শিক্ষাক্ষেত্রে সক্রিয় অনুবর্তনের ভূমিকা – আজকের পর্বে আমরা তোমাদের সাথে আলোচনা করলাম শিক্ষাক্ষেত্রে সক্রিয় অনুবর্তনের ভূমিকা এই প্রশ্নটা নিয়ে ।
আরো পড়ুন – অপারেশন ব্ল্যাকবোর্ড কর্মসূচি গ্রহণের কারণ
এই পৃষ্ঠায়
সক্রিয় বা অপারেন্ট অনুবর্তন :
যে অনুবর্তন প্রক্রিয়ায় প্রতিক্রিয়ার নির্দিষ্ট কোনাে উদ্দীপক নেই, যে-কোনো উদ্দীপকের সঙ্গে প্রতিক্রিয়ার সংযােগ ঘটানাে যায় এবং যেখানে প্রাণী সক্রিয়তা অপরিহার্য, তাকে সক্রিয় অনুবর্তন বলে।
সক্রিয় বা অপারেন্ট অনুবর্তনের বৈশিষ্ট্য :
অপারেন্ট’ হল ফলােৎপাদনের জন্য প্রতিক্রিয়া যার নির্দিষ্ট কোনাে উদ্দীপক নেই। এইরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্য প্রাণীর সক্রিয় প্রচেষ্টার প্রয়ােজন। সক্রিয় অনুবর্তনের বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলি হল নিম্নরূপ –
[1] প্রাথমিক প্রস্তুতি:
সক্রিয় অনুবর্তনের জন্য প্রাণীর প্রাথমিক প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। এই প্রস্তুতি প্রাণীকে সক্রিয় অনুবর্তনের উপযােগী করে তােলে।
[2] স্বতঃস্ফূর্ত আচরণ:
এই অনুবর্তনে প্রাণী যে নতুন আচরণটি করে তা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে আসে। এই আচরণ প্রাণীর চাহিদার পরিতৃপ্তির কারণে হয় বলেই তা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আসে।
[3] প্রাণীর সক্রিয়তা:
প্রাণীর সক্রিয়তা এই অনুবর্তনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
[4] শক্তিদায়ী উদ্দীপক:
সক্রিয় অনুবর্তনে শক্তিদায়ী উদ্দীপকের প্রয়ােজন হয়৷ স্কিনার আচরণ পরিবর্তনের কৌশল হিসেবে শক্তিদায়ী উদ্দীপকের ব্যবহার করেছেন। শক্তিদায়ী উদ্দীপক নির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনার হারকে বৃদ্ধি করে। শক্তিদায়ী উদ্দীপক দুধরনের হয়— i. ধনাত্মক এবং ii. ঋণাত্মক। ধনাত্মক শক্তিদায়ী উদ্দীপক আচরণকে শক্তিশালী করে, যেমন—খাদ্য হচ্ছে ক্ষুধার্ত ব্যক্তির কাছে ধনাত্মক শক্তিদায়ক উদ্দীপক। ঋণাত্মক শক্তিদায়ী উদ্দীপক প্রাণীর কাছে অবাঞ্ছিত, যেমন– দৈহিক শাস্তি, অপযশ, নিন্দা ইত্যাদি।
[5] অবলুপ্তি:
প্রাচীন অনুবর্তনের মতাে সক্রিয় অনুবর্তনেরও অবলুপ্তি ঘটে যদি সঠিক প্রতিক্রিয়াটি করা সত্ত্বেও শক্তিদায়ী উদ্দীপক না আসে।
[6] স্বতঃস্ফূর্ত পুনরাবির্ভাব:
সক্রিয় অনুবর্তনের অবলুপ্তি ঘটলে প্রাণীকে যদি কিছু সময়ের জন্য দূরে রেখে পুনরায় একই পরিস্থিতিতে নিয়ে আসা হয়। এবং দু-একবার শক্তিশালী উদ্দীপক দেওয়া হয়, তাহলে সক্রিয় অনুবর্তন পুনরায় দেখা যাবে।
