এমস টেলিগ্রাম কি – প্রাশিয়ার রাজা প্রথম উইলিয়াম এমস নামক স্থান থেকে তার প্রধানমন্ত্রী বিসমার্ককে টেলিগ্রামের মাধ্যমে একটি খবর পাঠান । এই খবরের বিষয় ছিল ফরাসি দূত বেনেদিতির সঙ্গে রাজা প্রথম উইলিয়মের আলোচনার সারসংক্ষেপ। এটি ইতিহাসে ‘এমস টেলিগ্রাম’ নামে খ্যাত।
এই পৃষ্ঠায়
এমস টেলিগ্রাম কি :
আরো পড়ুন – ফরাসি বিপ্লবের কারণ
এমস টেলিগ্রামের পটভূমি :
ফরাসি দূত বেনেদিতির সঙ্গে রাজা প্রথম উইলিয়মের আলোচনার সারসংক্ষেপকে কেন্দ্র করে এমস টেলিগ্রামের পটভূমি রচিত হয়েছিল ।ঘটনাটি হল –
(ক) স্পেনের সিংহাসন নিয়ে বিরোধ :
ফ্রান্সের পূর্ব সীমান্তে ধারাবাহিকভাবে জার্মানির উত্থান ঘটে। এরফলে ফ্রান্সের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায়।
এই পরিস্থিতিতে প্রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বিসমার্ক ফ্রান্সের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত স্পেনের সিংহাসনে প্রাশিয়ার রাজপুত্র লিওপোল্ডকে বসানোর ব্যবস্থা করে।
ফলে ফ্রান্স পূর্বে জার্মানি ও পশ্চিমে স্পেনের দ্বারা বেষ্টিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলে ফ্রান্সের জনগণ উত্তেজিত হয়ে ওঠে।
(খ) ফ্রান্সের বিরোধিতা :
স্পেনের সিংহাসনে প্রাশিয়ার রাজপুত্র লিওপোল্ডের মনোনয়নে ফ্রান্স বিরোধিতা করে। কারণ ফ্রান্সের পূর্বদিকে জার্মানি এবং পশ্চিমদিকে স্পেনে জার্মানির হোহেনজোলার্ন বংশের রাজা লিওপোল্ড সিংহাসনে বসলে ফ্রান্সের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
ফলে ফ্রান্স বিরোধিতা করায় লিওপোল্ড স্পেনের এই প্রস্তাবে রাজি হননি।
(গ) প্রাশিয়ার প্রতিশ্রুতি লাভে ফ্রান্সের প্রচেষ্টা :
ফ্রান্সের বিরোধিতায় লিওপোল্ড স্পেনের সিংহাসনে বসতে নাকোচ করলেও ফ্রান্সের সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়ন এতে সন্তুষ্ট হননি।
তিনি প্রাশিয়ার রাজা প্রথম উইলিয়মের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি চেয়েছিলেন যে, জার্মানির হোহেনজোলার্ন বংশের কেউ কখনও স্পেনের সিংহাসনে বসবে না ।
(ঘ) কাউন্ট বেনেদিতির প্রস্তাব :
ফরাসি সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়নের নির্দেশ অনুযায়ী ফরাসি দূত কাউন্ট বেনেদিতি প্রাশিয়ার রাজা প্রথম উইলিয়মের প্রতিশ্রুতি আদায় করতে প্রাশিয়ার রাজা প্রথম উইলিয়ামের কাছে যান ।
তখন প্রাশিয়ার রাজা প্রথম উইলিয়াম এমস নামক স্থানে বিশ্রামরত ছিলেন। বেনেদিতি এমস-এ গিয়ে রাজার সঙ্গে দেখা করেন প্রতিশ্রুতির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন।
তখন রাজা অত্যন্ত বিনীতভাবে তাঁকে জানিয়ে দেন যে, এ ধরনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়।
(ঙ) এমস টেলিগ্রাম ও পরিবর্তিত বিষয় :
