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়। ফলে তার পারদর্শিতার মাত্রা বৃদ্ধি পায় ।

(৬) দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি :

যে বিষয়ে যত বেশি মনোযোগ দেওয়া যায় সেই বিষয় তত বেশি মনে থাকে। তাই শিক্ষার্থীরা যদি পাঠ গ্রহণের সময় সক্রিয়ভাবে মনোযোগ দেয় তার স্মৃতি দীর্ঘস্থায়ী হয়।

(৭) আগ্রহ বৃদ্ধি :

মনোযোগ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আগ্রহী করে তোলে । আবার আগ্রহ শিক্ষার্থীদের মনোযোগী করে তোলে । 

(৮) বিচার ক্ষমতা বৃদ্ধি :

মনোযোগ শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিচার ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে । মনোযোগের ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিষয়জ্ঞান পরিষ্কার হয় বলে যুক্তি দেওয়ার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় , যা বিচার ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে । 

(৯) সেন্টিমেন্ট সৃষ্টি :

মনোযোগ ব্যক্তির মধ্যে বস্তুকেন্দ্রিক সেন্টিমেন্ট গড়ে তোলে । শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেন্টিমেন্ট নিয়ন্ত্রিত স্বতঃস্ফূর্ত মনোযোগের সৃষ্টি করে ।

যা শিক্ষার্থীর জীবনব্যাপী শিখনে সহায়তা করে । 

(১০) জ্ঞানেন্দ্রিয়র সক্রিয়তা বৃদ্ধি :

মনোযোগের ফলে শিখনে শিক্ষার্থীর জ্ঞানেন্দ্রিয় সক্রিয় হয়ে ওঠে, ফলে জ্ঞানলাভ সহজ হয়।

(১১) সহজাত প্রবৃত্তির বিকাশ :

মনোযোগ ব্যক্তির সহজাত প্রবৃত্তির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । সহজাত প্রবৃত্তির বিকাশের ফলে ব্যক্তির বিভিন্ন দিকের বিকাশ ঘটে । 

মূল্যায়ন :

সুতরাং বলা যায় মনোযোগ শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক সক্রিয়তা বৃদ্ধিতে যথেষ্ট সহায়তা করে। তাই শিক্ষাদানের সময় শিক্ষকগণ বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষে সেই সব কৌশল প্রয়োগ করার প্রতি সচেষ্ট হবেন যা শিক্ষার্থীকে শিক্ষাগ্রহণের প্রতি মনোযোগী করে তুলবে।

আরো পড়ুন – সর্বশিক্ষা অভিযানের উদ্দেশ্য ও কর্মসূচি

মন্তব্য করুন