জাতীয় স্বার্থ রক্ষার উপায়গুলি আলোচনা করো

জাতীয় স্বার্থ রক্ষার উপায়গুলি আলোচনা করো – আজকের পর্বে আমরা তোমাদের সাথে আলোচনা করলাম জাতীয় স্বার্থ বলতে কী বোঝো?জাতীয় স্বার্থ রক্ষার উপায়গুলি আলোচনা করো এই প্রশ্নটি নিয়ে ।

জাতীয় স্বার্থ রক্ষার উপায়গুলি আলোচনা করো

আরো পড়ুন – ভারতীয় পার্লামেন্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলী

জাতীয় স্বার্থ বলতে কী বোঝো :

জাতীয় স্বার্থ বলতে জাতির সেইসব ন্যূনতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহকে বোঝায়, যেগুলি পূরণের জন্য রাষ্ট্রসমূহ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এইসব ন্যূনতম লক্ষ্যের মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তা, জাতীয় উন্নয়ন ও শান্তিপূর্ণ বিশ্ব ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। 

জাতীয় স্বার্থ রক্ষার বিভিন্ন উপায়সমূহ :

জাতীয় স্বার্থ রক্ষার কতকগুলি বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- 

(ক) কূটনীতি :

জাতীয় স্বার্থ রক্ষার অন্যতম প্রধান উপায় হলো কূটনীতি। প্রতিটি রাষ্ট্রের কূটনীতিবিদরা নিজেদের সরকারের বিদেশনীতিকে অন্য রাষ্ট্রের কাছে বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য আলাপ-আলোচনা করে।

কূটনীতিবিদদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য পামার ও পারকিন্স  তাদেরকে সরকারের চক্ষু ও কর্ণ বলে চিহ্নিত করেছেন। 

নিজেদের দেশে জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য কূটনীতিবিদরা মূলত তিনটি পদ্ধতি অনুসরন করে থাকেন। যথা- বিশ্বাস উৎপাদন,আপসরফা এবং বলপ্রয়োগের ভীতিপ্রদর্শন ।

(খ) পররাষ্ট্রনীতি :

ফ্র্যাঙ্কেলের মতে, জাতীয় স্বার্থের ধারণা পররাষ্ট্রনীতির একটি প্রধান বিবেচ্য বিষয়। পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে একটি মৌলিক নির্ধারক হল জাতীয় স্বার্থ।

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কোনো রাষ্ট্র নিঃস্বার্থভাবে অপর কোনো রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে না। মূলতঃ জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতেই রাষ্ট্রগুলি আন্তর্জাতিক সমস্যার সমাধান সম্পর্কে তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। 

(গ) প্রচারকার্য সম্পাদন :

প্রচারকার্য জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণের আর একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম । কোনো দেশ তার পররাষ্ট্র নীতির সমর্থনে সমগ্র বিশ্বদরবারে প্রচারকার্য চালায়।

যাতে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ওই প্রচারের সমর্থনে ব্যাপক সাড়া পড়ে । এই প্রচারের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাহায্য নিয়ে থাকে ।

যেমন ঠাঁন্ডা লড়াইয়ের সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন বিশ্ব দরবারে তার রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচার করে বিশ্ব জনমত গঠনের জন্য রেডিও , টেলিভিশন ও সংবাদপত্রের ব্যাপক প্রয়োগ ঘটিয়েছিল ।

(ঘ) বল প্রয়োগ :

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শক্তিধর ও অতিবৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্রগুলি অনেক সময় নিজেদের জাতীয় স্বার্থপূরণে অন্যান্য রাষ্ট্রের ওপর বলপ্রয়োগ বা বলপ্রয়োগের ভীতি প্রদর্শন করে থাকে।

দৃষ্টান্তস্বরূপ অতীতে নিকারাগুয়া, অ্যাঙ্গোলা, গ্রেনাডার ওপর এবং সম্প্রতি ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে ইরাকের ওপর মার্কিনি আগ্রাসনের কথা বলা যায়। 

আবার 1956 সালে কাশ্মীর দখলের জন্য পাকিস্তান ভারত আক্রমণ করেছিল। এখানে পাকিস্তান তার জাতীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ভারতের ওপর বল প্রয়োগ করেছিল।

(ঙ) জোট গঠন :

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থরক্ষার অন্যতম একটি উপায় বা পদ্ধতি হল জোট গঠন। মূলতঃ জাতীয় স্বার্থ পূরণের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রগুলি আন্তর্জাতিক স্তরে জোট গঠন করে থাকে।

দৃষ্টান্তস্বরূপ , দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমি পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলির জোট NATO এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলিকে নিয়ে গঠিত Warsaw জোটের কথা উল্লেখ করা যায়। 

(চ) অর্থনৈতিক সাহায্য ও ঋণ প্রদান :

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা ও প্রভাব বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায় উন্নত দেশগুলি, দরিদ্র ও বিকাশশীল দেশগুলোর কাছে অর্থনৈতিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় ।

এই রূপ সহযোগিতা বা ঋণ প্রদানের অন্যতম উদ্দেশ্য হল ঋণ গ্রহণকারী রাষ্ট্রগুলির অকুন্ঠ সমর্থন আদায় করা ।

যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিকারাগুয়া, অ্যাঙ্গোলা, আফগানিস্তান প্রভৃতি রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের কথা উল্লেখ করা যায় ।

মূল্যায়ন :

পরিশেষে বলা যায় , জাতীয় স্বার্থকে অবহেলা করে কোনো দেশই তার পররাষ্ট্র বা বিদেশনীতি প্রয়োগ করতে পারে না ।

প্রতিটি দেশের ক্ষমতা বা শক্তির উপাদানগুলি ভিন্ন আর এই ভিন্নতার উপর নির্ভর করে জাতীয় স্বার্থের চাহিদা নির্ধারিত হয় । তবে বিদেশনীতির মৌলিক উপাদন হিসেবে জাতীয় স্বার্থের বিকল্প নেই ।

আরো পড়ুন – ভারতের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলি

ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন – www.youtube.com/@DRMonojog

জিকে সংক্রান্ত ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন – www.youtube.com/@DRMonojogGK

পিডিএফ পেতে ভিজিট করুন আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল – @drmonojog63

আরো জানতে পড়ুন –

FAQs On জাতীয় স্বার্থ কাকে বলে জাতীয় স্বার্থ রক্ষার উপায় গুলি আলোচনা করো

জাতীয় স্বার্থ কাকে বলে ?

জাতীয় স্বার্থ বলতে জাতির সেইসব ন্যূনতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহকে বোঝায়, যেগুলি পূরণের জন্য রাষ্ট্রসমূহ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এইসব ন্যূনতম লক্ষ্যের মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তা, জাতীয় উন্নয়ন ও শান্তিপূর্ণ বিশ্ব ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা বিশেষ উল্লেখযোগ্য।


মন্তব্য করুন