স্বত্ববিলোপ নীতি কাকে বলে আলোচনা করো – আজকের পর্বে আমরা তোমাদের সাথে বড়লাট লর্ড ডালহৌসি প্রবর্তিত স্বত্ববিলোপ নীতি নিয়ে আলোচনা করলাম ।
এই পৃষ্ঠায়
স্বত্ববিলোপ নীতি কাকে বলে আলোচনা করো :
আরো পড়ুন – জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট ও গুরুত্ব
স্বত্ববিলোপ নীতি কী :
ভূমিকা :
ব্রিটিশ সরকার ভারতে সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য যেসব নীতি অবলম্বন করে সেগুলির মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযােগ্য হল স্বত্ববিলােপ নীতি।
স্বত্ববিলোপ নীতির প্রবর্তক ও প্রবর্তনকাল :
বড়োলাট লর্ড ডালহৌসি ১৮৪৮ খ্রি: স্বত্ববিলোপ নীতির প্রবর্তন করেন ।
স্বত্ববিলোপ নীতির মূল বক্তব্য :
লর্ড ডালহৌসির উল্লেখযােগ্য সাম্রাজ্য বিস্তার নীতি ছিল স্বত্ববিলােপ নীতি । তিনি এক ঘােষণায় বলেন যে , কোনাে ব্রিটিশ আশ্রিত দেশীয় রাজ্যের রাজা অপুত্রক অবস্থায় মারা গেলে সেই রাজ্যটি সরাসরি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হবে । এই নীতি স্বত্ববিলােপ নীতি নামে পরিচিত ।
স্বত্ববিলোপ নীতির প্রয়োগ পদ্ধতি :
লর্ড ডালহৌসি স্বত্ববিলোপ নীতি প্রয়ােগ করার আগে দেশীয় রাজ্যগুলিকে তিনভাগে ভাগ করেন –
- (ক) স্বাধীন দেশীয় রাজ্য
- (খ) কোম্পানির সৃষ্ট রাজ্য
- (গ) কোম্পানির আশ্রিত বা কোম্পানির অধীনস্থ রাজ্য
স্বত্ববিলোপ নীতির প্রয়োগ :
স্বত্ববিলোপ নীতি কঠোরভাবে প্রয়োগ করে ডালহৌসী প্রথমেই ব্রিটিশ প্রভাবাধীন সাতারা রাজ্যটি দখল করেন ১৮৪৮ খ্রিঃ,
এরপর ১৮৫৩ সালে নাগপুরের রাজা অপুত্রক অবস্থায় মারা গেলে তাঁর রাজ্যটি গ্রাস করা হয়, এক্ষেত্রে ডালহৌসীর যুক্তি ছিল যে, নাগপুর রাজ্যটি নাকি ইংরেজরাই সৃষ্টি করেছিল।
ঝাঁসির রাজা গঙ্গাধর রাও-এর প্রয়াণ হলে ডালহৌসী তাঁর দত্তক পুত্রকে মেনে নিতে রাজি হলেন না এবং ঝাঁসির রানির মতামতকে উপেক্ষা করেই ঝাঁসি রাজ্যটি দখল করা হল।
এছাড়া ভগৎপুর, করৌলী, সম্বলপুর, উদয়পুর, বাগৎ প্রভৃতি রাজ্যগুলি একই কারণে গ্রাস করা হয়, যদিও উদয়পুর কোম্পানির সৃষ্ট দেশীয় রাজ্য ছিল না।
স্বত্ববিলোপ নীতির শর্ত :
স্বত্ববিলোপ নীতির শর্তগুলি হল নিম্নরূপ –
(ক) দত্তক পুত্র গ্রহণে বাধা :
কোম্পানির দ্বারা সৃষ্ট দেশীয় রাজ্যের রাজা অপুত্রক অবস্থায় মারা গেলে সেই রাজ্য কোনো দত্তক নিতে পারবেন না এবং সেই রাজ্যটি রাজার মৃত্যুর পর সরাসরি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হবে।
(খ) দত্তক পুত্র গ্রহণে কোম্পানির অনুমতি গ্রহণ :
ইংরেজ আশ্রিত রাজ্যগুলিকে দত্তক নেওয়ার আগে কোম্পানির অনুমতি নিতে হবে নাহলে ওই রাজ্যটি সরাসরি কোম্পানির শাসনাধীনে চলে যাবে।
(গ) স্বাধীন দেশীয় রাজ্যগুলির উত্তরাধিকার :
স্বাধীন দেশীয় রাজ্যগুলির উত্তরাধিকার সম্পর্কে ডালহৌসি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। স্বাধীন দেশীয় রাজ্যের রাজারা নিজেদের ইচ্ছামতো দত্তক পুত্র গ্রহণ করতে পারতেন।
মূল্যায়ন :
স্বত্ববিলোপ নীতি প্রয়োগের দ্বারা লর্ড ডালহৌসি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের চরিত্র স্পষ্ট করে তোলেন।এই নীতির প্রয়োগের ফলে ভারতীয় দেশীয় রাজাদের মনে ব্রিটিশ শাসনের প্রতি তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। যা তাদেরকে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহে যোগ দিতে উৎসাহিত করে।
আরো পড়ুন – মহাবিদ্রোহের প্রকৃতি ও চরিত্র আলােচনা করাে
FAQs On – স্বত্ববিলোপ নীতি কাকে বলে আলোচনা করো
স্বত্ববিলোপ নীতি প্রবর্তন করেন লর্ড ডালহৌসি ।
স্বত্ববিলোপ নীতি প্রয়োগ করে ডালহৌসি সাঁতারা, জয়েৎপুর, সম্বলপুর, উদয়পুর, ঝাঁসি, নাগপুর, তান্দোর, বাঘাট প্রভৃতি রাজ্য দখল করেছিল ।
লর্ড ডালহৌসির উল্লেখযােগ্য সাম্রাজ্য বিস্তার নীতি ছিল স্বত্ববিলােপ নীতি । তিনি এক ঘােষণায় বলেন যে , কোনাে ব্রিটিশ আশ্রিত দেশীয় রাজ্যের রাজা অপুত্রক অবস্থায় মারা গেলে সেই রাজ্যটি সরাসরি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হবে । এই নীতি স্বত্ববিলােপ নীতি নামে পরিচিত ।
স্বত্ববিলোপ নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে ডালহৌসি সর্বপ্রথম সাঁতারা রাজ্য দখল করেন ।