সার্ক কি আলোচনা করো – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী কালে ১৯৮৫ খ্রি: দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক, সামরিক ও বৈদেশিক নীতি নির্ধারণের জন্য পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সংগঠন হল সার্ক ।
এই পৃষ্ঠায়
সার্ক কি আলোচনা করো :
সার্ক কি :
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তরকালে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক, সামরিক ও বৈদেশিক নীতি নির্ধারণের জন্য পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সংগঠন হল সার্ক ।
সম্পূর্ণ নাম :
South Asian Association for Regional Cooperation
প্রতিষ্ঠাকাল :
ঢাকার রাষ্ট্রপ্রধান জিয়াউর রহমানের সক্রিয় উদ্যোগ , উৎসাহ ও সভাপতিত্বে ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে আনুষ্ঠানিকভাবে সার্কের প্রতিষ্ঠা হয়।
সদর দপ্তর :
SAARC – এর সদর দপ্তর হল নেপালের কাঠমান্ডু।
সদস্য রাষ্ট্র :
১) ভারত, ২) বাংলাদেশ, ৩) নেপাল, ৪) ভুটান, ৫) পাকিস্তান, ৬) মালদ্বীপ, ৭)শ্রীলঙ্কা, ৮)আফগানিস্তান
সার্কের উদ্দেশ্য :
1985 খ্রিস্টাব্দে বিভিন্ন উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলি SAARC প্রতিষ্ঠা করে। এইসব লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য গুলি হল নিম্নরূপ –
(১) আত্মনির্ভরতা : সার্কের প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের স্বাধীনতা রক্ষা এবং যৌথ আত্মনির্ভরতার শক্তি বৃদ্ধি করা।
(২) জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি : অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সাহায্য প্রদানের মাধ্যমে জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা।
(৩) সহযোগিতা : সদস্য রাষ্ট্র গুলির মধ্যে আর্থিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সহযোগিতা প্রদান করে এবং সদস্য রাষ্ট্রের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
(৪) উন্নয়ন : এই সংগঠনের সদস্য রাষ্ট্র গুলির অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক দিক থেকে সাহায্য প্রদানের মাধ্যমে উন্নয়নের প্রসার ঘটানো।
(৫) শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান : সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখা ।
(৬) নিরাপত্তা বিধান : দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ করা।
(৭) অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা : সদস্য রাষ্ট্রগুলির ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষা ও অন্যান্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা।
(৮) বোঝাপড়া : সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস , বোঝাপড়া ও সংবেদনশীলতার পরিবেশ তৈরি করা
(৯) অর্থনৈতিক ও সামাজিক লেনদেন : সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে আর্থিক ও সামাজিক সাহায্য প্রদান করা।
(১০) ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার : ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে আমদানিকৃত দ্রব্য নিজেদের মধ্যে রপ্তানি করে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটানো।
(১১) সাংস্কৃতিক লেনদেন : সদস্য রাষ্ট্র গুলির মধ্যে সাংস্কৃতিক লেনদেন করা।
(১২) উৎসাহ প্রদান : অর্থনৈতিক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যায় সক্রিয় সহযোগিতার বিষয়ে সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে উৎসাহিত করা ।
আরো পড়ুন – প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণগুলি আলোচনা করো
সার্কের সমস্যা :
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তরকালে ১৯৮৫ খ্রি: দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক, সামরিক ও বৈদেশিক নীতি নির্ধারণের জন্য পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে সার্ক গড়ে উঠলেও সার্কের সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে যে সমস্ত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে সেগুলি হল নিম্নরূপ –
(১) সহযোগিতার অভাব : সার্কের সদস্য রাষ্ট্রগুলি পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে গড়ে উঠলেও প্রথমদিকে এদের মধ্যে পূর্ণ সহযোগিতার মনোভাব দেখা যায়নি ।
যে যে রাষ্ট্রের মধ্যে শত্রুতার সম্পর্ক ছিল ,তাদের সেই শত্রুতার জের সার্কের কার্যকলাপের মধ্যেও পড়েছিল ।
(২) দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনমন : ভারতের সঙ্গে শ্রীলঙ্কা , নেপাল , বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনমন সার্কের সাফল্যের পথে বাধা সৃষ্টি করেছিল ।
(৩) নতুন প্রযুক্তির অভাব : দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলি মূলত কৃষিনির্ভর ।কিন্তু কৃষি এবং শিল্পক্ষেত্রে প্রযুক্তির অভাব সার্ককে স্বনির্ভর হতে বাধা দিয়েছিল ।