প্রাশিয়ার রাজা আলোচনার বিষয়টি টেলিগ্রামের মাধ্যমে তার প্রধানমন্ত্রী বিসমার্ককে জানিয়ে দেন।
কূটনীতিবিদ বিসমার্ক টেলিগ্রামের কিছু শব্দ বাদ দিয়ে টেলিগ্রামটি এমনভাবে সাজান যাতে মনে হয় প্রাশিয়ার রাজা ফরাসি দূত বেনেদিতিকে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছেন ।
পরের দিন বিসমার্ক এই টেলিগ্রামটি নর্থ জার্মান গেজেট ও অন্যান্য সংবাদপত্রে প্রকাশ করে দেন ।
ফরাসিরা এটিকে ‘ জাতীয় অপমান ’ বলে মনে করে প্রতিশােধ গ্রহণে ব্যগ্র হয়ে ওঠে এবং পরের দিনই ১৫ জুলাই ফ্রান্স প্রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণা করে ।
ফ্রান্সের এই যুদ্ধ ঘােষণার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বিসমার্ক বলেছিলেন – লাল কাপড় দেখে ফরাসি ষাঁড় ক্ষেপে গেছে ।
এমস টেলিগ্রামের ফলাফল :
(ক) প্রাশিয়ার বিরুদ্ধে ফ্রান্সের যুদ্ধ ঘোষণা :
এই ঘটনার কথা জানতে পেরে ফরাসি জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ফরাসি সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়ন এই অপমানের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য প্রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন ।
(খ) ফ্রান্স প্রাশিয়ার যুদ্ধ :
বিসমার্কের ফাঁদে পা দিয়ে অপ্রস্তুত ফ্রান্স হঠাৎ যুদ্ধ ঘোষণা করায় প্রাশিয়ার কাছে চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয়। পরবর্তীতে ফ্রাঙ্কফোর্ট সন্ধির মাধ্যমে ফ্রান্স প্রাশিয়ার যুদ্ধের অবসান ঘটে।
মূল্যায়ন :
বিসমার্কের চাতুরীতে এমস টেলিগ্রাম যেভাবে সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল তাতে ফরাসিবাসী স্বাভাবিকভাবেই তাদের রাষ্ট্রদূতের অবমাননা হয়েছে ধরে নিয়েছিল ।
আসলে কিন্তু এ ধরনের কোনাে ঘটনা ঘটেনি । প্রাশিয়ার রাজা প্রথম উইলিয়ম ফরাসি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে অত্যন্ত সৌজন্যমূলক ব্যবহার করেছিলেন ।
সংবাদ পত্রেই এমনভাবে সাজিয়ে বিসমার্ক সমস্ত ঘটনাটি পরিবেশন করেছিলেন , যার ফলে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধেছিল ।
তাই ডেভিড টমসন বলেছিলেন – আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে এর আগে কখনােই সংবাদমাধ্যম এত শক্তিশালী নাটকীয় ভূমিকা পালন করেনি
আরো পড়ুন – কোড নেপোলিয়ন কি
FAQs On – এমস টেলিগ্রাম কি
প্রাশিয়ার রাজা প্রথম উইলিয়াম এমস নামক স্থান থেকে তার প্রধানমন্ত্রী বিসমার্ককে টেলিগ্রামের মাধ্যমে একটি খবর পাঠান । এই খবরের বিষয় ছিল ফরাসি দূত বেনেদিতির সঙ্গে রাজা প্রথম উইলিয়মের আলোচনার সারসংক্ষেপ। এটি ইতিহাসে ‘এমস টেলিগ্রাম’ নামে খ্যাত।
বিসমার্ক ছিলেন প্রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ও কূটনীতিবিদ । পরবর্তীতে প্রথম উইলিয়াম কর্তৃক ১৮৭১ সালে জার্মানির রাজকীয় চ্যান্সেলর পদে নিযুক্ত হন।