[7] স্থায়িত্ব:
সক্রিয় অনুবর্তনের অর্জিত আচরণের স্থায়িত্ব নির্ভর করে শক্তিদায়ী উদ্দীপকের উপস্থিতির ওপর। অনুবর্তিত আচরণ বজায় রাখার জন্য কখন এবং কীভাবে শক্তিদায়ী উদ্দীপক ব্যবহার করতে হবে তা স্কিনার উল্লেখ করেছেন। একে ‘সিডিউল’ বলে।
শিক্ষাক্ষেত্রে সক্রিয় বা অপারেন্ট অনুবর্তনের ভূমিকা:
মনোবিদ বি.এফ স্কিনারের সক্রিয় বা অপারেন্ট অনুবর্তন এর মাধ্যমে শিশুর শিখন প্রক্রিয়াকে অনেক বেশি বিজ্ঞানসম্মত ভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তাই শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে শিক্ষাদানের কাজে এই অনুবর্তন কৌশল প্রয়োগ করে থাকেন।
(১) প্রস্তুতি:
শিশুর যে কোন শিখন এর জন্য প্রস্তুতির প্রয়োজন। শিক্ষক শিক্ষার্থীর সঠিক আচরণের জন্য শ্রেণিকক্ষে প্রয়োজনীয় এমন পরিবেশ তৈরি করবেন যাতে শিক্ষার্থী বহুমুখী প্রতিক্রিয়া সহজে করতে পারে।
(২) শাস্তি দানের নীতি পরিত্যাগ:
শিক্ষক শিক্ষার্থীকে শিক্ষাদানের সময় শাস্তিদানের নীতি পরিত্যাগ করে, উপযুক্ত শক্তিদায়ক উদ্দীপক উপস্থাপনের ব্যবস্থা করবেন।
(৩) শক্তিদায়ক উদ্দীপকের উপস্থাপন:
শিক্ষার্থীর শিক্ষাকালীন আচরণ পরিবর্তনের প্রক্রিয়া কে কার্যকরী করে তুলতে হলে নতুন আচরণ সম্পাদনের সঙ্গে সঙ্গে তাকে শক্তিদায়ক উদ্দীপক দিতে হবে । অর্থাৎ পুরস্কার দিতে হবে ।
(৪) সহজ থেকে জটিল:
শিখনের উদ্দেশ্য গুলি কে সব সময় সহজ থেকে জটিলের মান হিসাবে সাজাতে হবে ।
(৫) বিশ্লেষণ:
শিখনের উদ্দেশ্য গুলি সব সময় নিখুত ভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে । যার দ্বারা শিক্ষার্থীর বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিশদ বিবরণ পাওয়া যায়।
(৬) ধারাবাহিকতা:
পুনঃসংযোগক গুলিকে ধারাবাহিক ভাবে ব্যবহার করতে হবে, যার সাহায্যে শিক্ষার্থী তার অসঙ্গত প্রতিক্রিয়া গুলি দূর করতে পারে।
সুতরাং উপরের আলোচনা থেকে বলা যায় সক্রিয় বা অপারেন্ট অনুবর্তন এর সাহায্যে মানুষের বেশিরভাগ আচরণে প্রকৃতিকে ব্যাখ্যা করা যায়। তাই শিক্ষা ক্ষেত্রে এই অনুবর্তন এর প্রয়োগ খুব ব্যাপক।
আরো পড়ুন – শিখনের প্রভাব বিস্তারকারী উপাদান গুলি কি কি
ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন – www.youtube.com/@DRMonojog
জিকে সংক্রান্ত ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন – www.youtube.com/@DRMonojogGK
পিডিএফ পেতে ভিজিট করুন আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল – DR Monojog63
আরো পড়ুন –