(৪) সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ : ভারতীয় উপমহাদেশে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ সার্কের কাজে যথেষ্ট বিঘ্ন ঘটিয়েছে। তামিল জঙ্গি হানায় শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতির মৃত্যু, ভারতে বাবরি মসজিদ ধ্বংস, ভারতে পাক ISI-এর গুপ্তচরবৃত্তি ও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ, মুম্বাই হামলা, বাংলাদেশে ভারত বিরােধী মৌলবাদ প্রভৃতি ঘটনা সার্কের বিভিন্ন শীর্ষ সম্মেলনে যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে।
(৫) মতবিরোধ : সার্কের কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। এই মতভেদ সার্কের সমস্যা যথেষ্ট বৃদ্ধি করছে।
(৬) শিশুশ্রম ও নারীদের সম্মান রক্ষার বিষয়ে সমস্যা : সার্কভুক্ত দেশগুলির অন্যতম প্রধান সমস্যা হল শিশুশ্রম । বিশেষত আমাদের দেশ ভারতবর্ষেই শিশুশ্রম হল একটি বিরাট সমস্যা।
দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিটি দেশেই শ্রমিকের পারিশ্রমিক অত্যন্ত কম হওয়ায় এখানে শ্রমিক শোষণের মাত্রা সর্বাধিক । বিদেশে পতিতাবৃত্তির জন্য পাচার হওয়া মেয়েদের মধ্যে এশীয়দের সংখ্যাই সর্বাধিক।
শিশুশ্রম ও নারীদের সম্মান রক্ষার ক্ষেত্রে সার্ক তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করতে সক্ষম হয়নি ।
(৭) সহযােগিতার অভাব : সার্কভুক্ত সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে অনেক সময় সহযােগিতার অভাবের ফলে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভবপর না হওয়ায় দেশগুলির উন্নয়ন ও অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে।
(৮) দারিদ্র্যতা : সার্কের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলির অন্যতম বড়ো সমস্যা হল দারিদ্র্যতা । সার্কের অধিকাংশ রাষ্ট্রের জনগণই দরিদ্র তাই সার্ক প্রথম থেকেই এই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করে এসেছে ।
সার্ক-এর সার্বিক সাফল্য :
সার্কের বহুবিধ সমস্যা থাকা সত্ত্বেও দক্ষিণ এশিয়ার সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সার্কের সাফল্য একেবারে উপেক্ষা করা যায় না –
(১) SAPTA স্বাক্ষর : সমস্ত প্রাথমিক দুর্ভোগ কাটিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে সার্ক তার নিজস্বতার প্রথম প্রমাণ দিয়েছে ১৯৯৫ খ্রি: SAPTA অর্থাৎ South Asian Preferential Trade Agreement স্বাক্ষরের মাধ্যমে ।
এই চুক্তির বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য দিকগুলি হল – রপ্তানি শুল্ক তুলে দেওয়া , অবাধ বাণিজ্য নীতি , অভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা ইত্যাদি ।
(২) সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ : সার্কভুক্ত দেশগুলি পারস্পরিক সহযােগিতার মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদ প্রতিরােধেও যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছে।
(৩) দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়ন : সার্কভুক্ত দেশগুলির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়ন বহুলাংশে বৃদ্ধি পাওয়ায় সার্কভুক্ত দেশগুলি যেকোনো সমস্যার দ্রুত সমাধান করতে সচেষ্ট হয়েছে ।
ভারত ও পাক যুদ্ধের সাময়িক ইতি , দুই দেশের পরমাণু বোমার পরীক্ষানিরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয় সমাধান , শ্রীলঙ্কার তামিল সমস্যার সমাধান প্রভৃতি ঘটনাবলি এই দেশগুলির সম্পর্কের উন্নতি ঘটিয়েছে।
(৪) খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি : খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সহযােগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
(৫) সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ভূমিকা : খেলাধুলো ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সার্কভুক্ত দেশগুলি বিশেষ সাফল্য অর্জন করেছে । বিশেষত সার্ক গেমস যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বর্তমানে ।
(৬) আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গুরুত্ব বৃদ্ধি : বর্তমানে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সার্কের গুরুত্ব ও সম্মান উভয়ই যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সার্কের মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
FAQs On – সার্ক কি আলোচনা করো
সার্ক এর প্রধান রূপকার স্বাধীন বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান |
সার্ক এর সদর দপ্তর নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে অবস্থিত ।
সার্ক এর পুরো নাম South Asian Association for Regional Cooperation
সার্ক এর সদস্য দেশ ৮ টি ।
সার্ক ভুক্ত দেশ গুলোর নাম হল – বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটান এবং আফগানিস্তান ।
সার্ক প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকায় ।
সার্ক প্রতিষ্ঠিত হয় 8ই ডিসেম্বর 1985 সালে ।
সার্কের প্রথম মহাসচিব আবুল আহসান ।
সার্কের বর্তমান মহাসচিব শ্রীলঙ্কার ইসালা রুয়ান ভিরাকন ।
সার্কের সর্বশেষ সদস্য দেশ হল আফগানিস্তান ।
সার্কের অষ্টম সদস্য দেশ হল আফগানিস্তান ।